শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে প্রথমে ৪০তম এসআই ক্যাডেট ব্যাচের ২৫২ প্রশিক্ষণার্থীকে অব্যাহতি দেওয়ার পর নতুন করে দুই দফায় আরও ৫৯ জনকে একই অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে ক্লাসে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর মধ্যে গত ২১ অক্টোবর শোকজ করা হয় ১০ জনকে। তবে যে ক্লাসে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই ক্লাসের প্রশিক্ষক পুলিশ একাডেমির সাবেক প্রিন্সিপাল মো. নাজিবুর রহমান দাবি করেছেন, তার ক্লাসে বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি।
নাশতা না খেয়ে হইচই করে মাঠের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির কারণ দেখিয়ে সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত ২৫২ ক্যাডেট এসআইকে গত সোমবার অব্যাহতি দেওয়া হয়। একইদিন প্রশিক্ষণ ক্লাসে বিশৃঙ্খলা করার অভিযোগে কারণ দর্শানোর চিঠি পান ১০ জন। এরপর গত বৃহস্পতিবার একই অভিযোগে ৪৯ জনকে শোকজ লেটার দেওয়া হয়।
এই প্রেক্ষাপটে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত এসআইরা রয়েছেন আতঙ্কে। এতটা পথ পেরিয়ে আসার পর তাদের চাকরি টিকবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় তারা।
গত ২১ অক্টোবর ১০ জনকে দেওয়া শোকজ লেটারে অভিযোগ করা হয়েছে, গত ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় অতিথি শিক্ষক ও বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির সাবেক প্রিন্সিপাল মো. নাজিবুর রহমানের ক্লাসে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা।
তবে এই অভিযোগ সঠিক নয় বলে সকাল সন্ধ্যার কাছে দাবি করেছেন সাবেক প্রিন্সিপাল মো. নাজিবুর রহমান। তিনি বলেছেন, “আমি ক্লিয়ার কাট বলতে পারি যে আমার ক্লাসে কোনও বিশৃঙ্খলা হয়নি।”
পুলিশ একাডেমির দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিসে বলা হয়েছে, “আপনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা, রাজশাহীতে ৪০তম ক্যাডেট এসআই/২০২৩ ব্যাচে গত ৫/১১/২০২৩ খ্রিঃ হতে এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণরত আছেন।
“গত ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় জিমনেসিয়ামে ক্যাডেট এসআইদের “Experience Sharing in Order to face Political Aimed” বিষয়ে অতিথি বক্তা হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির সাবেক প্রিন্সিপাল মো. নাজিবুর রহমানের স্যারের ক্লাস ছিল। উক্ত ক্লাসে ক্যাডেট এসআই প্রশিক্ষণার্থীদের শৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অতিথি বক্তার সহযোগী প্রশিক্ষক হিসেবে শিশির কুমার চক্রবর্তী, মো. আব্দুল বারী, মো. মাহাবুব উল্লাহ ও রাজিব কুমার কুন্ডু উপস্থিত ছিলেন।
“অতিথি বক্তা ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার পূর্বে অর্থাৎ সন্ধ্যা ৭টায় সিটে বসার সময় আপনি শৃঙ্খলার সাথে না বসে এলোমেলোভাবে বসে হৈ চৈ করতঃ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন।
“এসময় পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) শিশির কুমার চক্রবর্তীসহ তার সঙ্গীয় অন্যান্য ইন্সপেক্টরগণ বারংবার শৃঙ্খলার সাথে বসার কথা বললেও আপনি উপস্থিত সহযোগী প্রশিক্ষকদের নির্দেশ অমান্য ও কর্ণপাত না করে বসা নিয়ে হৈ চৈ ও বিশৃঙ্খলা করতে থাকেন।”
এত আরও বলা হয়, “ক্লাস চলাকালীন অতিথি বক্তার পাঠদানে আপনার কোন মনোযোগ ছিল না এবং পাশাপাশি বসে কথাবার্তা বলতে থাকেন। আপনার এমন কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৩ সনের পিআরবি বিধি 741-iii উপবিধি b (iii) মোতাবেক আপনাকে কেন চলমান মৌলিক প্রশিক্ষণ হতে অব্যাহতি প্রদান করা হবে না তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা এ কৈফিয়ত তলবনামা প্রাপ্তির পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারী বরাবর দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।”
এ বিষয়ে ওই ক্লাসের অতিথি শিক্ষক মো. নাজিবুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমার অবস্থানকালে ছাত্ররা বা ছাত্রীরা যারা ছিল অর্থাৎ ক্যাডেট এসআই, তারা কেউ কোনও গণ্ডগোল করেনি। বরং আমি যেটা বলতে চাই যে, আলহামদুলিল্লাহ তারা ক্লাসটা উপভোগ করেছে এবং আমি বলব যে তারা রেসপনসিভ ছিল।
“রেসপনসিভ বলতে আমি যেটা বোঝাচ্ছি যে, ইনটারেকশন ইন বিটউইন দ্য লেকচারার অ্যান্ড দ্য স্টুডেন্ট। দ্যাট ওয়াজ দেয়ার, কিন্তু গণ্ডগোলটা কোথা থেকে হলো আই ডোন্ট নো। আমিতো কোনও গণ্ডগোল দেখিনি। বরং আই অ্যাম ভেরি হ্যাপি দ্যাট দে আর ভেরি রেসপনসিভ।”
তিনি বলেন, “আমি যখন পড়াচ্ছিলাম, তারা মাঝে মাঝে প্রশ্ন করেছে, আমি আবার কথা বলেছি। আমি বিশ্বাস করি পার্টিসিপেটরি ক্লাসে। সেই পার্টিসিপেটরি ক্লাস হিসেবে আমি বলব যে, দে ওয়্যার ভেরি রেসপনসিভ। ক্লাসে কোনও বিশৃঙ্খলা জাতীয় কিচ্ছু ঘটেনি।”
ওই ক্লাস নিয়ে ১০ জনকে শোকজ করার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার ক্লাস নিয়ে এত ঘটনা আমি আগে জানতাম না। আজকে একটা পেপারে দেখলাম, ছাত্ররাও ২/১ জন আমাকে ফোন করেছিল, জিজ্ঞাসা করছিল যে, ‘আমরা কী ক্লাসে এরকম কিছু করেছিলাম কিনা?’ আমি বলেছি না। আমার ক্লাসে কোনও গণ্ডগোল হয় নাই। আমার ক্লাসের আগে হয়ে থাকলে, পরে হয়ে থাকলে সেটা আমি আদৌ জানি না।”
তিনি বলেন, “ক্লাস টাইমে কোনও বিশৃঙ্খলা বা তারা (প্রশিক্ষণরত এসআই) আমার কথা শোনে নাই, তারা অন্যমনষ্ক হয়ে হাঁটাহাঁটি কিংবা ঘোরাঘুরি করছিল– এমন কিছুই ঘটেনি। তারা মনোযোগ দিয়েই আমার কথা শুনছিল। একজন লেকচারার হিসাবে আমি বলব, ওই সময় আমার ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যেককে আমি পেয়েছি মনোযোগী হিসেবে। কোনও অবস্থাতেই তারা বিন্দুমাত্র বিশৃঙ্খলা করেছে বলে আমার কোনও অভিযোগ নেই।
“যে অভিযোগটা আনা হয়েছে যে, আমার ক্লাসে বিশৃঙ্খলা হয়েছে– এইটুকুর ব্যাপারে আমি ক্লিয়ার কাট বলতে পারি যে, আমার ক্লাসে কোনও বিশৃঙ্খলা হয়নি। আমি পক্ষপাতিত্বের লোক নই, আমি ন্যায়বিচারের লোক। আমি চাই যে ফেয়ার, আনবায়াসড জাস্টিস হোক।”