নির্বাচনে দাঁড়াবেন অথচ জয় পাবেন না এমনটা যেন হতেই পারে না। বলছি, রুশনারা আলীর কথা। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এই নাগরিক এবারও বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
এর মধ্য দিয়ে টানা পঞ্চমবারের মতো যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বসতে যাচ্ছেন ৪৯ বছর বয়সী রুশনারা।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে লেবার পার্টির নেতা রুশনারা ১ হাজার ৬৮৯ ভোটে পরাজিত করেছেন আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ইমাম, ব্রডকাস্টার ও রাজনীতিক আজমল মাসরুরকে।
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনে রুশনারা পেয়েছেন ১৫ হাজার ৮৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মাসরুর পেয়েছেন ১৪ হাজার ২০৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে ভোট শুরু হয়। রাত ১০টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। এবারের নির্বাচনে দেশটির ৯৮টি দল অংশগ্রহণ করে।
রুশনারা আলী ও আজমল মাসরুরসহ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৩৪ ব্রিটিশ নাগরিক দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
শুক্রবার নির্বাচনের ফল বলছে, যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৪১১টিতে জয় পেয়েছে লেবার পার্টি। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ১১৯টি আসনে জয়ী হয়েছে।
হাউস অব কমন্সের ৪১১টি আসনে জয় পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছে লেবার পার্টি। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন দলটির নেতা কিয়ার স্টারমার।
যুক্তরাজ্যের মধ্য-ডানপন্থী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এরই মধ্যে পরাজয় মেনে নিয়েছেন। বলেছেন, “আমি দুঃখিত। লেবার পার্টি এবারের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়েছে।”
লেবার পার্টির নেতা স্টারমারকে নির্বাচনে জয়ের জন্য অভিনন্দনও জানিয়েছেন সুনাক।
নিরঙ্কুশ জয়ের খবরে সুনাকের উত্তরসূরি যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী স্টারমার সেন্ট্রাল লন্ডনে উচ্ছ্বসিত জনতার উদ্দেশে বলেন, “পরিবর্তন শুরু হয়েছে। আপনারা আমাদের দেশের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন, এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ।”
কে এই রুশনারা
১৯৭৫ সালে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় জন্ম রুশনারার। সাত বছর বয়সে তিনি পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে চলে যান। মালবেরি স্কুল অব গার্লসের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
সেখান থেকে পরে টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজে ভর্তি হন। এরপর অক্সফোর্ডের সেন্ট জনস কলেজ থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন রুশনারা।
রুশনারার বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসে। লন্ডনের এই এলাকায় অনেক বাংলাদেশি বসবাস করেন। এক পরিসংখ্যান বলছে, টাওয়ার হ্যামলেটসের জনসংখ্যার ৩২ শতাংশই বাংলাদেশি।
গাজা নিয়ে বিতর্কে রুশনারা
যুক্তরাজ্যের এবারের নির্বাচনে রুশনারার প্রতিদ্বন্দ্বী আজমল মাসরুর প্রধানত গাজা ইস্যুর ওপর ভর করে নির্বাচনী প্রচার চালান।
মিডল ইস্ট আই বলছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার কড়া সমালোচক স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্ট মাসরুর।
নির্বাচনী প্রচারে গাজায় ইসরায়েলের হামলা নিয়ে যতটা সরব ছিলেন মাসরুর, ততটা ছিলেন না লেবার পার্টির নেতা রুশনারা।
গত বছরের নভেম্বরে এ নিয়ে লন্ডনে বাংলাদেশিদের তোপের মুখেও পড়েন তিনি। স্থানীয়দের আহ্বান সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত প্রস্তাবে ভোটদানে তাকে বিরত থাকতে দেখা যায়।
মাসখানেক আগে নির্বাচনী প্রচারের সময় সোশাল মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, পার্লামেন্টে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ভোটদানে বিরত থাকায় স্থানীয়দের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন রুশনারা।
আত্মপক্ষ সমর্থন করে রুশনারা সেসময় বলেছিলেন, লেবার পার্টির ভেতরেই এ নিয়ে আরও কার্যকরভাবে কাজ করছেন তিনি।