Beta
শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫

ডাকাতির টাকায় খামার-ডুপ্লেক্স মজিবরের : পিবিআই

মজিবরের মাছের খামার। পাশে নির্মাণাধীন বাড়ি।
মজিবরের মাছের খামার। পাশে নির্মাণাধীন বাড়ি।
[publishpress_authors_box]

ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাভার ও আশুলিয়া থানা এলাকাধীন তুরাগ নদীতে বিভিন্ন নৌযানে দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করে আসছিলেন মো. মজিবর আকন ওরফে টেক্কা (৪৯)। ডাকাতির টাকায়ই বরগুনায় গ্রামের বাড়িতে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন তিনি। নির্মাণাধীন সেই বাড়ি ঘেঁষে আছে মাছের বিশাল খামার।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে আরও জানিয়েছে, তাদের জালে ধরা পড়েছেন মজিবর আকন। রবিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২০১৮ সালে ডাকাতির টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নিজ দলের সদস্য আজাহার ওরফে আজাদকে (৩৩) হত্যার ঘটনায়।

পিবিআই সদরদপ্তরে এ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার মজিবর বরগুনার তালতলী উপজেলার গাববাড়ীয়া গ্রামের মুনসুর আলী আকনের ছেলে।

পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা জানান, ২০১৮ সালে ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার মজিবর আকন ও তার দুই সহযোগী রুহুল আমিন লেদু (৪৩) ও সামিম হোসেনের (৩৩) হাতেই ডাকাত দলের আরেক সদস্য আজাহার খুন হন। খুনের পর লাশ সাভারের তুরাগ নদীতে ফেলে দেন তারা। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনায় জড়িত দুইজনকে রবিবার গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই ঢাকা জেলার একটি টিম।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে আজাহার তার বড় ভাই শাজাহানের বাসা থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হন। সময়মতো আজাহার বাসায় না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। তিনদিন পর শাজাহান জানতে পারেন, সাভার মডেল থানাধীন আমিনবাজারের হিজলা এলাকায় তুরাগ নদীর পূর্বপাশে একটি লাশ ভাসছে। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ছোটভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন। পরদিন সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। সাভার মডেল থানা পুলিশ ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলা তদন্ত করে। ৮ জানুয়ারি পিবিআই ঢাকা জেলা তদন্তভার পায়। 

গ্রেপ্তার মজিবর আকন।

পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা বলেন, পিবিআই ঢাকা জেলার একটি চৌকস দলের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ছয় বছর আগের হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনায় মজিবর ছাড়াও সামিম হোসেন নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সামিম ঝালকাঠি সদর থানার নওপাড়া গ্রামের ছোমেদ হাওলাদারের ছেলে। গ্রেপ্তারের পর তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। তারা আজাহার খুনে জড়িত থাকার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামিরা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাত ১১টার পর আজাহারসহ ৪-৫ জন ডাকাতি করতে ট্রলারে তুরাগ নদীর গাবতলী ঘাট এলাকা থেকে আশুলিয়া রওনা করেন। কিছু দূর যাওয়ার পর আগের ডাকাতির টাকার ভাগ নিয়ে আজাহারের সঙ্গে মজিবর ও তার ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ রুহুল আমিনের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হলে রুহুল আমিন ধারালো বড় কাঁচি (ডাকাতির কাজে ব্যবহারের জন্য ট্রলারে রাখা) দিয়ে পেছন থেকে আজাহারের মাথায় তিনটি কোপ দেন। মজিবর চাপাতি দিয়ে আজাহারের বুকে একটি কোপ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে লাশ গুম করতে তুরাগ নদীতে ফেলে তারা চলে যান।

পিবিআই জানিয়েছে, ডাকাত সর্দার মজিবর আকনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় এখন পর্যন্ত নয়টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। মজিবরের সেকেন্ড ইন কমান্ড রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার তথ্য আছে। রুহুল আমিন আরেকটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন। গ্রেপ্তার অপর আসামি সামিম হোসেনের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতির মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

গ্রেপ্তার আনোয়ার হোসেন শামীম

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা জেলার এসআই মো. শহিদুল ইসলাম সকাল-সন্ধ্যাকে বলেন, মজিবর আকনের আপন ভাই আনোয়ার হোসেন শামীমও ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তার বিরুদ্ধেও তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। মজিবর ও আনোয়ার একেবারেই গরীব ঘরের সন্তান ছিলেন।

তাদের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। তারা ডাকাতি ও চাঁদাবাজির টাকায় বরগুনায় গ্রামের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন বিশাল মাছের খামার। এছাড়া একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির নির্মাণ শুরু করেছেন। সেই বাড়ি ও খামারের আশপাশের বিশাল এলাকা সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে মনিটরিং করা হতো।

পিবিআই কর্মকর্তা শহিদুল বলেন, মজিবর আকন ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বিবাহ করেন। ঢাকায় অপরাধ করে গাজীপুরে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আত্মগোপনে থাকতেন তিনি। তুরাগ নদীর সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর অংশে বিভিন্ন মালবাহী ট্রলার, বালুবাহী ভলগেট ও অন্যান্য নৌযানে দীর্ঘদিন ধরেই ডাকাতি ও চাঁদাবাজি করছিলেন তিনি। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই রাতে অস্ত্রশস্ত্র ও দলবল নিয়ে তার ট্রলারে ডাকাতি করতেন। ট্রলারের লোকজনকে মারধর করে টাকা পয়সা ও মূল্যবান জিনিস ডাকাতি করে নিয়ে যেতেন তারা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত