চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এ সময়ে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা; আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। এ হিসাবে ঘটতি রয়েছে ৫৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে ছিল এনবিআর।
গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আদায় হয়েছিল প্রায় এক লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব। এ হিসাবে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় এক হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস করে গেলেও অভ্যুত্থানে এক মাস পরই তাদের পতন ঘটায় বাজেট বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। ঘোষিত বাজেটে গোটা অর্থ বছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। তবে তা আদায় করতে না পারায় সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা ২২ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছিল।
রাজস্ব কর্মকর্তারা মনে করছেন, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা–বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হওয়ায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক নিত্যপণ্যে করছাড়ও রাজস্ব আহরণ পিছিয়ে পড়ার আরেকটি কারণ।
গত কয়েক মাস ভোজ্যতেল, চিনি, আলু, ডিম, পেঁয়াজ, চাল, খেজুর ও কীটনাশকের ওপর আমদানি শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি, ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর এবং আগাম করের ক্ষেত্রে নানা স্তরে ছাড় দেওয়া হয়েছে। মেট্রোরেল সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি, হজযাত্রীদের খরচ কমাতে টিকেটে আরোপযোগ্য আবাগারি শুদ্ধ সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
রাজস্ব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে আমদানি, ভ্যাট ও আয়কর— এই তিন খাতের মধ্যে কোনোটিতেই ছয় মাসের লক্ষ্য পূরণ হয়নি। সবচেয়ে বেশি ৩১ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে আয়কর খাতে।
প্রথম ছয় মাসে আয়কর খাত থেকে ৭৬ হাজার ৬৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। ভ্যাট থেকে ৭৬ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫৫ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৮ শতাংশ কম।
একই সময়ে আমদানি খাত থেকে আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ। খাতটি থেকে ৬১ হাজার ৯৫২ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৯ হাজার ৮০ কোটি টাকা।
রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতির মুখে সম্প্রতি শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার। তবে আন্দোলন ও সমালোচনার মুখে রেস্তোরাঁ, ওষুধসহ কয়েকট পণ্য ও সেবার ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
