Beta
সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪
Beta
সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪

নিষিদ্ধ ব্রাহমা কীভাবে পেল সাদিক এগ্রো

ব্রাহমা জাতের গরু আমদানিই নিষিদ্ধ করে রেখেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
ব্রাহমা জাতের গরু আমদানিই নিষিদ্ধ করে রেখেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
Picture of অনিক রায়

অনিক রায়

সাদিক এগ্রোর ইমরান হোসেন; ‘বাংলাদেশি কাউবয়’ নামে তাকে ডাকে অনেকে। তাকে নিয়ে ভিডিও মানেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। বলা হয়, কীভাবে নিজেকে আলোচনায় রাখতে হয়, তা বেশ ভালোমতোই জানেন ইমরান।

আলোচনায় থাকার এই প্রবণতা থেকেই হয়ত গত এপ্রিল মাসে তিনি ঢাকার আগারগাঁওয়ে প্রাণিসম্পদ মেলায় ১ হাজার ৩০০ কেজি ওজনের একটি গরু ওঠান। সাদিক অ্যাগ্রো তখন দাবি করে, তাদের এই গরু শতভাগ ব্রাহামা জাতের।

গরুটির দাম হাঁকা হয় কোটি টাকা। বলা হয়, ‘উচ্চ বংশীয় মর্যাদাসম্পন্ন’ হওয়ায় এ গরুর এত দাম।

এখানেই শেষ নয়। এই কোরবানি ঈদের আগে আরও বড় একটি গরু তারা প্রস্তুত করে। গ্রে ব্রাহমা জাতের ওই গরুর দাম হাঁকা হয় দেড় কোটি টাকা। সেই গরুর ওজন ১ হাজার ৪০০ কেজি।

কিন্তু ব্রাহমা জাতের গরু আমদানিই নিষিদ্ধ করে রেখেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে ব্রাহামা গরুর বীজ এনে অন্যান্য গাভীর সঙ্গে ‘ক্রস’ করানো হয়। তাতে যে গরুর জন্ম হয়, তা ব্রাহামা জাতের ৪০-৫০ শতাংশের কাছাকাছি হয়।

তাহলে শতভাগ ব্রাহামা সাদিক এগ্রোর ইমরান কীভাবে পেলেন, আর শতভাগ ব্রাহমা জাতের গরু হলেও তার দাম কি কোটি টাকা হওয়া সম্ভব- এসব প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেছে সকাল সন্ধ্যা

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কোটি টাকা একটি গরুর দাম হতে পারে। তবে তা কোনোদিনই মাংসের গরুর জন্য হতে পারে না। যদি সেই গরুটি প্রজননের জন্য ব্যবহার করা হয়, তাহলেই শুধু কোটি টাকা হতে পারে দাম। কিন্তু এর উদাহরণও পৃথিবীতে বিরল।

সাদিক এগ্রোর এ ধরনের কর্মকাণ্ড গরুর মাংসের দাম বাড়ার জন্য একভাবে দায়ী বলে অভিযোগ করছেন ঢাকা শহরের মাংস ব্যবসায়ীরা।

কোরবানির ঈদের আগে গরু-ছাগলের এমন প্রচার চালিয়েছিল সাদিক এগ্রো।

কীভাবে এল ১০০% ব্রাহমা

যে গরু আমদানি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ সেই গরু কীভাবে পেল সাদিক এগ্রো। এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য একটু পেছনে যেতে হবে।

সময়টা ২০২১ সাল। সে বছর কোরবানির ঈদের কিছু দিন আগে ৫ জুলাই ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দ হয় ১৮টি ব্রাহামা জাতের গরু। মালিকানায় লেখা ছিল সাদিক এগ্রোর নাম। কিন্তু তখন বিমানবন্দরে গরুগুলো নিতে কেউ যায়নি।

এর পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি নিষিদ্ধ করে। অভিযোগ ছিল, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নথিপত্র জাল করে গরুগুলো আনতে চেয়েছিল সাদিক এগ্রো। তারা নথিতে এই গরুগুলোকে শাহীওয়াল জাতের গরু বলে উল্লেখ করেছিল।

গরুগুলো যেদিন জব্দ হয়েছিল সেদিন গণমাধ্যমে ঢাকা কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) মোহাম্মদ আবদুস সাদেক বলেছিলেন, “বাংলাদেশে ব্রাহমা জাতের গরু আমদানির অনুমতি না থাকা এবং গরুর আমদানিকারককে না পাওয়ায় এগুলো জব্দ করা হয়েছে।”

তখন ঢাকা কাস্টমস হাউস জানিয়েছিল, ১৩-৬০ মাস বয়সী এই গরুগুলোর আমদানিকারক হিসেবে মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রোর নাম লেখা রয়েছে। ওই ১৮টি গরুর মধ্যে একটি মারাও যায়। ঢাকা কাস্টম হাউস গরুগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে হস্তান্তর করে। এরপর সেগুলো সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হয়।

সেখানে কথা বলে জানা যায়, পরবর্তীকালে কৌশলে নিজের ক্ষমতা এবং যোগাযোগ ব্যবহার করে গরুগুলো নিয়ে যান সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন।

কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব হলো- তা জানতে সকাল সন্ধ্যা যোগাযোগ করে সাভারে অবস্থিত কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের পরিচালক ডা. মনিরুল ইসলামের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “ব্রাহমা গরুগুলোকে আমরা হস্তান্তর করে দিয়েছি। আমাদের কাছে নির্দেশনা এসেছিল রমজান মাস উপলক্ষে সুলভ মূল্যের মাংস বিক্রির জন্য গরুগুলোকে ব্যবহার করা হবে। আমরা তা দিয়ে দিয়েছি। পরবর্তীতে কী হয়েছে, তা তো আমি বলতে পারব না।”

একথা বলতে বলতেই মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের পরিচালক মনিরুল।

গত এপ্রিল মাসে প্রাণিসম্পদ মেলায় ১ হাজার ৩০০ কেজি ওজনের এই গরু ওঠায় সাদিক অ্যাগ্রো। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

ওই নির্দেশনা কোথা থেকে এসেছিল, কারা দিয়েছিল- এ প্রশ্নের উত্তর জানতে এরপর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে সকাল সন্ধ্যা। তাদের কেউই এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা কিছু তথ্য দিয়েছেন।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “প্রাণিসম্পদের কাছে এই গরুগুলো আসার সঙ্গেসঙ্গেই তা চলে যায় সাদিক এগ্রোতে। কীভাবে গেছে, কার নির্দেশে গেছে, তা বলব না। কিন্তু এতটুকু শুধু বলতে পারি খুব উপরের মহলের নির্দেশে এ ঘটনা হয়েছে।”

এসব তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, বিমানবন্দরে জব্দ হওয়া শতভাগ ব্রাহমা জাতের সেই গরুগুলোই সাদিক এগ্রো একটি করে হাজির করছে। দাম হাঁকাচ্ছে কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি।

সাদিক এগ্রোর ভাষ্যমতে, এই কোরবানিতে তিনটি শতভাগ ব্রাহমা জাতের গরু তারা বিক্রি করেছে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায়।

প্রজননের মাধ্যমেও কি শতভাগ ব্রাহমা সম্ভব?

বাংলাদেশের অন্য খামারিরা প্রজননের মাধ্যমে এই জাতের গরুর উন্নয়নের চেষ্টা করছে। সাদিক এগ্রোও যদি চেষ্টা করেও থাকে, তাহলে তাদের পক্ষে কি শতভাগ ব্রাহমা জাতের গরু উৎপাদন সম্ভব?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সকাল সন্ধ্যা কথা বলেছে বনশ্রীর সামারাই ক্যাটেল ফার্মের উদ্যোক্তা মো. নিলয় হোসেনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “আমরা তো সরাসরি ব্রাহমার সঙ্গে ব্রাহামার ক্রস করাতে পারি না। তাই এটা একটু কষ্টকর। আমরা নরমালি ব্রাহমার বীজ দিয়ে অন্যান্য জাতের গাভীর সাথে ক্রস করাই। প্রথম দফায় যে ক্রস করানো হয়, তাতে যে বাচ্চার জন্ম হয় তা দেখা যায় ব্রাহমার ৪৫-৫০ শতাংশ ক্যারেক্টার পায়।

“এভাবে চার দফায় গিয়ে ১০০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব। কিন্তু তাও সম্ভব হবে যদি আপনি ভালো বীজ পান। সঙ্গে আপনার জাত উন্নয়নের জন্য ভালো প্রযুক্তিও লাগবে। সব মিললে আপনি কাছাকাছি যেতে পারেন। পুরোপুরি হওয়াটাতে ভাগ্যের সাহায্য আপনার লাগবে।”

সাদিক এগ্রো যেসব গরুকে শতভাগ ব্রাহমা জাতের বলছেন তা নিয়ে সন্দিহান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্প্রসারণ বিভাগের পরিচালক ডা. শাহিনূর আলম।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আমিও দেখেছি কিছু ভিডিও। সেখানে সাদিক এগ্রোর এই ভদ্রলোক দাবি করছেন, এটি ১০০ শতাংশ ব্রাহমা। কিন্তু এটা সম্ভব না। আমার মনে হয়, তিনি দাম বাড়ানোর জন্য এ ধরনের কথা বলেছেন। তার মুখের কথায় কারও বিশ্বাস করা উচিৎ না।”

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, “আমি শুনেছি সেই গরু বিক্রি হয়ে গেছে। যিনি কিনেছেন তার উদ্দেশে আমি বলব, আপনি কোটি টাকার গরু কিনতে পারলেন। কিন্তু ১০ হাজার টাকা খরচ করে কনসালটেন্সি নিতে পারতেন, জানতে পারতেন- সাদিক এগ্রো যা দাবি করছে তা সঠিক কি না?”

গরুর দাম এক কোটি টাকা হওয়া সম্ভব কিনা জানতে চাইলে শাহিনূর বলেন, “সম্ভব। কিন্তু সেটা যদি হয়, প্রজননের জন্য ব্যবহারকৃত গরু। যার রেজাল্ট ভালো, বীজ ভালো তার ক্ষেত্রে। সবার জন্য না। মাংসের জন্য কিছু বিশেষ জাত বাদে অন্যগুলো কোটি টাকা অসম্ভব।

“জাপানের কোবে বিফের দাম এরকম পড়ে। কারণ ওর মাংস বিশেষ। মাংস ও চর্বির লেয়ার সুন্দর করে মার্বেলের মতো তৈরি হয়। তাই এর দাম অনেক পড়ে। কিন্তু এই গরুর মাংস তো মার্বেল বিফ না। তাহলে কীভাবে এর দাম কোটি টাকা হয়?”

গত ১৬ জুন সাদিক এগ্রোর ফেইসবুক পেইজে এই ছবিটি শেয়ার করা হয়।

বিভ্রান্ত হচ্ছে প্রান্তিক খামারিরা

বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে পড়াশোনা করেছেন আহসানুল কবির ডালিম। পড়াশোনা শেষে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজও করেন। কিন্তু পরে কৃষির প্রতি টানে ফিরে যান তার গ্রামের বাড়ি কাজী নুরুইল। সেখানে শুরু করেন কৃষিকাজ। ছোট একটি গরুর খামারও আছে তার।

ডালিম মনে করেন, নানা চটকদার বর্ণনা দিয়ে মুখে মুখে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে গরুর। এর মাধ্যমে বিভ্রান্ত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা; বড় গরু পালায় আগ্রহী হয়ে পড়ছে তারা। কিন্তু দাম পাচ্ছে না। অনেক সময় অবিক্রিতও থাকে এসব বড় গরু।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “প্রান্তিক কৃষকরাও তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখছে। আবার শুনছে এত দামি দামি গরু বিক্রিও হয়ে যাচ্ছে। এতে তারাও বিভ্রান্ত হচ্ছে। গ্রামের সবাই এখন বড় গরু পালতে আগ্রহী হয়ে পড়ছে। তাতে সমস্যা নাই।

“কিন্তু সেও ভাবছে এই ধরনের দাম সে পাবে। কিন্তু তা তো আসলে বাস্তবে হয় না। ফলে, সে বড় করে ঢাকার সঙ্গে মিলিয়ে অনেক টাকা চায়, কিন্তু সে তা পায় না। এভাবে সে লসে পড়ে। কারণ অনেক সময় এই গরু বিক্রিই হয় না।”

ডালিমের সন্দেহ, পরিকল্পিতভাবে দেশ থেকে দেশি গরু সরিয়ে দেওয়ার জন্যই এসব কাজ করছে সাদিক এগ্রোর মতো খামারগুলো। যেন প্রান্তিক পর্যায়ে কোনও গরু লালন-পালন না হয়, গরুর ব্যবসাও যেন সিন্ডিকেট করা যায়- সেটাই লক্ষ্য তাদের।

ডালিম সাদিক এগ্রোকে খামার বলতেও নারাজ। তিনি মনে করেন, এরা মূলত ‘মজুতদার’।

তিনি বলেন, “এরা তো কেউ ফার্ম না। এরা গরু স্টক করে। রমজানের সময় বিভিন্ন হাট থেকে সিন্ডিকেট করে গরু কিনে। তারপর এসব গরুকে চিকেন ফিড ও জন্ম নিরোধ পিল মিলিয়ে খাওয়ায়।

“চিকেন ফিডে প্রোটিন বেশি হওয়ায় গরুটি দুই-তিন মাসের মধ্যে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হয়ে যায়। আর গরু দেখতে চকচকে সুন্দর হয়, তারা সেই গরু প্রেজেন্ট করে। তারপর এরা ভিডিওতে এসে বলে প্রাকৃতিক ঘাস খাওয়ানোর জন্যই গরু এত সুন্দর।”

তবে গরুকে এ ধরনের খাবার খাওয়ানো নিষিদ্ধ।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. মাহবুবুল আলম ভূঁঞা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “শোনা কথায় বিশ্বাস করা যাবে না। কিন্তু কেউ যদি তা করে থাকে তা অন্যায়। আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরা তদন্ত করে দেখব।”

মাংসের বাজারে প্রভাব

গরুর দানাদার খাদ্যের দাম গত দু বছর ধরে বাড়তি।

সাদিক এগ্রোর মতো খামারগুলো এখন যেসব কর্মকাণ্ড করছে তাতে গরুর মাংসের বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা ঢাকার শাহজাহানপুরের আলোচিত ব্যবসায়ী ‘খলিল গোস্ত বিতান’ এর মালিক মো. খলিলুর রহমান খলিলের।

গত নভেম্বর মাসে গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা বা তারও বেশি ছিল বেশিরভাগ বাজারে। সেই চড়া দামের মাঝে ১৯ নভেম্বর তার দোকানে ৫৯৫ টাকা দরে মাংস বিক্রি শুরু হয়। তার এই সিদ্ধান্ত রীতিমতো ঝড় তোলে। কম দামে মাংস কিনতে প্রতিদিন খলিলের দোকানে ভিড় বাড়তে থাকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও খলিলের এই উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলে। খলিলের দেখাদেখি অন্যান্য এলাকার মাংস বিক্রেতাদের মধ্যেও গরুর মাংসের দাম কমানোর প্রবণতা দেখা যায়।

খলিল বলেন, “আমাদের দেশে মুসলিম মানুষ বেশি। আমাদের কিছু একটা হলেই গরুর মাংস লাগে। শুধু কোরবানিতেই চাহিদা বাড়ে তা তো না। আমাদের সারা বছরই গরুর চাহিদা আছে। কিন্তু মার্কেট নষ্ট করে ফেলছে এরা (সাদিক এগ্রো)।

“৩ মণ থেকে সাড়ে ৩ মণের মাংসওয়ালা গরু তো বাজারেই নাই। এদের ভাইরাল ভিডিও দেখে সবাই বড় গরু করতে চায়। ঢাকার বেশিরভাগ মাংস ব্যবসায়ী দিনে সর্বোচ্চ ৪ মণ মাংস বিক্রি করতে পারে। এই সাইজের গরু না থাকায় আমাকে ৬-৮ মণের গরু কিনতে হচ্ছে।”

তার ভাষ্যমতে, ঢাকার অনেক বিক্রেতা বাধ্য হয়ে বড় গরু কিনে বিপাকে পড়ছেন, মাংসের দাম বাড়তি রাখছেন।

খলিল বলেন, “মাংস ব্যবসায়ী জানে সে একদিনে এই গরু বিক্রি করতে পারবে না। পরেরদিন গেলেই কিছু মাংস খারাপ হয়ে যাবে। সেটা হিসাব করে দাম বাড়িয়ে তাকে মাংস বিক্রি করতে হয়, যেন লস না হয়।”

বড় গরু পালায় প্রান্তিক কৃষকদের আগ্রহ বাড়া নিয়ে বগুড়ার ছোট খামারি ডালিমের সঙ্গে একমত ঢাকার এই মাংস ব্যবসায়ী।

খলিল বলেন, “এ ধরনের দাম দেখে প্রান্তিক কৃষকরাও বড় গরু পালন করছে। সবাই মনে করে কোরবানিতে গরু বিক্রি করলে বেশি টাকা পাওয়া যাবে। ফলে সারা বছর আমাদের যে মাংস লাগে তা কিন্তু দিনে দিনে শর্ট পড়তাছে। সামনে আরও পড়বে। তখন দেখবেন দাম আরও বেড়ে যাবে মাংসের।”

সাদিক এগ্রোসহ এ ধরনের খামারগুলোর এই প্রবণতা নিয়ে কথা হয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামানের সঙ্গে।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “সরকারের নির্ধারিত দাম ঠিক করা আছে গরুর মাংসের। কিন্তু এ ধরনের অস্বাভাবিক দাম বাজারের জন্য খারাপ। আমরা এ বিষয়গুলো দেখব। বাজার কোনও কারণে অস্থির হলে তা ভোক্তাদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হবে।”

এখন নিশ্চুপ ইমরান

অতীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে খুবই আগ্রহী দেখা গেছে সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনকে।

এই কোরবানির ঈদের আলোচিত ছাগলকাণ্ডের ছাগলটি তার খামারের। ১৭৫ কেজি ওজন, ৬২ ইঞ্চি উচ্চতার ছাগল দেশে সচরাচর দেখা যায় না। সাদিক এগ্রো ছাগলটির দাম হাঁকে ১৫ লাখ টাকা। এত দামের পেছনে ব্যাখ্যা ছিল উন্নত জাত ও বংশ মর্যাদা।

সেই ছাগলটি কিনতে গিয়ে ভাইরাল হন তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাত। সেই ছাগলের রশি ধরে টান পড়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের। ছেলের ছাগলকাণ্ডের পর তিনি হারিয়েছেন এনবিআরের পদ। তার সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

এমন পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিন সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরানকে গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে না। খুব পরিচিত না হলে ধরছেন না ফোন। মোহাম্মদপুর খামারে গিয়ে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

তার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য গত শনিবার থেকে কয়েক দফায় ফোন দেওয়া হয়েছে। একবারও ধরেননি তিনি। তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে বার্তা পাঠানো হয় কয়েকটি অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে।

সেসব প্রশ্ন দেখার পর কোন পোর্টালের হয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাচ্ছি- তাও জানতে চেয়েছেন ইমরান। কিন্তু সেসব প্রশ্নের উত্তর দেননি। সব মিলে গত ৪ দিনে তাকে অর্ধশতাধিক ফোন কল করা বা বার্তা পাঠানো হলেও তার কোনও সাড়া মেলেনি।

অথচ ইফাতের ছাগল কেনার পরও সকাল সন্ধ্যার ফোনে সাড়া দিয়েছিলেন ইমরান; কথাও বলেছিলেন। 

খামারের পাশে খালে ময়লা না ফেলানোর জন্য অনুরোধ সম্বলিত বিলবোর্ড। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

সাদিক এগ্রোর যাত্রা শুরু ২০১০ সালে। তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গরুর মাংস উৎপাদনকারী তারাই।

মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল দখল করে গড়ে উঠেছে এই খামার- এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায় স্থানীয়দেরও কাছ থেকে। তার খামারের পাশে খালে ময়লা না ফেলানোর জন্য অনুরোধ সম্বলিত বিলবোর্ড রয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত