Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

অসময়ে অস্তাচলে সাগরিকার ক্যারিয়ার?

সাগরিকার ক্যারিয়ার কি এখানেই থেমে যাবে?
সাগরিকার ক্যারিয়ার কি এখানেই থেমে যাবে?
[publishpress_authors_box]

কি নিদারুণ সম্ভাবনা নিয়ে মেয়েদের ফুটবলে আগমন মোসাম্মৎ সাগরিকার! মাত্র সাত মাসও হয়নি জাতীয় দলে অভিষেক। কিন্তু এরই মধ্যে যেন অজানা এক কালবৈশাখী ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যেতে বসেছে তার ফুটবল ক্যারিয়ার। কে জানে, হয়তো এবারই শেষ হয়ে যেতে পারে সাগরিকার ফুটবল অধ্যায়! নারী ফুটবলের চলমান সঙ্কটে বিদ্রোহী ১৮ জনের সবচেয়ে কনিষ্ঠ যে তিনিই।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফে সাগরিকা প্রথম আলো কাড়েন। ওই টুর্নামেন্টে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত ও বাংলাদেশ। সেবার টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জেতেন ঠাকুরগাঁওয়ের কিশোরী। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় জাতীয় দলে অভিষেক হয় সাগরিকার।

গত বছর ২৪ জুলাই ভুটানের বিপক্ষে প্রথম প্রীতি ম্যাচে নেমেই নিজেকে চিনিয়েছিলেন এই স্ট্রাইকার। বয়সভিত্তিক দলের মতোই জাতীয় দলেও নিজেকে অপরিহার্য করে তোলেন সাগরিকা। বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেকটা রাঙিয়ে তোলেন হ্যাটট্রিক করে।

অপ্রতিরোধ্য মোসাম্মৎ সাগরিকাকে এভাবে আর নাও দেখা যেতে পারে।

সেই সাগরিকা চলমান আন্দোলনে সিনিয়রদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। কোচ পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলন করবেন না বলে পণ করে বসে আছেন। যদিও বাফুফের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যারা অনুশীলনে আসবেন তাদেরকে স্বাগত জানানো হবে। এমনকি নতুন করে যে ৩৬ জন ফুটবলারের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাফুফে, সেই সুযোগ দেওয়া হবে বিদ্রোহী ফুটবলারদেরও।

কিন্তু সাবিনা খাতুন, সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্দারা নিজেদের দাবিতে অনড়। ওদিকে পিটার বাটলারও ২৬ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ফিফা প্রীতি ম্যাচের জন্য বাকিদের নিয়েই অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নারী দলকে দেওয়া হবে একুশে পদক। সেই পর্যন্ত হয়তো বাফুফের ক্যাম্পে থাকতে পারবেন এই বিদ্রোহী কন্যারা। এরপর বাফুফে তাদের বিরুদ্ধে আনতে পারে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ। হয়তো দীর্ঘদিনের জন্য ছুটি দেওয়া হতে পারে। অথবা আরও বড় শাস্তি আসতে পারে। যে শাস্তি থেকে সাগরিকা রেহাই নাও পেতে পারেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের রাঙ্গাটুঙ্গী ফুটবল একাডেমি থেকে উঠে এসেছেন সাগরিকা। বাবা লিটন আলী কখনও চাইতেন না মেয়ে ফুটবলার হোক। কিন্তু বাবার নিষেধ উপেক্ষা করে ফুটবল খেলে একটু একটু করে পরিচিতি পাচ্ছিলেন সাগরিকা। ফুটবলের সুবাদে দরিদ্র বাবার পরিবারেও স্বচ্ছলতা আসা শুরু করে।

ভুটানের চাংলিমিথান স্টেডিয়ামে অনুশীলনে ব্যস্ত সাগরিকা।

কিন্তু সাগরিকা ফুটবল না খেললে বাফুফের কেন্দ্রিয় চুক্তি থেকে বাদ পড়বেন। পাশাপাশি ঘরোয়া ফুটবলেও হয়তো দেখা যাবে না তাকে। যে কারণে চুক্তির বাইরে আর কোনওভাবে উপার্জনের সুযোগ থাকবে না। গ্রামে গিয়ে হয়তো সাগরিকাকে চা দোকানী বাবার ওপর নির্ভরশীল হয়েই বাকিটা জীবন কাটাতে হবে। না হয় দ্রুতই তাকে বিয়ে দিয়ে দিতে পারেন বাবা। এর মানে ফুল হয়ে ফোটার আগেই হয়তো ঝরে পড়বে সাগরিকার কুঁড়ি!

পুরো বিষয়টা নিয়ে সাগরিকার আবিষ্কারক রাঙ্গাটুঙ্গী ফুটবল একাডেমির কোচ তাজুল ইসলাম প্রচন্ড হতাশ। তার হাতে গড়া ফুটবলারের ক্যারিয়ার এভাবে চোখের সামনে শেষ হয়ে যাবে, এটা মানতে পারছেন না তাজুল ইসলাম। গত কয়েকদিন ধরে নানাভাবে সাগরিকাকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। চেষ্টা করছেন তাকে মাঠে ফেরানোর। কিন্তু সাগরিকা অনড়।

হতাশ তাজুল ইসলাম বলেন, “এই মেয়ের জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ওর কথা ভেবে চোখে পানি চলে আসে। ওর পরিবারের সঙ্গে অনেক লড়াই সংগ্রাম করে ওকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। প্রথম যখন শুনলাম সে ওই দলে (বিদ্রোহী ফুটবলারদের সঙ্গে) তখন খুব খারাপ লাগল। অনেকে আমাকে বলেছেন, যেন সাগরিকাকে আমি বোঝাই। সারা দেশ থেকে অসংখ্য টেলিফোন পাই ওর জন্য। “

বাফুফের কর্মকর্তাদেরও সাগরিকার জন্য একটা আলাদা রকম ভালোবাসা আছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও সাগরিকার মতো প্রতিভাবান ফুটবলারকে হারাতে চায় না। তাজুল ইসলামও সেটা জেনে আরও কষ্ট পাচ্ছেন, “আমাকে বাফুফে থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, যেন সাগরিকাকে বোঝাই। ওর জন্য তাদের মনেও সফট কর্নার আছে। আমি ওকে বলেছি। অবাক করা ব্যাপার হলো, ও আমাকে বোঝাচ্ছে, স্যার আমি যেটা করেছি ঠিক করেছি। অথচ ওর জন্য বাফুফে সভাপতির কাছে নিজে সরি বলেছি। আজও বাফুফের একজন আমাকে বলেছেন, আপনি সাগরিকাকে বাড়িতে নিয়ে ভালোভাবে বোঝান। এখানে বাফুফের আর কী করার আছে? ”

শামসুন্নাহার জুনিয়রের সঙ্গে গোল উদযাপনে সাগরিকা।

সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকার, মাসুরা পারভীনদের মতো দীর্ঘ ক্যারিয়ার নয় সাগরিকার। ফুটবলের রঙিন দুনিয়ায় মাত্রই পা রেখে সাফল্যের দেখাও মিলছিল। কিন্তু একটা অপরিপক্ক সিদ্ধান্তে এমন প্রতিভাবান ফুটবলারের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাক, তা শুধু বাফুফে নয়, দেশের কোনও ফুটবলপ্রেমীই নিশ্চয় চাইবেনা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত