যে খুন ও ধর্ষণ পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি সারা ভারতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, চিকিৎসকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছিল, সেই আরজি কর মামলার রায় হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের শিলাইদহের জজ আদালত শনিবার দেওয়া রায়ে মামলার একমাত্র আসামি সঞ্জয় রায়কে দোষি সাব্যস্ত করে বলে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে।
ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে দোষ সাব্যস্ত ৩৩ বছর বয়সী সঞ্জয়ের সাজা কী হবে, তা আগামী সোমবার জানাবে আদালত।
সরকারি চিকিৎসালয় আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত বছরের ৮ আগস্ট ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৩১ বছর বয়সী এক নারী চিকিৎসককে। তিনি সেদিন রাতের পালায় হাসপাতালে দায়িত্বে ছিলেন।
সেই ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গে ফুঁসে ওঠে চিকিৎসকরা; পরে সেই আন্দোলনে জনতার অংশগ্রহণ তা তীব্র করে তোলে। অভিযোগের তীর যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য সরকারের দিকেও।
আন্দোলনের চাপে রাজ্য সরকার ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে নতুন আইন পাস করে রাজ্য বিধান সভায়। সেই সঙ্গে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তিতে অগ্রাধিকার দেয়।
সঞ্জয়কে একমাত্র আসামি করে সিবিআই অভিযোগপত্র দেওয়ার পর গত বছরের ১১ নভেম্বর শুরু হয় বিচার। তার ৫৯ দিনের মাথায় শনিবার রায় দেওয়া হলো।
বিচারক অনির্বাণ দাস রায়ের আগে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সঞ্জয়ের উদ্দেশে বলেন, “সিবিআই এবং সাক্ষীদের বয়ানের ভিত্তিতে যা মনে হয়েছে, তাতে দোষি সাব্যস্ত করব আপনাকে। আপনার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড।”
‘সিভিক ভলান্টিয়ার’ সঞ্জয় তা শুনে বলেন, “আমি কিছু করিনি। আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। আমার কথাটা এক বার শুনুন।”
বিচারক এরপর রায় ঘোষণা করে বলেন, “সোমবার আপনার কথা শুনব।”
নিহত চিকিৎকের বাবা রায়ের পর বিচারকের উদ্দেশে বলেন, “আপনার ওপর যে আস্থা ছিল, তার পূর্ণ মর্যাদা দিয়েছেন।” তখনও বিচারক বলেন, “সোমবার আসুন।”
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের পর মৃত্যু) এবং ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষি সাব্যস্ত করা হয়েছে সঞ্জয়কে।
চিকিৎসক ধর্ষণের পর সিসিটিভির ভিডিও দেখে ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সঞ্জয়কে। ভিডিওতে সঞ্জয়কে হাসপাতালের সেমিনার হলে ঢুকতে এবং সেখান থেকে বেরোতে দেখা গিয়েছিল, যেখানে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটে।
এরপর সিবিআই সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল। ওই ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে উল্লেখ করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী।
তবে মামলার শুনানিতে নির্যাতিতের পরিবার তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তদন্ত ঠিকভাবে হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তারা। তারা কলকাতা হাই কোর্টে গিয়েও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ তুলেছিলেন।
নির্যাতিতার বাবার সন্দেহ, ওই ঘটনায় শুধু সঞ্জয় জড়িত নন। আরও চারজন চিকিৎসকও জড়িত থাকতে পারেন।
আন্দোলনকারী অনেকে এখনও ধারণা করছেন, সঞ্জয় কোনোভাবেই একা জড়িত নন। বড় কাউকে আড়াল করতে ভলান্টিয়ার সঞ্জয়কে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে।