Beta
শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৫

দুদকে বসেই মামলার ‘তদবির’ সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরানের

সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন  সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন।
সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন।
[publishpress_authors_box]

বেআইনিভাবে আমদানি করা ব্রাহমা জাতের গরু কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৫ মাস আগে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সেই মামলার বিষয়ে সোমবার দুপুরে ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে বসে সংস্থাটির পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল হুদার মাধ্যমে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ইমরান হোসেন তদবির করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

যদিও তদবিরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ও বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি ইমরান হোসেন।

একই সঙ্গে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জহিরুল হুদাও। তিনি এ মামলার কোনও দায়িত্বে নেই।

দুদকের এই পরিচালকের দাবি, তার একটি খামার রয়েছে। তিনি বিডিএফএর একজন সদস্য। সংগঠনের প্রয়োজনে তার সঙ্গে আলাপ করতে ইমরান হোসেন দুদকে আসেন।

তবে দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে জানান, ইমরান হোসেন দুদক কার্যালয়ে এসে পরিচালক জহিরুল হুদার কক্ষে যান। সেখানে কিছু সময় তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়। একপর্যায়ে জহিরুল হুদা দুদকের সহকারী পরিচালক ও মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদকে ডেকে নেন।

ওই সময় তাদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে তা জানা না গেলেও তদবির করার অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি কিছুই বলতে পারছি না, আমি বিব্রত। আমাকে এ বিষয়ে কোনও প্রশ্ন না করাই ভালো।”

দুদকের একাধিক কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংস্থাটির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা পদোন্নতি পান। তাদের মধ্যে জহিরুল হুদাও রয়েছেন। তিনি দুদকে বিএনপি সমর্থিত কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুদকে বিএনপি সমর্থিত কর্মকর্তাদের একটি অংশের কাছে মামলার বিষয়ে তদবিরের জন্য যাচ্ছেন পুরনো বিভিন্ন মামলার কোনও কোনও আসামি।

সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান হোসেন তাদের একজন। বেআইনিভাবে ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি করার মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে তাদের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।

সোমবার দুপুরে দুদকের কার্যালয় থেকে বের হলে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা ইমরান হোসেনের কাছে জানতে চান, তাকে মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল কি না।

তিনি বলেন, “মামলার জন্য আজকে আসিনি, এসেছি আমার এক বড় ভাইয়ের কাছে। তিনি (জহিরুল হুদা) ডিরেক্টর পদে আছেন। তাছাড়া তিনি আমাদের অ্যাসোসিয়েশনেরও (বিডিএফএ) সদস্য। তার কাছেই এসেছি।”

বিডিএফএর সভাপতি ইমরানের দাবি, সংগঠনটির সদস্য জহিরুল হুদার সঙ্গে সাংগঠনিক বিষয়েই আলাপ-আলোচনা হয়েছে তার।

তিনি বলেন, “অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করার জন্য এসেছি। আমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আসিনি।”

দুদকের মামলায় জামিনে রয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যেহেতু অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা পড়েনি, তাই এ মামলায় জামিন নেওয়ার প্রয়োজন নেই।”

দুদকের মামলাটি এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে জানতে চাইলে ইমরান বলেন, “এখন পর্যন্ত এই মামলায় আমাকে ডাকা হয়নি। আমাকে তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কলও করেনি।”

একই দাবি করেন দুদকের পরিচালক জহিরুল হুদা। তিনি জানান, ইমরান হোসেন মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে তার কাছে যাননি। তিনি সংগঠনের বিষয়ে কথা বলতে এসেছিলেন।

মামলার বিষয়ে আসামির বক্তব্য নিতে তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদকে নির্দেশ দিয়েছেন, এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জহিরুল হুদা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “না, এটা ঠিক নয়। আমি তদন্ত কর্মকর্তাকে ডেকে কেন বলব আসামির বক্তব্য নিতে? তিনি তো তার তদন্তের অংশে তার মতো করেই বক্তব্য নেবেন। এক্ষেত্রে তার বক্তব্য নিতে আমার বলার তো কোনও প্রশ্নই আসে না।”

১০ বছর ধরে পারিবারিক একটি খামার রয়েছে জানিয়ে দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, “খামারি হিসেবে আমিও ওই সমিতির সদস্য। তিনি (ইমরান) সমিতির নেতা। সমিতির নতুন কমিটি নিয়ে কথা বলতে আমার কাছে এসেছিলেন।”

গত কোরবানির ঈদে ১৫ লাখ টাকার ছাগল কাণ্ডের সূত্র ধরে রাজধানীর মোহাম্মপুরসহ কয়েকটি এলাকায় সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে অভিযান চালায় দুদক।

ওই অভিযানে সাদিক অ্যাগ্রোর খামার থেকে ব্রাহমা জাতের ৬টি গরু উদ্ধার করা হয়, যেগুলো জবাই করে বিক্রি করার শর্তে বিডিএফএকে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার।

পরে গত ১৬ জুলাই ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধ সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে নিলাম না করে ব্রাহমা প্রজাতির ১৫টি গরুসহ সরকারি খামারের ৪৪৮টি গরু বিক্রি, শর্ত ভঙ্গসহ কয়েকটি অভিযোগে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন ও কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দুই পরিচালকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

মামলায় কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের পরিচালক ডা. মো. মনিরুল ইসলাম, পরিচালক (উৎপাদন) ডা. এ বি এম খালেদুজ্জামান, গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের বায়ার কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার (লিভ রিজার্ভ) ডা. ফিরোজ আহমেদ খান, উপ-পরিচালক (লিভ/রিজার্ভ ট্রেনিং অ্যান্ড রিজার্ভ পদ) ডা. এ বি এম সালাহ উদ্দিন ও সাদিক অ্যাগ্রোর আরেক অংশীদার তৌহিদুল আলম জেনিথকে আসামি করা হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত