‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচনায় আসা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে সাত দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার দুদকের পক্ষ থেকে এই আবেদন করা হয়। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেনের (গালিব) আদালত আগামী ২৭ জানুয়ারি তার উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য করেন।
এর আগে, গত ৬ জানুয়ারি মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দায়ের করে দুদক। প্রতিটি মামলাতেই আসামি করা হয়েছে মতিউর রহমানকে।
একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী লায়লা কানিজ ও মতিউর রহমানকে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে অসৎ উদ্দেশে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯০ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অসঙ্গিপূর্ণ ১৩ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার ১০৬ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন ও মালিকানা ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন লায়লা কানিজ। এসব সম্পদ অর্জনে সহায়তা করেছেন মতিউর রহমান।
আরেকটি মামলায় আসামি করা হয়েছে মতিউরের কন্যা ফারজানা রহমান ইস্পিতা, মতিউর রহমান এবং স্ত্রী লায়লা কানিজকে। এই মামলার এজাহারে দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়াও অন্য একটি মামলায় মতিউরের ছেলে ছাগলকাণ্ডের আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব এবং মতিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলার এজাহারে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যপ্রমাণসহ ৪২ কোটি ২২ লাখ ৫৮ হাজার ২৭১ টাকার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ১৪ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। ডিবির সদস্যরা বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মতিউর অস্ত্রের কথা স্বীকার করেন। তিনিই তার শয়নকক্ষের আলমারি থেকে বিদেশি পিস্তল বের করে দেন।
ওইদিনই অস্ত্র আইনের মামলায় তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে ১৮ জানুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছে।
গত কোরবানির ঈদে ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে মুশফিকুর রহমান নামে এক তরুণের ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনার ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে জানা যায়, ওই তরুণ তৎকালীন এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে।
এরপর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, বিলাসবহুল জীবনযাপন আলোচনায় আসে। মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলোবাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি থাকা নিয়েও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।
এই ‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচিত এই রাজস্ব কর্মকর্তার ‘অবৈধ সম্পদের’ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদকও। সেজন্য দুদকের উপ পরিচালক আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে।