চট্টগ্রামে হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ সরকারি আইন কর্মকর্তা ছিলেন না। তিনি বিএনপির সমর্থক ছিলেন বলে জানিয়েছেন এই দলটির সমর্থক আইনজীবীরা।
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হলে সেখানে বিক্ষোভ করে তার অনুসারীরা। তখন পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে, যা আদালত পাড়ার আশপাশেও ছড়িয়ে পড়ে।
সেই সংঘাতের মধ্যেই ধারাল অস্ত্রের আঘাতে খুন করা হয় আইনজীবী সাইফুলকে। তিনি সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ছিলেন বলে আইনজীবীদের কেউ কেউ জানিয়েছিলেন।
সাইফুল হত্যার নিন্দা জানিয়ে সেদিন জামায়াতে ইসলামীর বিবৃতিতে তাকে এপিপি উল্লেখ করার পাশাপাশি ওই দলের সদস্য বলেও দাবি করা হয়েছিল।
জামায়াতে আমির শফিকুর রহমানের দেওয়া সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, “আমার প্রিয় দলীয় সহকর্মী চট্টগ্রাম জজ আদালতের এপিপি তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ খুনের ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত।”
তবে চট্টগ্রামের আদালতে কর্মরত সরকারি কৌঁসুলিরা এখন জানিয়েছেন, সাইফুল এপিপি ছিলেন না।
সাইফুল যে এপিপি ছিলেন না, তার প্রমাণ মিলে অক্টোবরে প্রকাশিত আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগের আদেশেও।
অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় বসে জেলায় জেলায় নতুন সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া শুরু করে।
গত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদালতের জন্য ৩৪৫ জন আইনজীবীকে চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং এদের অধীন আদালতগুলো, বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ট্রাইব্যুনালে সরকারি আইন কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তাদের অধিকাংশ বিএনপি-জামায়াত সমর্থক। তবে সেই তালিকায় সাইফুলের নাম নেই।
চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম বারের নিয়মিত আইনজীবী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে চট্টগ্রামের আদালতে প্র্যাকটিস করছেন। গত বছর হাই কোর্ট বারে সনদ পেয়েছেন।”
রাজ্জাক বলেন, গণমাধ্যমে সাইফুলকে এপিপি হিসাবে উল্লেখ করা হলেও তিনি তা ছিলেন না।
তবে চট্টগ্রাম বারের এক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেতে তিনি (সাইফুল) তদবির করেছিলেন, কিন্তু পাননি। এবার নতুন একটি তালিকা তৈরি হচ্ছে বলে শুনেছি, সেখানে তার নাম আছে।”
সাইফুল বিএনপির সমর্থক ছিলেন বলে রাজ্জাকসহ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামে যুক্ত অন্য আইনজীবীরাও জানান।
এক আইনজীবী নেতা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সাইফুল ইসলাম সরাসরি বিএনপির কোনও পদে ছিলেন না। তবে আইন পেশা সংশ্লিষ্ট বিএনপিপন্থি বিভিন্ন সংগঠনে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।”
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন সাইফুল। পরিবারে সাত ভাই–বোনের মধ্যে সাইফুল তৃতীয় ছিলেন বলে জানান তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন সেশন জজ কোর্টের এপিপি মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী।
সাইফুলকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন জানিয়ে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের নেতা রাজ্জাক বলেন, তার তিন বছরের একটি মেয়ে আছে। তার স্ত্রী এখন সন্তানসম্ভবা।
অসুস্থতাজনিত কারণে সাইফুল বাঁকা হয়ে হাঁটতেন জানিয়ে রাজ্জাক বলেন, “জন্মগতভাবেই হয়তে এই সমস্যা ছিল। সেই মানুষটিকে এভাবে নৃশংসভাবে খুন করা হলো!”
তিন দফা জানাজা শেষে সাইফুলকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে বুধবার দাফন করা হয়।
সাইফুল হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সরব চট্টগ্রামের আইনজীবীরা। সেদিনের ঘটনায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ, যাতে আসামি করা হয়েছে দেড় হাজার জনকে। ২৮ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
সাইফুলকে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ভিডিও দেখে চিহ্নিত করে ছয়জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। তবে তাদের পরিচয় জানানো হয়নি।