“শীতকালে শীত কই বলে এতদিন সবাই চিল্লাইছে, তাদেরকে মাফ করে দাও ভাই শীত”- ঢাকার মহাখালীতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের রাস্তায় বৃহস্পতিবার বিকালে দাঁড়িয়ে একথা বলছিলেন ফাইয়াজ বিন আকবর, ঢাকায় তখন তাপমাত্রা দেখাচ্ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বন্ধুদের সঙ্গে তখন আড্ডা দিচ্ছিলেন ফাইয়াজ, শীতে জবুথবু নগরীতে মাথা পর্যন্ত পুরোটাই পোশাকে ঢাকা ছিল এই তরুণ, তার সঙ্গীরাও তাই।
খুব শীত লাগছে- এই প্রশ্নে ফাইয়াজ বললেন, “অপমান করার প্রতিশোধ নিচ্ছে, মাফ না চেয়ে উপায় নেই তো।”
ঋতুর পরিবক্রমায় পৌষ ও মাঘ বাংলাদেশে শীতকাল। বৃহস্পতিবার ছিল পৌষ মাসের ১৮ তারিখ। মধ্য পৌষে এসে প্রচণ্ড শীত থাকার কথা। সেই শীত শুরু হয় পৌষ মাসের আগেই, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ডিসেম্বরের শুরু থেকে। কিন্তু এবার গোটা ডিসেম্বর গড়ালেও শীতের কাঁপন টের পায়নি ঢাকাবাসী। জানুয়ারির প্রথম দিনেই যেন ঝুপ করে নেমেছে শীত।
ফাইয়াজের আড্ডার সঙ্গী মাহরুফ বললেন, “ভেবেছিলাম ভারী কাপড়গুলো নামাতে হবে না, কিন্তু গত রাতে সবাই মিলে সবাই ভারী কাপড়গুলো নামিয়েছি। উপায় তো নেই।”
বৃহস্পতিবার ঢাকার মেঘে ঢাকা আকাশে সূর্যের দেখাও মেলেনি। পৌষের রোদমাখা সেই দিন হয়েছিল উধাও। হিম বাতাসে সবাই বের হচ্ছিলেন সারা গা গরম কাপড়ে মুড়িয়ে।
এমন আবহাওয়ার কারণ কী- জানতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ সাহারা সুলতানার দ্বারস্থ হলে তিনি বলেন, “কিছুদিন ধরেই কুয়াশার একটা বড় ‘স্পেল’ চলছে। যার কারণে দিনের আলো অর্থাৎ সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে না।”
সাতক্ষীরা, যশোরের কিছু কিছু এলাকা বাদে পুরো দেশ সূর্যের আলোর অভাব, কুয়াশায় চাদরে ঢাকা। হিমেল হাওয়া ধরাচ্ছে কাঁপন। বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার গড় তাপমাত্রা কমেছে ২ ডিগ্রি। তা আরও কিছুটা কমতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আভাস।
প্রতি মাসের শুরুতে আবহাওয়া অধিদপ্তর সে মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দেয়। তাতে জানুয়ারিতে শৈত্যপ্রবাহের কথাও রয়েছে।
বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে স্বাভাবিকের চাইতে কম বৃষ্টি হবে। আবার এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বঙ্গোপসাগরে।
গত ডিসেম্বর মাসে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। ওই মাসে একাধিক লঘুচাপের কারণেই শীতের প্রকোপ কমে গিয়েছিল বলে জানান সাহারা সুলতানা। অন্তত তিনটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয় ডিসেম্বরে।
কিন্তু চলতি মাসে শীত জাঁকিয়ে বসবে, এমন আভাসই পাওয়া গেল আবহাওয়াবিদ সাহারা সুলতানার কাছ থেকে।
“জানুয়ারি মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। এই কারণে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে।”
বৃহস্পতিবার দিনে ঢাকার তাপমাত্রা নেমেছিল ১৩ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার দেশের সর্বনিম্ন্ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বোচ্চ ছিল কক্সবাজারের টেকনাফে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
“এটা কিন্তু আসলে বেশি শীত না, অনুভূত হচ্ছে বেশি,” বলেন আবহাওয়াবিদ সাহারা।
সাধারণত তিন জায়গায় তাপমাত্রা যখন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থেকে অন্তত তিন দিন অব্যাহত থাকে, তখন তাকে শৈত্য প্রবাহ বলা হয়। এখন দেশের দুই জায়গায় কেবল তেমন আবহাওয়া বিরাজ করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, দেশের পশ্চিম, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দুয়েকটি মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে এই মাসে। অন্য স্থানগুলোতে দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর এ তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ থেকে ৮ হলে তা মাঝারি, তাপমাত্রা ৪ দশমিক ১ থেকে ৬ ডিগ্রি হলে তা তীব্র আর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে গেলে তাকে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
শৈত্যপ্রবাহ এলেও তা তীব্র হবে না, এমন আশার কথা শুনিয়েছেন আবহাওয়াবিদ সাহারা।
তিনি বলেন, “কুয়াশার প্রভাব আরও কয়েকদিন থাকবে। অন্তত দুই থেকে তিন দিন এরকম থাকবে অবস্থা। তারপর হয়ত এতটা থাকবে না। এরপর সাত থেকে আট দিনের মতো খুবই হালকা বৃষ্টি হতে পারে।
“এই বৃষ্টিটা কমে গেলে ফের শীত শুরু হবে। তবে সেটা মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ হতে পারে; খুব সম্ভবত সেটা ৯ থেকে ১১ তারিখের দিকে হতে পারে।”
আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
মধ্য রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়ার আভাস রয়েছে আবহাওয়ার বুলেটিনে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। কুয়াশার কারণে সারাদেশের কোথাও কোথাও দিনে শীতের অনুভূতি বিরাজমান থাকতে পারে।