আদালত চত্বরে পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে আক্রান্তের তালিকায় এবার যুক্ত হলো সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম।
হামলাকারীরা কেবল হামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তার ওপর ছুড়েছে পচা ডিমও।
সোমবার ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানা থেকে এজলাসে তোলার আগে আক্রান্ত হন তিনি। আবার রিমান্ড শুনানি শেষে যখন সাবেক এই মন্ত্রীকে হাজতখানায় নেওয়া হচ্ছিল তখন তাকে লক্ষ্য করে ‘বৃষ্টির মতো’ ডিম ছোড়া হয়। নিক্ষেপ করা হয় জুতাও। পুলিশের বেষ্টনী ভেঙে তার ওপর হামলাও চালানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরাই এই হামলা ও ডিম ছোড়ার কাজে যুক্ত ছিলেন। তবে বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে এর সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক এই পটপরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার হতে থাকেন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার সংশ্লিষ্ট হেভিওয়েট ব্যক্তিরা।
যাদের মধ্যে যেমন ছিলেন সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কিংবা সংসদ সদস্য; তেমনি ছিলেন বিচারক, আমলা, ব্যবসায়ী ও দলীয় সুবিধাভোগীরা।
এদেরর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হামলার শিকার হন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। গত আগস্টে সিলেটের কানাইঘাট থেকে গ্রেপ্তার এই সাবেক বিচারককে গ্রেপ্তারের পর আদালতে তোলার সময় পুলিশের বেষ্টনীর মধ্যেই তার ওপর ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করা হয়। শারীরিকভাবেও আঘাত করা হয়।
যার তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, সেদিন রাতেই তার শরীরে একটি অস্ত্রোপচার করতে হয়, চিকিৎসায় গঠন করতে হয় বিশেষ মেডিকেল বোর্ডও।
অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ জনতার ক্ষোভ এড়াতে খুব সকালে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করেও শেষ রক্ষা হয়নি রাউজানের সাবেক এমপি আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর। তাকে বহনকারী পুলিশ ভ্যান আদালত চত্বরে পৌঁছতেই একদল লোক তাকে মারতে যায়, যাদের সঙ্গে হাতাহাতি হয় পুলিশের। প্রিজন ভ্যান লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ডিমও।
একইভাবে ডিম হামলার শিকার হন সাবেক মন্ত্রী ও গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজীও।
এছাড়া সাবেক মন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক দীপু মনি, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপাসহ গত দুই মাসে গ্রেপ্তার হওয়া অনেকেই হামলার শিকার হয়েছেন।
এদের প্রত্যেকেই পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে কিল-ঘুষির শিকার হন। তাদের লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ডিম, জুতা।
সবশেষ সোমবার বিএনপির কর্মী মকবুলকে গুলি করে হত্যার অভিযোগের মামলায় আদালতে হাজির করার সময় হামলার শিকার হলেন সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীও।
বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটের দিকে যখন আলাদা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবের হোসেন চৌধুরী, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান ও সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানকে আদালতে তোলা হচ্ছিল তখন তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
এজলাসে নেওয়ার সময় সাবের হোসেন চৌধুরীর শার্ট ও ট্রাউজারে ডিম লেগে থাকতে দেখা যায়।
বিকেল ৪ টার দিকে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মাহবুবুল হকের আদালতে রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। প্রথমে হয় সাবের হোসেন চৌধুরীর পক্ষে রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি।
বিএনপিপন্থী আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, “হাসিনা সরকারের অবৈধ মন্ত্রী। তিনি ফ্যাসিস্টের অন্যতম সহযোগী, কাছের লোক। তিনি আওয়ামী লীগ করতেন না। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে টার্গেট করে। শেখ হাসিনার সঙ্গে হাত মেলায়। একটা সময় টোটালি নীতি আদর্শ বিসর্জন দিয়ে হাসিনা সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পায়।”
এসব কথা যখন চলছে তখন ৪ টা ৩ মিনিটে বিদ্যুৎ চলে যায়। এসময় আসামিদের লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করা হয়।
ওমর ফারুক তখন বাকি আইনজীবীদের বিশৃঙ্খলা করতে বারণ করেন। পাঁচ মিনিট পর আবার বিদ্যুৎ চলে আসে।
ওমর ফারুক শুনানিতে সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনিকে ক্রস ফায়ারে দেওয়ার সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে পিটার হাস গণতান্ত্রিক ভোটের আহ্বান জানান। তিনি পিটার হাসের মিটিং করের শেখ হাসিনার নির্দেশে। অবৈধ নির্বাচন করার জন্য তার ভূমিকা রয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণভবনের বৈঠকে সাবের হোসেন চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে আইনজীবী বলেন, “সেখানে সিদ্ধান্ত হয় আন্দোলন দমাতে সরাসরি গুলির। নির্মম সুন্দর চেহারার আদলে তার ভয়ংকর রুপ দেখুন।”
আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে হাসেন সাবের হোসেন চৌধুরী। এতে আবারও আইনজীবীরা ক্ষুদ্ধ হন, হইচই করে ওঠেন।
তখন ওমর ফারুক বলেন, “মানুষের যখন বিবেক চলে যায়, তখন তিনি স্বাভাবিক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেন। ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট। অথচ তার লজ্জা, অনুতাপ নাই। বিএনপি কর্মী মকবুল হত্যার সাথে জড়িত। তার রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।”
তখন অন্য আইনজীবীরা সমন্বরে বলতে থাকেন, “১০ দিন, ১০ দিন, ১০ দিন”।