দশরথ রঙ্গশালায় যে লাল-সবুজের হোলি হয়েছে, সেই শিরোপা-রাঙা মুহূর্তগুলো উপভোগের সৌভাগ্য হয়নি তাদের। তারা গেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার রঙ্গশালায়। সেখানে হচ্ছে এএফসি কংগ্রেস।
৩০ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশের মেয়েরা নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে কাঠমান্ডুতে করে শিরোপা উৎসব। এটা টানা দ্বিতীয় সাফ জয়ের গৌরব। এবং দ্বিতীয়বারের মতো অনুপস্থিত সাফ সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ১৬ বছর ধরে সাফের সভাপতির চেয়ার আঁকড়ে থেকেও কখনও নিজের হাতে ট্রফি তুলে দিতে পারেননি নিজের দলকে।
তার আমলে ছেলেদের ফুটবলে এমন মাহেন্দ্রক্ষণ কখনও আসেনি। অথচ মেয়েরা দুরারোহ সিঁড়ি বেয়ে কোন অতল থেকে উঠে এসেছে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল শৃঙ্গের শিখরে। একবার নয়, টানা দুবার। এরকম বিজয়ের ঐতিহাসিক সন্ধ্যায় নিজেকে রাঙিয়ে নিতে চাইবে যে কোন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তিনি যে সাধারণ নন, তাই তার শিরোপা রাঙা সন্ধ্যার লোভ নেই। নেই দশরথে উপস্থিত থাকতে না পারার অর্ন্তজ্বালাও! যেন সবকিছুরই উর্ধ্বে উঠে গেছেন কাজী সালাউদ্দিন। আশাভঙ্গের ছায়াছবি হয়ে তিনি গত ১৬ বছরে শুধু অন্ধকারে তলিয়ে গেছেন।
নইলে তিন মাসের বেতন বকেয়া রেখে মেয়েগুলোকে কী করে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে পাঠান সালাউদ্দিন! এজন্য তার এতটুকু লজ্জাবোধ হয় না। আর নারী ফুটবলের চেয়ারম্যান, যিনি নিজেকে প্রকান্ড সংগঠক ভাবেন সেই মাহফুজা আক্তার কিরণ ২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন শেষ করে পরদিন কোরিয়ার বিমানে চেপেছেন। মেয়েরা যেমনই থাকুক, ফুটবলের যে হালই হোক, কখনও তাদের ফিফা-এএফসি সফর থেমে থাকেনি। সংকোচহীনতা ও দুর্বুদ্ধিতে কিরণ-সালাউদ্দিন জুটির তুলনা হয় না।
কোরিয়া গেছেন সাফের সেক্রেটারি আনোয়ারুল হক হেলালও। অর্থাৎ বাংলাদেশের এমন বিজয়ের মুহূর্তে ছিলেন না সাফের দুই বাংলাদেশী বড় কর্তা।
তাদের সঙ্গী হয়েছেন বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল। বাফুফে নির্বাচন হয়েছে ২৬ অক্টোবর, তার পরদিনই ছিল নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল ম্যাচ। ভুটানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে বাংলাদেশের হারার কোন শঙ্কা নেই, সেটা দেশের মানুষ তো বটেই, এমনকি ভুটানের লোকজনও দ্বিমত করবে না। সুবাদে সাবিনাদের ফাইনাল খেলা নিয়ে কোন সংশয়-সন্দেহ ছিল না।
দুর্ভাগ্য হলো, সাফের এই ফাইনাল দেশের ফুটবলকর্তাদের এতটুকু টানেনি। যে নেপালকে দুই বছর আগে হারিয়ে প্রথম শিরোপা জিতেছিল, তাদের বিপক্ষেই বাংলাদেশের আরেকটি ফাইনাল। সুবাদে শিরোপার হাতছানি, রোমাঞ্চ সবই ছিল দশরথের এই ফাইনালকে ঘিরে। সম্ভাব্য সব রোমাঞ্চ এড়িয়ে নতুন সভাপতিও ঝাঁকের কৈ হয়ে চলে গেছেন কোরিয়ায়। অথচ কাঠমান্ডুতে হাজির হয়ে তাবিথ আউয়াল নিজের ফুটবল প্যাশনের পরিচয় দিতে পারতেন। এটাই আধুনিক ফুটবলের প্রথা। ফুটবল বিশ্বে কোন এফএ বা ক্লাব সভাপতিকে খুঁজে পাবেন না যিনি তার দলের ফাইনাল খেলা বাদ দিয়ে অন্য কিছুতে মনযোগী হচ্ছেন।
এএফসি কংগ্রেস হলেও বাংলাদেশের ফাইনালের চেয়ে তো বড় নয়। এটা এএফসির বার্ষিক সাধারণ সভা, প্রতি বছরই এমন হয়ে আসছে। কিছু আলোচনা, সবার সঙ্গে আলাপ-পরিচয় আর খাওয়া-দাওয়া। এবার কোরিয়ায় শুরু হয়েছে ৩০ অক্টোবর, চলবে ১ নভেম্বর পর্যন্ত। কংগ্রেস শুরুর রাতে দশরথে হাজির থেকে শিরোপার সৌরভ মেখে তাবিথ আউয়াল বিজয়ীর বেশে যেতে পারতেন এএফসি সভায়।
সেটা আর হলো কই। বরাবরের মতো মাঠের ফুটবলটাই গৌণ থেকে গেল।