Beta
বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৫

নেপালে হিমালয় ছোঁয়ার অপেক্ষায় সাবিনা

ঘাম ঝরানো অনুশীলন শেষে হাসিমুখে সাবিনা খাতুন।  নেপালের আনফা কমপ্লেক্স মাঠে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঘাম ঝরানো অনুশীলন শেষে হাসিমুখে সাবিনা খাতুন। নেপালের আনফা কমপ্লেক্স মাঠে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]
কাঠমান্ডু থেকে
কাঠমান্ডু থেকে

কাঠমান্ডুর আনফা কমপ্লেক্স মাঠে সবার অনুশীলন শেষ। ততক্ষণে আইস বাথ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবলাররা। কিন্তু তখনও গোলরক্ষক রুপনা চাকমাকে নেটের সামনে রেখে একের পর এক জালে বল জড়িয়ে চলেছেন সাবিনা খাতুন। কোনও একটি শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে গেলে সেকি আক্ষেপ সাবিনার!

গোলের নেশায় মগ্ন এক ফুটবলার

নেপালের হিমহিম শীতের সকালেও ঘেমে নেয়ে একাকার বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। আগামী ২৫ অক্টোবর সাবিনার ৩১তম জন্মদিন। সাবিনার সঙ্গে যারা ফুটবল শুরু করেছিলেন তাদেরই একজন মিরোনা খাতুন জাতীয় দলের সহকারী কোচ। অন্য অনেকে খেলা ছেড়ে অবসরে গেছেন। কিন্তু ফুটবলের প্রতি অগাধ ভালোবাসা আর পরিশ্রম এখনও মাঠে রেখেছে সাবিনাকে। তাইতো এখনও বাংলাদেশ দলে সাবিনার বিকল্প তৈরি হয়নি। তাইতো এখনও সাবিনাকে টপকে যাওয়ার মতো ফুটবলার জন্মায়নি বাংলাদেশে।

এখনও গোলের নেশায় মগ্ন সাবিনা। ছবি: সংগৃহীত
কিকস্টার্ট এফসির জার্সিতে সাবিনা খাতুন। ছবি: সংগৃহীত।

ঘরোয়া ফুটবলে মুড়ি মুড়কির মতো গোল করেন বলে সাবিনার নামই হয়ে গেছে ‘গোল মেশিন।’ জাতীয় দলের জার্সিতে এ পর্যন্ত ৫৩ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩৪ গোল সাতক্ষীরার এই ফুটবলারের।

সর্বশেষ সাফের সর্বোচ্চ গোলদাতা

এই ৩৪টি গোলের মধ্যে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেই সাবিনা করেছেন ২৫ গোল। যেখানে নেপালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সাফে করেন সর্বোচ্চ ৮ গোল। সবচেয়ে বেশি গোল করে জিতে নেন সাফের গোল্ডেন বুট পুরস্কার।

সাফে সাবিনার যতো গোল

সাফে বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই যেন সাবিনার গোল অবধারিত। ২০১০ সালে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত প্রথম সাফ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রতিটি আসরে খেলেছেন সাবিনা, যে কীর্তি বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলে আর কারও নেই।

সাবিনা খাতুনকে সামলাতে এখনও বেগ পেতে হয় প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের। ছবি: সংগৃহীত

২০১০ সালে কক্সবাজারে প্রথম সাফে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১টি ও ভুটানের বিপক্ষে ২ গোল করেন। এরপর ২০১৪ সালে ইসলামাবাদে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ও ভারতের বিপক্ষে সাবিনা দেন ১টি করে গোল। ওই আসরে মালদ্বীপের বিপক্ষে সাবিনার ছিল ২ গোল। ২০১৬ সালে শিলিগুড়িতে গ্রুপ পর্বে মালদ্বীপের বিপক্ষে ১টি ও সেমিফাইনালে ২টি গোল করেন। আর ওই টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে করেন ১ গোল। আফগানিস্তানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়া ম্যাচে একাই করেন ৫ গোল।

এরপর ২০১৯ সালে বিরাটনগরে ভুটানের বিপক্ষে ১টি গোল রয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের সাফে কাঠমান্ডুতে মালদ্বীপের বিপক্ষে ২টি, পাকিস্তান ও ভুটানের বিপক্ষে ৩টি করে গোল করেন।

এবারও ট্রাম্পকার্ড হতে পারবেন সাবিনা

নেপালের কাঠমান্ডুতে আরেকটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ‘বিশ্বকাপ’ শুরু হলেও বাংলাদেশ সাফের অভিযানে নামবে ২০ অক্টোবর। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। গত আসরে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করার অন্যতম বড় কারিগর ছিলেন সাবিনা। সেই সাবিনা এবার কি ভাবছেন?

বয়স যা ছুঁয়েছে তাতে আগামী সাফে হয়তো তাকে নাও দেখা যেতে পারে জাতীয় দলে। কিন্তু এবারও যে গোলক্ষুধা সাবিনার চোখে মুখে। আরেকটি সাফের শিরোপা নিয়েই দেশে ফিরতে চান তিনি।

এখনও সাবিনা খাতুনের বিকল্প তৈরি হয়নি বাংলাদেশ। ছবি: সংগৃহীত

যদিও এবার কাজটা সাবিনার জন্য সহজ হবে না। কারণ নেপালের যেমন আছেন সাবিত্রা ভান্ডারি, ভারতের বালা দেবী। তারপরও নিজের কাজটা ঠিক মতোই করতে চান সাবিনা। আনফা কমপ্লেক্স মাঠে দাঁড়িয়ে সকাল সন্ধ্যাকে সাবিনা বলছিলেন, “প্রত্যেকটা ম্যাচেই গোল করতে চাই। দলকে জেতাতে চাই। দলের জয়ে ভূমিকা রাখতে চাই।”

গত আসরের মতো এবারও গোল্ডেন বুটে নজর সাবিনার, “ ওরকম লক্ষ্য নিয়ে তো খেলতে নামব না। আর তাছাড়া এবার গ্রুপে আমাদের ম্যাচও একটা কম। গোল না পাওয়ার ক্ষেত্রে সেটা একটা অসুবিধা। তারপরও সুযোগ পেলে তো অবশ্যই সেটা কাজে লাগাব। গোলের সুযোগ এলে তো হাতছাড়া করা যাবে না।”

এবার গ্রুপ পর্বেই বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে দুটি শক্তিশালী দলের। ২০ অক্টোবর পাকিস্তান ও ২৩ অক্টোবর খেলবে ভারতের বিপক্ষে। এই দুটি ম্যাচই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বললেন সাবিনা, “গ্রুপ পর্বের দুটি দলই কঠিন। তবুও আমরা এই ম্যাচ দুটি জিততে চাই। এরপরই ফাইনালে ওঠার কথা ভাবব।” 

সাবিনার যা বয়স, তাতে স্বাভাবিকভাবেই আরেকটি সাফ খেলার সুযোগ থাকবে না তার। তাইতো আবারও সাফের ট্রফি মাথার ওপর উঁচিয়ে ধরতে চান। আবারও ছাদখোলা বাসে ঘুরতে চান বিজয়ীর বেশে।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত