নিন্দুকেরা তাকে বলেন ‘পেনাল্দো’! শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে পেনাল্টি থেকেই গোল করেছেন ১৫০টি। সেই ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে মিস করলেন পেনাল্টি! স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে ৯০ মিনিট শেষে গোলশূন্য থাকার পর ১০৫তম মিনিটে পাওয়া পেনাল্টিটা নষ্ট করেন পর্তুগীজ যুবরাজ। স্লোভেনিয়ার গোলকিপার ইয়ান ওবলাক বাজপাখির মতোই ঠেকান সেই শট।
ম্যাচজুড়ে একের পর এক মিস করা রোনালদো পেনাল্টি নষ্ট করে আর ধরে রাখতে পারেননি নিজেকে। ভেঙে পড়েন কান্নায়। সেই কান্না ম্যাচ শেষে বদলে যায় হাসিতে। টাইব্রেকারে প্রথম শটটাই নিতে এসেছিলেন তিনি। এবার ইয়ান ওবলাককে ফাঁকি দিয়ে গোল করেন ঠিকই। পর্তুগালের গোলরক্ষক দিয়েগো কস্তা ঠেকান টানা তিনটি পেনাল্টি! ইউরোর ইতিহাসে তিন পেনাল্টি ঠেকানোর নজির নেই আর কারও।
![](https://www.shokalshondha.com/wp-content/uploads/2024/07/rrrrrrrrrrrrrrrr.png)
কস্তা স্লোভেনিয়ার জোসিপ ইলিচিচ, জুরে বালকোভেচ ও বেঞ্জামিন ভারবিচের শট ঠেকান অতিমানব হয়ে। ম্যাচে ৯৩টি আক্রমণ করে গোল না পেলেও কস্তার দৃঢ়তায় কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে যায় পর্তুগাল।
ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে উদযাপন করা রোনালদো ম্যাচ শেষে পেলেন যেন মুক্তি, ‘‘সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষেরও খারাপ দিন আসে। দলের যখন আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল তখন আমি ছিলাম নিম্নমানের। তবে এই কষ্ট বদলে গেছে খুশিতে। এটাই ফুটবল। ব্যাখ্যাতীত ব্যাপার ঘটে এখানে। একই সময়ে আমি যেমন হতাশ হয়েছি তেমনি খুশিও হলাম।’’ কান্নাজড়িত কণ্ঠেই জানালেন এটা তার শেষ ইউরো, ‘‘অবশ্যই এটা আমার শেষ ইউরো। তবে এজন্য আমি আবেগি হয়ে পড়িনি। যেভাবে সবাই আমাদের সমর্থন করছেন, সেটাদেখে আমি আপ্লুত। ভক্তদের বলতে চাই, আমি অত্যন্ত দুঃখিত। এই জার্সিতে আমি সবসময় নিজের সেরাটা দিয়েছি। সারা জীবন সেটাই করে যাব।’’ এমন ঘোষণায় ছড়িয়েছে গুঞ্জণ। তাহলে কী অবসরের কথা ভাবছেন রোনালদো?
![](https://www.shokalshondha.com/wp-content/uploads/2024/07/4r5-1024x573.png)
ম্যাচে পেনাল্টি মিসের পর টাইব্রেকারে প্রথম শট নিতে সাহস লাগে। সেই সাহসটাই দেখিয়েছেন রোনালদো। এজন্য তাকে প্রশংসায় ভাসালেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক অ্যালান শিয়েরার, ‘‘পেনাল্টি নেওয়াটাই একটা কঠিন কাজ। সেটা আরও কঠিন যখন আপনি ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একটা মিস করে বসবেন। এজন্যই রোনালদোরা কিংবদন্তি, কারণ তাদের অসাধারণ মানসিক দৃঢ়তা থাকে।’’
রোনালদোর কান্না নিয়ে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এক্স-এ একজন লিখেছেন, ‘‘ রোনালদোর কান্নার চেয়ে মজার আর কিছু হতে পারে না।’’ আরেকজন সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘‘ম্যাচ চলার সময় এভাবে কান্না করতে পারেন না আপনি ‘’
এবারের ইউরোয় পোস্টে ২০টা শট নিয়েও গোলের দেখা পাননি রোনালদো। তার ক্যারিয়ারে এমন খারাপ সময় কমই এসেছে। তারপরও দলের সেরা তারকাটিকে প্রশংসায় ভাসালেন তিনটি পেনাল্টি ঠেকানো কস্তা, ‘‘সবাই জানি রোনালদো কতটা কঠোর পরিশ্রম করে। নিজেকে উজার করে খেলেও এমন মিসে ও কতটা হতাশ আমি জানি। রোনালদোর সঙ্গে একই দলে খেলতে পারাটা সম্মানের। আমরা একটা পরিবার হয়েই থাকি।’’
ম্যাচ শেষে কস্তাকে জড়িয়ে ধরে অভিবাদন জানিয়েছিলেন রোনালদো। এই গোলরক্ষক নিজেও খুশি তিনটা সেভ করে দলকে জেতাতে পেরে, ‘‘এটাই হয়তো আমার জীবনের সেরা ম্যাচ। এতদিন যা করে এসেছি শুধু সেটাই করতে চেয়েছিলাম। আমরা ওদের পেনাল্টি নিয়ে ম্যাচের আগে বিশ্লেষণ করেছিলাম। কিন্তু ওরা ম্যাচে কৌশল বদলে ফেলেছিল। তাই আমার খুশিটা আরও বেশি।’’