Beta
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

রেমিটেন্স : ৭ মাসেই এল ১৬ বিলিয়ন ডলার

ডলার
ডলার
[publishpress_authors_box]

দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাত মাসেই (জুলাই-জানুয়ারি) প্রায় ১৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৫৯৬ কোটি) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছে ২২৮ কোটি ২ লাখ (২.২৮ বিলিয়ন) ডলার। বাকি পাঁচ মাস ফেব্রুয়ারি-জুন এই হারে এলে অর্থবছর শেষে প্রবাসী আয়ের অঙ্ক ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যা হবে অতীতের যেকোনো অর্থবছরের চেয়ে বেশি।

এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে ২০২০-২১ অর্থবছরে।

বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার রেমিটেন্স প্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সপ্তম মাস এবং নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

এই অঙ্ক গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। মাসের প্রথম দিকে ধীর গতি দেখা দিলেও শেষের দিকে বাড়ায় রেমিটেন্সের অঙ্ক ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়েছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ (২.১১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

এ নিয়ে টানা ছয় মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে আসল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমনটা দেখা যায়নি।

তবে আগের মাসের চেয়ে এই সূচক কমেছে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল একক মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স।

এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ (২.৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে রেমিটেন্স এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার।

চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার।

অর্থবছরের সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) হিসাবে এক হাজার ৫৯৬ কোটি ৭১ লাখ (১৫.৯৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ বিলিয়ন ডলার বা ২৩ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ১ হাজার ২৯৬ কোটি ৪২ লাখ (১২.৯৬ বিলিয়ন) ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল দেশে। পুরো অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল অর্থবছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

রেমিটেন্সের উল্লম্ফনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “দেশের অর্থনীতিতে ক্রান্তিকাল চলছে। বিনিয়োগ নেই; কর্মসংস্থান নেই। সর্বত্র অস্থিরতা চলছে। অনিশ্চয়তা আছে। দিন যতো যাচ্ছে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। এর মধ্যেও রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বগতিই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে।

“মোটা দাগে বলা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সই আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো। এতেই প্রমাণিত হয় যে, এখন হুন্ডি কমেছে; টাকা পাচার হচ্ছে না।”

জাহিদ হোসেন মনে করেন, এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সেজন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পদক্ষেপ নিতে হবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে রেমিটেন্স কমেছিল বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

ওই সময় আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিটেন্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে মাত্র এক দিন।

শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে বিদায়ী সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল।

ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে কোনও প্রবাসী আয় আসেনি।

আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের পর রেমিটেন্স প্রবাহে আরও ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূনের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের; রেমিটেন্স প্রবাহেও গতি ফেরে।

দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি মুদ্রার সংকট চলছে।

কোভিড মহামারির সময়ে আমদানি তলানিতে নামার একপর্যায়ে দেশে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ব বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি খরচ অনেক বেড়ে যায়। একই সঙ্গে প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকে।

সংকট কাটাতে ও রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসী আয়সহ বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত কয়েক মাসে এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে এই সূচকে।

রিজার্ভ ১৯.৯৭ বিলিয়ন ডলার

রেমিটেন্স বাড়লেও অর্থনীতির আলোচিত সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না। ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে অবস্থান করছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক।

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।

এক সপ্তাহ আগে ২২ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।

তার এক সপ্তাহ আগে ১৫ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। ৮ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

৯ জানুয়ারি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। এখনও ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচেই অবস্থান করছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত