সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য উপদেষ্টা বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং তার পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের ৩৫৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের আবেদনে সোমবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দিয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় সালমান এফ রহমানকে। তারপর হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, সালমান এফ রহমান ও অন্যদের বিরুদ্ধে প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণপূর্বক আত্মসাতসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সালমান এফ রহমান, তার পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠদের নামে ব্যাংক হিসাবগুলোর তথ্য পাওয়া যায়।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তারা এসব ব্যাংক হিসাব হস্তান্তর/স্থানান্তর/রূপান্তর করার চেষ্টা করছেন। এতে সফল হলে অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় মামলা দায়ের, চার্জশিট দাখিল, আদালত কর্তৃক বিচার শেষে সাজার অংশ হিসেবে অপরাধলব্ধ আয় থেকে অর্জিত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণসহ সবে উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।
সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সালমান এফ রহমান এবং তার পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের নামে থাকা ৩৫৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।
সাবেক এমপি হেনরীর ৬৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
একই আদালত সোমবার সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর ৬৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছে। এসব ব্যাংক হিসাবে ২০ কোটি ৬২ লাখ ৩৬ হাজার ৭০২ টাকা রয়েছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসিফ আল মাহমুদ তার ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আবেদন করেন।
গত ২৫ নভেম্বর জান্নাত আরা হেনরী, তার স্বামী শামীম তালুকদার ও মেয়ে মুনতাহা রিদায়ী লামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
গত ১২ জানুয়ারি দুদকের আবেদনে আদালত হেনরীর ৫০ বিঘা জমি এবং তার মালিকানাধীন ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ১৬টি গাড়ি জব্দের আদেশ দেয়। একই সঙ্গে তার ১৯টি ব্যাংক হিসাব ও চারটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়।
গত বছরের ২২ ডিসেম্বর জান্নাত আরা হেনরী, তার স্বামী সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম তালুকদারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক।
এ মামলায় গত ১ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে দুদক। পরে ৬ জানুয়ারি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।
শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসা হেনরী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য হন। তিনি ২০০৮ সালে সহকারী শিক্ষক থেকে সরাসরি সংসদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ব্যাপক সাড়া ফেললেও বিএনপির প্রার্থী রুমানা মাহমুদের কাছে হেরে যান তিনি।
ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর হেনরী হন সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। সেসময় ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি এবং অন্যান্য ঘটনায় তার নাম আলোচনায় আসে। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে দুদুক তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হেনরী ও তার স্বামী সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. লাবু তালুকদার মৌলভীবাজারের এক বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।
সেখান থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর র্যাব তাদের গ্রেপ্তার করে ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জ সদরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে করা মামলায়।
এর আগে ২০ আগস্ট হেনরীর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।