অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ সচিবালয়ে সাংবাদিকসহ অন্যান্য পাসধারীদের প্রবেশ পাস বাতিল করেছে সরকার।
শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির স্বার্থে সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে ইস্যুকৃত স্থায়ী প্রবেশ পাস (ডিজিটাল অ্যাকসেস কন্ট্রোল সিস্টেম) এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ইস্যুকৃত অস্থায়ী প্রবেশ পাস ব্যতীত সব ধরনের অস্থায়ী (বেসরকারি ব্যক্তিবর্ণের জন্য) সচিবালয় প্রবেশ পাস বাতিল করা হলো।
এছাড়া সাংবাদিকদের ইস্যু করা অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাতিলের আদেশ দেওয়া হয়।
বাতিল করা বিভিন্ন ক্যাটাগরির সচিবালয় প্রবেশ পাসধারীরা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ, ক্রাইম কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল সেন্টার, ডিএমপি, ১৫ আব্দুল গণি রোড, ঢাকার বিশেষ সেলের মাধ্যমে নতুন করে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন, এমনটা বলা হয়েছে আদেশে।
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ জারি করা হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
সরকারি এই সিদ্ধান্তের পর সোশাল মিডিয়ায় অনেক সাংবাদিক প্রতিক্রিয়া জানান। এমন অবস্থায় সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হয়েছে, এবিষয়ে শনিবার ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেন প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “প্রিয় পেশাদার সাংবাদিক বন্ধুরা উদ্বিগ্ন হবেন না। আপনার কাছে যে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডটি আছে সেরকম শত শত কার্ড আছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে। পতিত আওয়ামী লীগ পেশাদার সাংবাদিকদের কার্ড না দিয়ে ও বাতিল করে হয়রানি করলেও বিভিন্ন ভুয়া নিউজ পোর্টাল/পত্রিকার নামে তাদের নেতাকর্মীদের নামে শত শত কার্ড ইস্যু করেছে।
“এই কার্ডগুলো একটা একটা করে যাচাই বাছাই করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। আবার সচিবালয়ে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তড়িৎ পদক্ষেপ নেয়া ছাড়াও কোন উপায় নেই। খুব শিগগিরই পেশাদার সাংবাদিকরা তাদের প্রতিষ্ঠানের চাহিদার ভিত্তিতে পাবেন নতুন অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড। তবে এরমধ্যে নিশ্চয়ই সাংবাদিকতা থেমে থাকবে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক পাস নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন সাংবাদিকরা।”
ঢাকার রমনায় কয়েকটি ভবন নিয়ে সচিবালয়। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) হিসাবে এটি বিশেষ নিরাপত্তা পায়।
গত বুধবার মধ্যরাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগে। ঢাকায় ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের কয়েকশ গজ দূরেই সচিবালয়।
রাত ২টা আগুন লাগার খবর পেয়েই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছুটে যায় সচিবালয়ে। তাদের সহায়তা করতে যোগ দেয় পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।
১০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে আগুন পুরোপুরি নেভানো হয় বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়। আগুন নেভাতে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট। তার আগে সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণের খবর দিয়েছিল এই বাহিনী।
আগুন নেভাতে গিয়ে সচিবালয়ের সামনের সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ যায় ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়নের।
সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে।
এর বাইরে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ছয়টি বিভাগের কার্যালয়ও সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে। এগুলো হলো– সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপদেষ্টামণ্ডলীর জরুরি সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গণির নেতৃত্বে ৭ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে সরকার।