সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা হয়েছে চট্টগ্রামে।
এই মামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে সমাবেশ করেছে সংগঠনটি। আগামী সোমবারের মধ্যে মামলা প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেয় সংগঠনটির নেতারা।
পুলিশ, র্যাব ও সেনা সদস্যদের বেষ্টনির মধ্যে দুই ঘণ্টা ধরে সমাবেশ চলে।
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন ফিরোজ খান নামের এক ব্যক্তি। তিনি নগরীর মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির নেতা, চকবাজার মতি টাওয়ার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি তিনি।
গত ২৫ অক্টোবর লালদীঘির মাঠে সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশকে কেন্দ্র করে এই মামলাটি হয়েছে।
বাদীর অভিযোগ, সেদিন নিউ মার্কেট মোড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া রঙের আরেকটি পতাকা টানিয়ে জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়, যা রাষ্ট্রদ্রোহের মামিল।
মামলায় মোট ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী ছাড়াও ইসকন প্রবর্ত্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ দাশ ব্রহ্মচারীর নাম রয়েছে আসামির তালিকায়।
দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হিন্দুসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ২৫ অক্টোবরের ওই সমাবেশ থেকে ৮ দফা দাবি তুলে তার সমর্থনে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় সমাবেশ এবং ঢাকামুখে লং মার্চের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
সেই সমাবেশে চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী বলেছিলেন, “এ বঙ্গের উত্তরাধিকার আমরা। আমরা এ ভূমির ভূমিপুত্র, উড়ে আসিনি। আমরা মোগল-ব্রিটিশ পর্তুগিজ নয়, আমরা এ ভূমির সন্তান। আমাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করবেন না। কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ ভূমি সাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্য হবে। এ ভূমি আফগানিস্তান, সিরিয়া হবে। বাংলাদেশের কোনও গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না।”
সেই হুঁশিয়ারির পাঁচ দিন পরই পতাকা টানানোর ঘটনায় তাকে আসামি করে মামলা হলো।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, লালদীঘি মাঠের সমাবেশের দিন ২৫ অক্টোবর নিউ মার্কেটে জাতীয় পতাকার ওপর ‘সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের’ গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা স্থাপন করে দেওয়া হয়, যা রাষ্ট্রের ‘অখণ্ডতাকে অস্বীকার করার শামিল’।
“জাতীয় পতাকার ওপরে ধর্মীয় পাতাকা উত্তোলন করে আসামিরা দেশের ভেতর অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশকে অকার্যকর করার রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কাজে লিপ্ত আছে।”
সেই মামলায় বুধবারই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম নগরীর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশ।
এই মামলা প্রতিক্রিয়া জানতে চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে সকাল সন্ধ্যার পক্ষ থেকে ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ভারতীয় এক টিভি চ্যানেলে তিনি মামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে মামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় জামালখানের চেরাগি পাহাড় মোড়ে সমাবেশ ডাকে সনাতন জাগরণ মঞ্চ। দুপুর ১টা থেকেই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন।
তবে পুলিশ-র্যাব-সেনাবাহিনী সেই মোড় আগে থেকে ঘিরে ছিল। তাদের বেষ্টনির মধ্যেই কয়েক হাজার নারী-পুরুষ সেই সমাবেশে যোগ দেন।
সমাবেশে ইসকন নেতা গৌরাঙ্গ দাস বলেন, “রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রাষ্ট্রপ্রধান দেবেন। কিন্তু মামলার বাদী এই ফিরোজ খান কে? কোন জায়গা থেকে এসেছে?-এসব জানতে চাই।”
মামলা প্রত্যাহারে আগামী সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে তিনি বলেন, “তা না হলে এবং এই মামলা নিয়ে জলঘোলা কেউ করতে চাইলে আমরা ওইদিন বৃহৎ কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হব।”
সমাবেশে চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জুয়েল আইচ বলেন, “গত ২৫ তারিখ লালদীঘির ময়দানের মহাসমাবেশ থেকে প্রমাণ করেছি আমরা শান্তিপ্রিয়। এরপরও রাষ্ট্রযন্ত্র কাদের মদদে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে।
“আর যদি আমাদের গ্রেপ্তার করতে হয়, তাহলে নতুন করে জেলখানা নির্মাণ করে ফেলুন। হিন্দু সমাজ এখন ঐক্যবদ্ধ। হিন্দু সমাজ হাতে হাত রেখে লড়াই করতে শিখেছে। আর আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে প্রয়োজনে চট্টগ্রামের সিটি গেট বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
সমাবেশ থেকে শুক্রবার বিকালে ৬৪ জেলায় সমাবেশ এবং রবিবার জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচিও ঘোষণা করে সনাতন জাগরণ মঞ্চ।