সকাল সন্ধ্যা: স্কুলে শিশুদের পাঠ্যক্রম, পাঠদান এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি আমূল বদলে দেওয়া নতুন শিক্ষাক্রমের এক বছর পার হলো। ২০২২ সাল থেকে শুরু হওয়া এই শিক্ষাক্রম ২০২৭ সালে সব শ্রেণিতে প্রয়োগ করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে বড় পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে, ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পরীক্ষা না রাখা, এসএসসির আগে কোনও পাবলিক পরীক্ষা না রাখা। আরেকটা বড় পরিবর্তন হলো, নবম-দশম শ্রেণিতে বিভাগভিত্তিক বিভাজন তুলে দেওয়া। মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের বদলে সব শিক্ষার্থী একই কারিকুলামে ১০টা বিষয়ে লেখাপড়া করবে। বলা হচ্ছে, আগের মুখস্থ নির্ভর পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দিয়ে এখন শিখনমূলক এবং ধারাবাহিক মূল্যায়নভিত্তিক একটা শিক্ষাপদ্ধতি চালু হয়েছে। বদল হয়েছে অনেক কিছুই। প্রথমে আপনার কাছে জানতে চাই, সামগ্রিকভাবে পদ্ধতিগত যে পরির্তন হয়েছে এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
কামরুল হাসান মামুন: প্রথমত কথা বলা দরকার পরীক্ষা আর মূল্যায়ন নিয়ে— এটা লেখাপড়া হোক, খেলাধুলা হোক। খেলাধুলায় আমরা প্রতিযোগিতা করি। সেখানে আমরা ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড হই— অলিম্পিকে, ক্রিকেটে, ফুটবলে ও ওয়ার্ল্ড কাপে প্রতিযোগিতা হয়। ছোটবেলার দৌড় প্রতিযোগিতা, আবার কিছু দূর দৌড়ে হাই জাম্প বা উচ্চলম্ফ— যেখানে একটা বার থাকে, এই বারটাকে অতিক্রম করতে হয়। এসব প্রতিযোগিতা, পরীক্ষা এসব মানুষের ক্রমে নিজেকে উন্নত করা এবং নিজেকে যাচাই করার একটা পদ্ধতি।
পরীক্ষা নাই— এটা খুব বাহাদুরির কথা না। হ্যাঁ, ক্লাস ওয়ান-টু-থ্রি-তে চাপ যেন কম হয়, ওই সময় শিশুরা আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করবে— সেটা ঠিক আছে। ক্লাস নাইন-টেনে আমি পরীক্ষা উঠিয়ে দিব! সবকিছুর একটা অপটিমাইজেশনের প্রয়োজন আছে। এটা হলো একটা দিক। মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমরা ধারাবাহিক মূল্যায়ন করলাম। অর্থাৎ পরীক্ষা নেই, কিন্তু শিক্ষকরা ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিনই মূল্যায়ন করবেন, সে অনুসারে তারা মার্কস দিবেন। এটাও একটা ভালো পদ্ধতি। এই যে বিভাগ উঠিয়ে দিল, এটাও একটা ভালো পদ্ধতি। কিন্তু যেভাবে করা হলো, যা করা হলো, যে পরিবেশে করা হলো— এগুলো কোনওটাই ভালো পদ্ধতি না। এটার কোনও ভালো ফল এই রাষ্ট্র বা আমাদের ভবিষ্যৎ জেনারেশন পাবে না।
ইউ ক্যান আসক মি হোয়াই? মনে করেন, একটা শিশু কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার স্কুলে পড়াশোনা করছে। সেই স্কুলে শিক্ষক আছেন, সেই এলাকার একজন এমপি আছেন, সেই স্কুলে সরকারি দলের নেতারা আছেন, ক্ষমতাবান ব্যক্তি আছেন, আর্থিকভাবে ক্ষমতাবান ব্যক্তি আছেন, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান ব্যক্তি থাকতে পারেন। আমাদের শিক্ষকদের কি এনাফ মেরুদণ্ড আছে যে, ক্ষমতাবান কারও সন্তানকে কম নম্বর দিবেন? খারাপ নম্বর দিবেন? বা শিক্ষকরা কি যথেষ্ট বেতন পান যে, ক্রমমূল্যায়নের জন্য শিক্ষকদের যে শ্রম দিতে হবে, সেই শ্রম দেওয়ার জন্য যে ইচ্ছা শক্তি, ভালোবাসা, লেগে থাকা, সেটা কি তারা দিতে পারবেন? একথা বলছি, কারণ শিক্ষকরা বেতন পান বারো-পনেরো হাজার টাকা। এ টাকায় আজকাল কারও পক্ষে সংসার চালানো সম্ভব নয়। আমি যতটুকু জানি, বেশিরভাগ শিক্ষককে শিক্ষকতার বাইরে নানাভাবে আয় করতে হয়। হয় তার একটা দোকান আছে, নয় কিছু একটা সে করে, না হয় রাজনীতি করে। একটা সেকেন্ড বা থার্ড আর্থিক উপার্জনের ব্যবস্থা তার থাকে। ফলে ইচ্ছা থাকলেও তিনি কেবল শিশুদের পাঠদানের বিষয়ে আন্তরিক থাকতে পারেন না।
সকাল সন্ধ্যা: আপনি ক্ষমতা কাঠামো এবং শিক্ষকদের বেতন ও জীবনমানের কথা বলছেন। আমরা প্রথমটা নিয়ে কথা বলি। আপনার কি মনে হয় না, এতদিন ধরে যে ক্ষমতাকাঠামোর মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে, এখন শিক্ষকের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়ার কারণে আগের ‘স্ট্যাটাস কো’-তে বদলের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে— এখন শিক্ষকরা আগের থেকে বেশি এমপাওয়ার্ড থাকবেন ক্লাস, পরীক্ষা, বা স্কুল পরিচালনার কাজে?
কামরুল হাসান মামুন: দারুণ প্রশ্ন। খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন। ধরুন, ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হলো, কেউ বাসের ছাদে উঠলে তিনি বাস আটকাতে পারবেন, যেকোনও সময় গাড়ির কাগজপত্র চাইতে পারবেন। এই যে ক্ষমতা ট্রাফিক পুলিশকে দিলাম, আর তার বেতন দিলাম ছয় হাজার টাকা। ট্রাফিক পুলিশ করবে কী— এই ক্ষমতাটাকে অর্থ উপার্জনের কাজে ব্যবহার করবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা শিক্ষকতার মান উন্নত করতে, উন্নতমানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে না পারব, অর্থাৎ শিক্ষকদের বেতন কাঠামো উন্নত করতে না পরব ততদিন তাকে যত পাওয়ারই দেই না কেন, সেই পাওয়ার সে ব্যবহার করবে আরও টাকা উপার্জনের জন্য। এখন সে শিক্ষার্থীদের বলবে, আমার কাছ প্রাইভেট না পড়লে আমি তোমাকে বেশি নম্বর দিব না, ত্রিভুজ দিব না।
আমি যখন ক্লাস নাইন-টেনে পড়তাম, আমাদের বায়োলজি এবং ফিজিক্সের প্র্যাকটিকাল ছিল, রসায়নের প্র্যাকটিক্যাল ছিল। এই প্র্যাকটিকাল কখনও করানো হতো না। টাকার মাধ্যমে আমরা নম্বর পেয়ে যেতাম। কলেজেও তাই। এখনও এটা চলে। তার মানে হলো, ক্ষমতা এবং অর্থের মধ্যে যদি সমন্বয় না ঘটে— আমি শুধু ক্ষমতা দিলাম, কিন্তু তার চলার সামর্থ্য দিলাম না, তখন সে মেম্বারের বাসায় গিয়ে বসে থাকবে, সে এমপির কাছে গিয়ে ধর্ণা দিবে— কিছু পাওয়া যায় কিনা, কিছু করা যায় কিনা। অথবা সে প্রাইভেট পড়াবে, অথবা কোচিং সেন্টার খুলবে, আর ছাত্রদের বাধ্য করবে তার কাছেই যেন যায়। যারা যাবে তারা ভালো মার্কস পাবে।
সকাল সন্ধ্যা: তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন, অনেকগুলো বড় পরিবর্তনের যে চেষ্টা করা হয়েছে— সেটা ভালো, কিন্তু যেভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে, সেখানে কিছু জটিলতা আছে। দুটো জটিলতার কথা আপনি বললেন। একটা হচ্ছে শিক্ষকদের বেতন ও শিক্ষকতার মান আর একটি হলো রাজনৈতিক ক্ষমতা কাঠামো…
কামরুল হাসান মামুন: আমি বলছি শুধু শিক্ষাক্রম বদলালে হবে না, এই পদ্ধতি কার্যকর করতে হলে একইসঙ্গে শিক্ষকতার মানেরও গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষকদের বেতন যখন বাড়িয়ে দিব, তখন ভালো মানের ছাত্ররা শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ক্লাসের ভালো মানের ছাত্রদের মনের মধ্যে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন তৈরি করতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত এই দেশের শিক্ষার মানের উন্নয়ন ঘটবে না।
এখন দেখি প্রতিদিনই বিভিন্ন নিউজপেপারে— ওমুকের বিসিএস প্রশাসনে, পুলিশে, ট্যাক্সে চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। আজ পর্যন্ত আমি দেখিনি, শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি পাওয়ার গল্প পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। অর্থাৎ এ ক্যাডার এত অবহেলিত, অথচ এরাও বিসিএস ক্যাডার। যার জন্য শিক্ষা ক্যাডার কেউ পেলেও পরের বছর আবার সে বিসিএস পরীক্ষা দেয়— তার যদি প্রশাসনে হয়। কারণ শিক্ষায় তারা লাঞ্ছিত হয়। এখানে তারা বেতনও ভালো পায় না, সুবিধাও ভালো পায় না। সম্মানও ভালো পায় না। যতক্ষণ পর্যন্ত না এই ক্যাডারকে, স্কুল-কলেজে শিক্ষকতার পেশাকে আমরা উন্নত না করব ততদিন কোনও সমস্যাই দূর হবে না। কারণ আজ এই দেশে যত সমস্যা, সব সমস্যার মূলে হলো আমরা মানুষ তৈরি করতে পারিনি। মানুষ তৈরি হওয়ার প্রাথমিক শর্ত হলো আমাদের কারিগর লাগবে। কারিগর মানে হলো শিক্ষক।
সকাল সন্ধ্যা: তার মানে আপনি চাইছেন, আগে শিক্ষক তৈরি করতে হবে। তারপরে শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন বা উন্নয়ন করতে হবে। বেতন বৃদ্ধি, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারলে আমরা নতুন শিক্ষাক্রমের সুযোগ পাবো— এটাই আপনার মূল কথা?
কামরুল হাসান মামুন: শিক্ষকের বেতন কাঠামো ও জীবনমান তো বাড়াতেই হবে। ইউনেস্কো বলছে, একটি দেশের জিডিপির ন্যূনতম ৬ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়া উচিত। সরকারের যদি সত্যি সত্যিই শিক্ষার মানের উন্নয়নের উদ্দেশ্য থাকত তাহলে শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের আগে শিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা বলত। যে শিক্ষাক্রম আমাদের ছিল, যেটাতে আমরা লেখাপড়া করে এসেছি— সেটা পরিবর্তনের দাবি কি কেউ করেছিলেন? শিক্ষকরা করেছেন? অভিভাবকরা করেছেন? কোনও রাজনৈতিক দল করেছে? সুশীল সমাজ করেছে? ছাত্ররা করেছে? কোথাও তো কোনও দাবি ছিল না। আমরা তো ভালো ছাত্রও পাচ্ছিলাম।
সকাল সন্ধ্যা: শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের দাবি হয়ত ছিল না। কিন্তু শিক্ষা নিয়ে হতাশার কথা তো ছিল এবং আছেও। আমরা অনেককেই বলতে শুনি— শিক্ষা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, শিক্ষার কোনও মান নেই, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রসাতলে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে হতাশা, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা-গবেষণার কোনও ক্ষেত্র তৈরি না হওয়ার হতাশা। শিক্ষাক্ষেত্র সম্পর্কে এমন একটি হতাশামূলক চিত্রের কথা কিন্তু আমরা প্রায়ই শুনি। আপনি নিজেও বলেছেন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা নিয়ে হতাশার কথা।
কামরুল হাসান মামুন: আমাদের যে হতাশা, হাতাশাটা কোথায়? কেন? হতাশা হলো যে, আমরা আমাদের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছি কত টাকা বেতনে—কয়েকদিন আগে রাজারবাগ পুলিশলাইনস স্কুলের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখলাম। নিয়োগ চাওয়া এ শিক্ষকের বেতন কত? সাড়ে বারো হাজার টাকা। ঢাকা শহরে দুই রুমের বাসার ন্যূনতম ভাড়া কত? বারো হাজার টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া পাওয়া যাবে না। তার যদি দুটি সন্তান থাকে— সন্তানকে স্কুলে পড়াতে পারবে না। তার খাওয়া-দাওয়া হবে না। আমার ড্রাইভারই বেতন পায় ২০ হাজার টাকা। এতে প্রমাণিত হয় যে, সমস্যাটা শিক্ষাক্রমে নয়। শিক্ষকতার মান আর শিক্ষকের জীবনমানে।
আমি জানি, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শতাংশ শিক্ষক একাধিক চাকরি করেন। এই বাংলাদেশের সব উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষকরাই প্রাইভেট পড়ায়, কোচিং করায়। বিশ্বের কোন দেশের শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ায়? আমাকে যদি প্রাইভেট পড়াতে হয়, তাহলে আমি ইচ্ছা করে ক্লাসে একটু খারাপ পড়াব। কেন পড়াব, যেন আমার কাছে পড়তে আসার চাহিদা তৈরি হয়। এই ছাত্ররা যখন দেখবে, ক্লাসে একরকম পড়ায়, কোচিংয়ে আরেক রকম পড়ায়— এর অর্থ কী? ছাত্ররা বলবে, দেখেছো, স্যারটা কত খারাপ। কত অসৎ! ইচ্ছা করে ক্লাসে খারাপ পড়ায়। মানে আমরা এই মানুষদের দিয়ে একটা অসততার সমাজ তৈরি করছি। আজকের সমাজে আমরা যত অন্যায়, অসততা দেখতে পাই— তার মূলটা আমরা বপণ করছি সেই স্কুলে। আরেকটি সমস্যার কথা আমরা শুনতে পাই, এই কারিকুলাম নাকি কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করে ফেলবে। যা আসলে এভাবে কোনওদিনই সম্ভব না।
সকাল সন্ধ্যা: নতুন শিক্ষাক্রমে এবার ১০টি বিষয় পড়ানো হবে। এতদিন ছিল মানবিক-বিজ্ঞান-ব্যবসায় শিক্ষা— এটা থাকবে না। নবম-দশম শ্রেণিতে সব শিক্ষার্থীকে কৃষি, সেবা বা শিল্পখাতের একটি ওকুপেশনাল এডুকেশনের ওপর দক্ষতা বাধ্যতামূলকভাবে অর্জন করতে হবে। শিক্ষাক্রম প্রণেতারা বলছেন, দশম শ্রেণি পাস করার পরে একজন শিক্ষার্থী একটা পেশাদারি দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। বলা হচ্ছে, এ শিক্ষাক্রম রূপরেখায় ১০টি বিষয়ের সঙ্গে মাদ্রাসা ও কারগরি শিক্ষার বিষয়গুলোর যৌক্তিক সমন্বয় সাধন করা হবে। স্কুলে ওকুপেশনাল এডুকেশনের বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
কামরুল হাসান মামুন: এই প্রশ্নটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আসলে আমি ভাষায় আমি প্রকাশ করত পারব না। তারপরও চেষ্টা করে দেখি। প্রথমত একটা দেশের শিক্ষাক্রম করা হয় একটা শিক্ষানীতির মাধ্যমে। শিক্ষানীতি তৈরি করা হয় একটা কমিশনের মাধ্যমে। অর্থ্যাৎ একটা জাতির শিক্ষা কেমন হবে এটা একটা দর্শনের বিষয়। এটা কোনও মন্ত্রণালয়ের বিষয় না। এটা কোনও আমলাতন্ত্রের বিষয় না। এই সরকারই ক্ষমতায় আসামাত্রই একটা শিক্ষা কমিশন করেছিল। তারাও একটা রিপোর্ট দিয়েছিল। জাতীয় সংসদে এটি পাসও করা হয়েছিল।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে বর্তমান শিক্ষাক্রম কি সেই শিক্ষানীতির আলোকে করা হয়েছে? আমরা তো এই দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের দিয়ে শিক্ষা কমিশন করেছিলাম। তাদের মাধ্যমে আমরা একটা শিক্ষা দর্শন তৈরি করেছিলাম। কিন্তু সেই পথে না গিয়ে এখন মন্ত্রী-আমলা-রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে শিক্ষাক্রম করা হচ্ছে। সুতরাং এখানে কি আর শিক্ষার দর্শন থাকছে?
আমরা ব্রেইনে বিলিয়ন বিলিয়ন নিউরন আছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিউরন আছে এদের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু এরা হাব। তেমনি একটি দেশে কিছু সংখ্যক মানুষ থাকবে যারা অত্যন্ত জ্ঞানী, বড় দার্শনিক, বড় বিজ্ঞানী, বড় ইতিহাসবিদ, বড় ডাক্তার, বড় ইঞ্জিনিয়ার, বড় রাজনীতিবিদ। এ মানুষগুলো তৈরির লক্ষ্যই হবে একটা শিক্ষা দর্শনের মূলধারা। আর একটি দেশের বাকি মানুষ যার যার দক্ষতা অনুসারে কল-কারখানায় চাকরি করবে, শ্রমিক হবে, কারিগরি কাজ করবে। জার্মানির মূলধারা শিক্ষাকে বলা হয় জিমনেশিয়াম। এটা এমন এক ধারা যেটা ব্রেইন স্টর্মিং শিক্ষা। নবম-দশম শ্রেণি পাস করে কিছু একটা করবে সেটা কারিগরি ধারা। অর্থ্যাৎ মূল নদী থাকবে একটা, সেটা থেকে শাখা-প্রশাখা বের হবে।
সকাল সন্ধ্যা: বলতে চাইছেন সবার উচ্চশিক্ষার দরকার নেই। কিন্তু স্কুল-কলেজের শিক্ষা হবে উচ্চশিক্ষার ভিত্তি তৈরির জন্য। এরপর কেউ কেউ উচ্চশিক্ষার পথে হাঁটবে আর বাকিরা বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষায় নানা পেশার জন্য প্রস্তুত হবে?
কামরুল হাসান মামুন: একদম তাই। ওইখান থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষার্থী বেছে নিব। নতুন শিক্ষামন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি তার কথা শুনলাম। তিনি বলছেন, ঝরে যাওয়া শিক্ষার্থীরা যেন জীবিকা নির্বাহ করতে পারে— তার জন্য এই শিক্ষানীতি। এটা ডেনজারাস চিন্তাভাবনা। মূলধারাটা হবে যারা ঝরে যায়নি তাদের কথা চিন্তা করে। আর ঝরে যারা যাবে তাদের জন্য হবে কারিগরি শিক্ষা।
আমরা করলাম কী— মূলধারার শিক্ষাকে আমরা কারিগরি ধারার মানে নামিয়ে নিয়ে আসলাম। দিস ইজ ডেঞ্জারাস। কয়দিন পরে এই দেশের জন্য বড় বিজ্ঞানী, বড় শিক্ষক, বড় দার্শনিক, বড় রাজনীতিবিদকে অন্য দেশ থেকে ধার করে আনতে হবে। এই দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাবে। এই দেশে কোনও সাহিত্যিক তৈরি হবে না।
আমরা করলাম কী, ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত নিয়ে আসলাম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। আমাকে একটা উদাহরণ দেন— বিশ্বের কোন দেশে তথ্য প্রযুক্তি স্কুল-কলেজে পড়ায়? তথ্য প্রযুক্তি কারিগরি বিদ্যাশিক্ষার অংশ হতে পারে।
আপনাকে আগে বিজ্ঞান শিখতে হবে। তারপর প্রযুক্তি। আপনি যদি আগে প্রযুক্তি শিখেন, আপনি কী হবেন— টেকনিশিয়ান হবেন। আপনি বিজ্ঞানী হবেন না, প্রযুক্তিবিদ হবেন না।
সকাল সন্ধ্যা: এবার বিজ্ঞান প্রসঙ্গে আসি। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে বিজ্ঞান পাঠ নিয়ে। অষ্টম শ্রেণিতে সাধারণ বিজ্ঞান নামে একটি বিষয় থাকবে। কিন্তু নবম-দশম শ্রেণি থেকে বিশেষায়িত বিজ্ঞান না থাকার সমালোচনার ঝড়টা বেশি চলছে। বলা হচ্ছে যে, ভৌতবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান এবং পৃথিবী ও মহাকাশ বিজ্ঞান— এই তিনটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র নিয়ে নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বই সাজানো হয়েছে। প্রাণী ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়ে জীববিজ্ঞান বইটি সাজানো হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এখানে রসায়নের মৌলিক বিষয়গুলো উপেক্ষিত হয়েছে। আপনি যে বিজ্ঞান শিক্ষার কথা বলছেন, আর যে শিক্ষাক্রম হয়েছে তাতে কি আগের থেকে বিজ্ঞান শিক্ষার মানের অবনমন ঘটেছে? দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, এই নবম-দশম শ্রেণির এই বিজ্ঞান শিক্ষা নিয়ে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে উচ্চতর বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা কি যথেষ্ট প্রস্তুত হতে পারবে? বিজ্ঞান শিক্ষা নিয়ে আপনার চিন্তা কী, সমালোচনা কী?
কামরুল হাসান মামুন: প্রথম কথা হলো, বর্তমানে যে বিজ্ঞান শিক্ষা করা হলো— এক চিমটি পদার্থ বিজ্ঞান, এক চিমটি জীববিজ্ঞান, এক চিমটি রসায়ন দিয়ে একটা সাবজেক্ট করা হলো— এটাকে বলা যেতে পারে ‘স্যালাইন বিজ্ঞান’ শিক্ষা। ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি অ্যান্ড বায়োলজির মাধ্যমে আমরা বিজ্ঞান শিক্ষার ফাউন্ডেশন তৈরি করব। এক চিমটি বিজ্ঞান দিয়ে তো ফাউন্ডেশন তৈরি করতে পারব না। পাশাপাশি আমার দেশের সন্তানরা যারা শিক্ষাটা কিনতে পারে, ইংলিশ মিডিয়ামে যারা নাইন-টেনে পড়বে তারা ফিজিক্সের ২৮৪ পাতার একটি পূর্ণাঙ্গ বই পড়বে। একইভাবে কেমিস্ট্রির ও গণিতের বই পড়বে।
আমার ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়া সন্তান এবং বাংলা মিডিয়াম পড়ুয়া সন্তান যখন একসঙ্গে মিলিত হবে, তখন বাংলা মিডিয়ামের সন্তানটি ইনফিরিয়রটি কমপ্লেক্সে পড়বে। কারণ সে অনেক কম জানবে, অনেক কম পড়বে, অনেক কম বুঝবে, অনেক কম পারবে।
এর মানে একই দেশে আমি একটি বৈষম্য তৈরি করে ফেললাম। শিক্ষাক্রমে তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ভালো থাকার মতো বিষয় পড়ানোর জন্য স্পেস তৈরি করতে হবে দেখে আমরা বিজ্ঞান কমিয়ে দিলাম। বিশ্বের কোন দেশে এসব সাবজেক্ট আছে? এসব সাবজেক্টের অনেক কিছুই এক্সট্রা কারিকুলামের মধ্যে দেওয়া যেত।
আমাদের নাইন-টেন ক্লাসের সময় আমরা উচ্চতর গণিত শিখতাম। ওই বিষয় টোটালি নাই হয়ে গেল। ইংরেজি মাধ্যমেও কিন্তু সায়েন্স, আর্টস, কমার্সের ডিভিশন নাই। আমরা যেটি করেছি সেখানেও কোনও ডিভিশন নাই। কিন্তু দুই মাধ্যমের শিক্ষার মানে বিরাট পার্থক্য আছে।
সকাল-সন্ধ্যা: বিজ্ঞান শিখতে গেলে তো গণিত লাগবে। এছাড়া ভাষাশিক্ষার বিষয়টি আছে। ভাষা তো সবকিছু শিখতে লাগবে…
কামরুল হাসান মামুন: এই ব্যাপারে একটু পরে আসছি। ইংলিশ মিডিয়াম নিয়ে যেটা বলছিলাম, এখানে ভাষা বাদ দিলেও সবকিছু ওপেন। যে যে সাবজেক্ট পড়তে চায়, পড়তে পারবে। আগে বাংলা মিডিয়ামে সায়েন্স, আর্টস, কমার্স থাকায় কিছুটা সম্ভব ছিল। এখন সবাইকে ঘাড়ে ধরে ১০টা সাবজেক্ট পড়তে বাধ্য করা হলো— কোনও স্বাধীনতা নেই। ইংরেজি মাধ্যমে এত ভাগ না থাকলেও আরও বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করার সুযোগ আছে। সে ইচ্ছা করলে চারটা সাবজেক্টের জায়গায় ছয়টা সাবজেক্ট নিতে পারে। একইসঙ্গে ফিজিক্স, একাউন্টিং পড়তে পারবে। সবার তো একই সাবজেক্ট পড়তে ভালো লাগবে না। সবাইকে কেন একই সাবজেক্ট পড়তে হবে?
মৌলিক কিছু কিছু সাবজেক্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। যার মধ্যে ভাষা একটা। আমার চিন্তা আপনার কাছে ট্রান্সফার করতে পারছি কারণ আমরা ভাষা জানি বলে। আমি ভাষা যত ভালোভাবে জানব তত আমার এই চিন্তাগুলোকে সঠিকভাবে ট্রান্সফার করতে পারব। ভাষা অত্যন্ত পাওয়ারফুল। বিশ্বের সবচেয়ে কমপ্লেক্স জিনিস আমার কাছে মনে হয় ভাষা। বিশ্বের সব মূলধারার শিক্ষার মধ্যে ভাষা গুরুত্বের সঙ্গে পড়ানো হয়।
সকাল সন্ধ্যা: আমরা প্রায়শই বলি যে, আমরা ভালো ইংরেজি শেখাতে পারছি না। আবার আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, বাংলাকে আমরা উচ্চশিক্ষার মাধ্যম করতে পারি নাই। একদল বিশেষজ্ঞ বলছেন, আমাদের বেশি ইংরেজি শিক্ষায় জোর দেওয়া উচিত। আরেক দল বলছেন, ইংরেজি শিক্ষায় অবশ্যই জোর দেওয়া উচিৎ। কিন্তু বাংলায় উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা আগে জরুরি। কারণ আমরা সবাইকে ইংরেজি শেখাতে পারব না। একইভাবে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষায় সম্পর্কেও কিছু বলুন।
কামরুল হাসান মামুন: এই প্রশ্নটা আমাদের দেশের জন্য খুব জরুরি। আমাদের একজন বিজ্ঞানী সতেন্দ্রনাথ বসু ছিল। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ২৪ বছর কাজ করে গেছেন। এখানেই কোয়ান্টম স্ট্যাটিসটিক্সের জন্ম হয়েছে। আমি বিশ্বের যেখানেই কথা বলতে যাই, এ কথাগুলো আগে বলি। সারা দুনিয়াকে জানানোর চেষ্টা করি। তিনি সবসময় বলতেন, বাংলা ভাষায় কীভাবে বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা ব্যতীত বিজ্ঞান শেখা হবে না। কারণ হলো— ভাষার প্রত্যেকটা শব্দের একটা চেহারা মানসপটে তৈরি হয়। এজন্য মাতৃভাষায় শিক্ষার বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে এমন একটা দেশ দেখাতে পারবেন না, উদাহরণও দেখাতে পারবেন না, যে দেশের মানুষ মাতৃভাষায় লেখাপড়া না করে উন্নত হয়েছে। এমন একটি দেশও নেই।
চাইনিজরা উন্নত হচ্ছে তাদের চাইনিজ/মান্ডারিন ভাষায় পড়ে। জাপানিজরা তাদের মাতৃভাষায় পড়ে বড় হয়েছে। ইউরোপের দেশগুলো এত বড় হয়েছে তাদের নিজ নিজ ভাষায় পড়ে। রাশানরা তাদের ভাষায় পড়ে। এসব মডেল তো আমাদের জানা। আমাদের গবেষণা করে বের করতে হবে না, ভাষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ— বিষয়টি পরিষ্কার। তাহলে আমরা ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছি কেন? ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ে গত ত্রিশ-চল্লিশ বছরে একজন ভালো খবর পাঠক-পাঠিকা তৈরি হয়েছে, একজন ধারাভাষ্যকার তৈরি হয়েছে? আজ পর্যন্ত সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো শিক্ষক তৈরি হয়েছে। বড় বিজ্ঞানী কেউ আছে ইংরেজি মাধ্যম থেকে পড়ে আসা? ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে কেউ বড় ডাক্তার তৈরি হয়েছে এ দেশে? একজনকে আপনি দেখাতে পারবেন? কিংবা বড় সাহিত্যিক, বড় ইতিহাসবিদ, বড় সাংবাদিক?
সকাল সন্ধ্যা: ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে কি এখানে তারা থাকছে না? ব্রেইন ড্রেইন হয়ে যাচ্ছে কি? নাকি তারা অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে?
কামরুল হাসান মামুন: দেশটা তো আমাদের। আমরা তো শিক্ষাটা উন্নত করব আমার দেশটাকে উন্নত করার জন্য। কিন্তু আমরা তো শিক্ষাক্ষেত্র তৈরি করছি টু সার্ভ আদার কান্ট্রিস, এক্সপোর্ট কোয়ালিটি তৈরি করছি। কেউ যদি দেশ ফিরে আসতেও চায়, আমরা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করে রেখেছি, হার্ভার্ড থেকে পড়ে এসেও বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাবে না।
সকাল-সন্ধ্যা: বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, এই শিক্ষাক্রম গ্রাম এবং শহরের এবং শহরের মধ্যে এবং শহরের নামী ও সাধারণ স্কুলের মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি করতে পারে। একটা বৈষম্য হলো ডিজিটাল ডিভাইডের কারণে গ্রামের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, যে লক্ষ্যের কথা বলা হচ্ছে— সেটা অ্যাচিভ করতে পারবে না। আরেকটি হচ্ছে যে, শিক্ষাক্রমের অংশ হিসেবে অনেক জিনিস তৈরি করা, হাতের কাজ করা— এগুলো করার জন্য যে অর্থ দরকার সেটা অনেক অভিভাবকের নাই। সংখ্যাগরিষ্ঠ অভিভাবকের ছেলে-মেয়েদের পেছনে শিক্ষা ব্যয় বেড়ে গেছে কাগজ, কলম, রঙ ইত্যাদি অনেক কিছু কিনতে। এ কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যবিত্ত অভিভাবকরা চিন্তিত। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
কামরুল হাসান মামুন: আমি মনে করি না, আর্লি স্টেজে লেখাপড়াটা ডিভাইস বেইজড হওয়া উচিত। শিক্ষার দর্শন থেকে আমি মনে করি যে, প্রাথমিক স্কুল বা উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত এটার দরকার নেই। কারণ উন্নত প্রাণি হিসেবে মানুষ চিন্তা করতে পারে। চিন্তা ইজ টু পাওয়ারফুল। যখনই আমি ডিভাইস নির্ভর করে ফেলি, তখনই মানুষ চিন্তা থেকে দূরে সরে যায়— অন্যকিছুর ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। আমি তাহলে চিন্তাশীল মানুষ থেকে ডিফ্লেক্টেড হয়ে গেলাম। এই দেশ-দেশের মানুষ ক্রনিক ডিজিজের মধ্যে পড়ে যাবে— চিন্তক মানুষের প্রচণ্ড অভাব তৈরি হবে। পদার্থবিদ একজন চিন্তক, সাহিত্যিক একজন চিন্তক, দার্শনিক একজন চিন্তক, গণিতবিদ একজন চিন্তক।
স্কুলে হোয়াইট বোর্ড মার্কার ব্যবহার করা, মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করা— এটা আমার পছন্দ না। বরং একটা ব্ল্যাক বোর্ড ও ডাস্ট ফ্রি চক যদি হয়, আস্তে লেখা হয়, মানুষের চিন্তা অ্যাবজর্ভ করার যে ক্ষমতা সেটার সঙ্গে সময়ের একটা সমন্বয় ঘটে। আর আমি যদি মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করি এটা এক ধরনের মেকানিক্যাল হয়ে যায়। সিমিলারলি আমি যদি স্মার্ট ফোন বাচ্চাদের হাতে দেওয়া শুরু করে দেই, তাহলে নানান লেভেলে ডেঞ্জারাস হয়ে যাবে। সেই মানুষটা চিন্তা থেকে দূরে সরে যাবে।
আর আর্থিক সামর্থ্যের দিকটাতো আছেই। গ্রামের কয়জন মানুষ এ ডিভাইসটা অ্যাফোর্ড করতে পারবে? বৈষম্য হবে, কারণ সবার একসেস এখানে সমান না। শহরে যারা থাকে, তারা অর্থনৈতিকভাবে একটু বেটার এবং ইন্টারনেটের ফ্যাসিলিটিজ, ডিভাইস ও স্কুলের মানের দিক থেকেও একটু বেটার— নতুন কারিকুলামের যদি উদ্দেশ্যও থাকে এসব পদ্ধতিতে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করার তাহলেও এখানে মারাত্মকভাবে একটা বৈষম্য তৈরি হওয়ার সুযোগ আছে।
সকাল-সন্ধ্যা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
কামরুল হাসান মামুন: আপনাকে এবং সকাল সন্ধ্যাকেও ধন্যবাদ।