Beta
রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৫

একাত্তরে জামায়াতের রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিল, প্রশ্ন রিজভীর

ss-rizvi-2124
[publishpress_authors_box]

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিল—এ প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটে এক অনুষ্ঠানে এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি। সেখানে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর পক্ষ থেকে যুব এশিয়া কাপ বিজয়ী ক্রিকেটার ইকবাল হোসেন ইমনের পরিবারকে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন তিনি।

‘দেশে পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক শক্তি দুটি, একটি সেনাবাহিনী, আরেকটি জামায়াত’—সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এই প্রশ্ন তুলেছেন দলটির এক সময়কার মিত্র ও জোটসঙ্গী বিএনপির এই নেতা।

জামায়াতকে ইঙ্গিত করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “একটি রাজনৈতিক দল বলেছে দেশপ্রেমিক তারা এবং সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী দেশপ্রেমিক নিঃসন্দেহে, কারণ তাদের পূর্বসূরিরা এই বাংলাদেশ নির্মাণে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, তার অন্যতম মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানেও সেনাবাহিনী উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে।

“আমি ইসলামপন্থী সেই রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, একাত্তরে আপনাদের রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিল? কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন, কোন সেক্টর কমান্ডারের আন্ডারে যুদ্ধ করেছেন? বাংলাদেশে কেউ দেশপ্রেমিক নেই, শুধু একটি রাজনৈতিক দল দেশপ্রেমিক– এই ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করলে মানুষ হাসবে, মানুষ হাসি ছাড়া আর কিছু দেবে না।”

১৯৯৯ সালে জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে চার দলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। ২০০১ সালে এই জোট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেলে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় স্থান হয় জামায়াতের দুই নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মো. মুজাহিদের। যদিও পরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

পরবর্তীকালে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট পরিণত হয় ২০ দলীয় জোটে। ২০১৪ সালে এই জোট নির্বাচন বর্জন করলে জামায়াতও নির্বাচনে যায়নি। ২০১৮ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ কয়েকটি দল যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিল তাতে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন জামায়াতের প্রার্থীরা।

কারণ, ২০১৮ সালেই জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।

মূলত ২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজ শুরু হলে কোণঠাসা হয়ে পড়তে শুরু করে জামায়াত। ধীরে ধীরে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কেও আসে দূরত্ব।

গণআন্দোলনের মুখে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ শাসনামলের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “এই জাতির ঘাড়ে একটি জগদ্দল পাথর চেপে বসেছিল। পাথর এত ভারি যে গোটা জাতিকে রুদ্ধশ্বাস অবস্থায় রেখেছিল। মানুষ নিশ্বাস নিতে পারত না। স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারত না। রাজনৈতিক দল ও তার কণ্ঠের স্বাধীনতা ছিল না। মিছিল করতে পারত না, মিটিং করতে পারত না। পুলিশ অনুমতি দেয়ার পর যুবলীগ-ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেওয়া হতো।”

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথা টেনে তিনি বলেন, “পুলিশ, র‌্যাব বিনা কারণে বিনা ওয়ারেন্টে রাতে বাসায় গেলে পরিবারের নারীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত। যাকে খুঁজতে গিয়েছে তাকে না পেলে পরিবারের মেয়েদের পর্যন্ত গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছে।”

নিজের ক্ষমতাকে নিরাপদ করার জন্য শেখ হাসিনা দেশের স্বাধীনতা কলঙ্কিত করেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপির আরেক নেতা ইলিয়াস আলীর বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানীর বাসায় ফেরার পথে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি এম. ইলিয়াস আলী। এই দীর্ঘ সময়ে ইলিয়াস আলী জীবিত নাকি মৃত, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

রিজভী বলেন, “ইলিয়াস আলী আজ নেই কেন? শেখ হাসিনার জন্য। কারণ তিনি দেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি টিপাইমুখ বাঁধ অভিমুখে লংমার্চ করেছিলেন। মানুষ বলে এইজন্য তাকে নিরুদ্দেশ করে দেওয়া হয়েছে। কত যুবদল ছাত্রদলের ছেলে ক্রসফায়ারের গুমের শিকার হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। সাড়ে ১৫ বছর এই ভয়ংকর মানবতাহীন কাজ করেছেন শেখ হাসিনা।”

তিনি আরও বলেন, “খবরের কাগজে দেখছি এক বছরের মধ্যে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে হত্যার বিচার সম্পন্ন হবে। শুধু জুলাই আগস্টে যারা নিহত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, সেইসব অপরাধের বিচার হবে, ইলিয়াস আলীর বিচার হবে না? চৌধুরী আলমের বিচার হবে না? সাড়ে ১৫ বছর যারা ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন তাদের বিচার করবেন না? যারা ক্রসফায়ার দিয়েছেন, শীতলক্ষা নদীতে সাতটি লাশ ভাসিয়ে দিয়েছেন, সেই সমস্ত দুর্বৃত্ত র‌্যাব অফিসারদের বিচার হবে না? যে অপরাধ শেখ হাসিনা করেছে, যে কসাইয়ের ভূমিকা পালন করেছে, তার বিচার হবে না?”

জুলাই-আগস্টে আত্মদানকারী ছাত্র-জনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের যেমন বিচার হবে, তেমনি গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য যারা অকাতরে জীবন দিয়েছে, নিরুদ্দেশ হয়েছে, তাদের কেন বিচার হবে না? হওয়া উচিত। এইভাবে বিভাজন রেখা টানলে তা দুঃখজনক।”

বুধবার শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে ছাপানোর কাজ শেষ না হওয়ায় সবার হাতে নতুন বই দিতে পারেনি সরকার। অল্প কিছু শিক্ষার্থী পেয়েছে নতুন বই। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই নেতা বলেন, “স্কুলে পাঠ্যবই সম্পূর্ণ সরবরাহ করা যায়নি, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। ইতিহাসের বইয়ে তারা কিছু কাজ করেছেন, প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এখানে জাতির বিবেকবানদের জন্য যে অধ্যায় করা হয়েছে, তাতে আমরা দ্বিমত করছি না। সেখানে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে মুক্তিযুদ্ধের অধ্যায় রাখা হলো না কেন?”

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, “জিয়াউর রহমান তো শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শেষ হয়ে যাননি, যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের অধ্যায় থাকবে না কেন? যারা প্রবাসী সরকার হয়েছিল, সেটা থাকবে। সেটার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের একটা অধ্যায় থাকতে হবে। যতটুকু হয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ, কিন্তু অসম্পুর্ণ থাকবে কেন?”

তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ একটি বড় ঘটনা, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীকারের আন্দোলন করেছেন, সেটি স্বাধীনতার জন্য মাঠ প্রস্তুত হয়েছে, কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাযুদ্ধে কোন বিশেষ ঘোষণা বা প্রস্তুতির কথা বলেননি। সেই আহ্বান তার নেই। প্রকৃত সত্য হচ্ছে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন জিয়াউর রহমান এবং যুদ্ধ হয়েছে ৯ মাস। সেই অধ্যায়টি রাখা হয়নি। আমি সরকারকে অনুরোধ করব, স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস হওয়া উচিত।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত