Beta
সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫

আর জি কর ধর্ষণ-হত্যা : আসামি সঞ্জয়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড

sanjay-court-room
[publishpress_authors_box]

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় দোষী সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাগারে থাকতে হবে।

এই মামলার একমাত্র আসামি সঞ্জয়কে শনিবার দোষী সাব্যস্ত করেছিল পশ্চিমবঙ্গের শিয়ালদহের জজ আদালত। সোমবার তার শাস্তি ঘোষণা করেন বিচারক অনির্বাণ দাস।

আদালতের কাছে আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিল তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। তবে শেষ পর্যন্ত আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক। সেই সঙ্গে জরিমানা করেন ৫০ হাজার রুপি।

ভারতের সংবাদমাধ্যমে এই খবর জানিয়ে বলা হয়, এছাড়া কর্মক্ষেত্রে ধর্ষণের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে ৭ লাখ এবং হত্যার জন্য ১০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে রায়ে।

রায় ঘোষণা করে বিচারক বলেন, “রাষ্ট্রের দায়িত্ব নির্যাতিতার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।”

৩৩ বছর বয়সী আসামি সঞ্জয়কে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আপনাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে।”

দেশের সরকারি চিকিৎসালয় আর জি কর হাসপাতালে গত বছরের ৮ আগস্ট ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৩১ বছর বয়সী এক নারী চিকিৎসককে। তিনি সেদিন রাতের পালায় হাসপাতালে দায়িত্বে ছিলেন।

সেই ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গে ফুঁসে ওঠে চিকিৎসকরা; পরে সেই আন্দোলনে জনতার অংশগ্রহণ তা তীব্র করে তোলে। অভিযোগের তীর যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য সরকারের দিকেও।

আন্দোলনের চাপে রাজ্য সরকার ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে নতুন আইন পাস করে রাজ্য বিধান সভায়। সেই সঙ্গে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তিতে অগ্রাধিকার দেয়।

সঞ্জয়কে একমাত্র আসামি করে সিবিআই অভিযোগপত্র দেওয়ার পর গত বছরের ১১ নভেম্বর শুরু হয় বিচার। তার ৫৯ দিনের মাথায় শনিবার রায় দেওয়া হয়। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের পর মৃত্যু) এবং ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষি সাব্যস্ত করা হয়েছে সঞ্জয়কে। তার দুই দিন পর সোমবার দেওয়া হলো সাজার রায়।

তবে আদালতের দেওয়া রায়ে খুশি নন নির্যাতিতার বাবা-মা; তারা চেয়েছিলেন আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি। ক্ষতিপূরণ চান না বলেও জানান নির্যাতিতের বাবা। রায়ের পর তিনি বলেন, “বিচার পাইনি।”

যদিও বিচারকের সিদ্ধান্ত নিয়ে নয়, তারা আঙুল তুলেছেন তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের দিকে। প্রতিক্রিয়ায় নির্যাতিতার মা বলেছেন, “এই ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে সিবিআই। সেজন্যই বিচারক সঞ্জয়কে সর্বোচ্চ শাস্তি দেননি।”

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আমার মেয়ে হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় ধর্ষিত হলো। ওকে খুন করা হলো। এটা কি বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়?”

সঞ্জয় রায় একা এই ঘটনা ঘটাতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দণ্ডিত সঞ্জয় রায়ও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন বলে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে।

আদালতে তিনি বলেন, “আমি খুন বা অন্য কাজ কিছুই করিনি। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি নির্দোষ। যে কাজটা করিনি, তাতে আমাকে দোষী বলা হচ্ছে।”

মারধর করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে সঞ্জয় বিচারককে বলেন, “আপনাকে আগেও বলেছি যে কীভাবে আমাকে মারধর করা হয়েছে, যার যা ইচ্ছে করেছে। অত্যাচার করা হয়েছে, সাইন (সই) করানো হয়েছে। যেখানে বলেছে সাইন (সই) করেছি।”

আরজি কর কাণ্ডের রায় শুনে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই ঘটনার পরে প্রতিবাদ জানাতে পথেও নেমেছিলেন তিনি। দোষীর ফাঁসি প্রত্যাশা করেছিলেন তিনি। মমতা বলেন, “আমরা ফাঁসির দাবি করেছিলাম। কী করে জানি না… আমাদের হাতে কেসটা থাকলে অনেক আগেই ফাঁসির অর্ডার করে নিতাম।”

চিকিৎসক ধর্ষণের পর সিসিটিভির ভিডিও দেখে ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সঞ্জয়কে। ভিডিওতে সঞ্জয়কে হাসপাতালের সেমিনার হলে ঢুকতে এবং সেখান থেকে বেরোতে দেখা গিয়েছিল, যেখানে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটে।

এরপর সিবিআই সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল। ওই ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে উল্লেখ করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী।

তবে মামলার শুনানিতে নির্যাতিতের পরিবার তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তদন্ত ঠিকভাবে হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তারা। তারা কলকাতা হাই কোর্টে গিয়েও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ তুলেছিলেন।

নির্যাতিতার বাবার সন্দেহ, ওই ঘটনায় শুধু সঞ্জয় জড়িত নন। আরও চারজন চিকিৎসকও জড়িত থাকতে পারেন।

আন্দোলনকারী অনেকে এখনও ধারণা করছেন, সঞ্জয় কোনোভাবেই একা জড়িত নন। বড় কাউকে আড়াল করতে ভলান্টিয়ার সঞ্জয়কে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত