মাগুরা-১ আসনের সাবেক এমপি সাকিব আল হাসান; আবার বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার। কোন পরিচয়টি কখন মুখ্য হয়ে উঠবে তা আসলে সময়ই নির্ধারণ করে দেয়। এই যেমন মাগুরার একটি আসনে আওয়ামী লীগ থেকে ‘নির্বাচিত’ এমপি সাকিবকে খেলতে দেয়নি গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা জনতা। এতে আবার দুঃখ-বেদনায় ভেঙ্গে পড়েছেন সাকিব ভক্ত ওরফে ‘সাকিবিয়ান’-রা।
সাকিবের ১৮ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের সুখ-দুঃখের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার ভক্ত সমর্থকদেরও স্মৃতি। সাকিবের শেষ টেস্টটি ঘরের মাঠে তাই দেখতে না পারায়, ভক্তরা আজ শোকে মুহ্যমান।
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং অলরাউন্ডার সাকিব। শৈশবে পার করা ক্রিকেট ভক্তরা তাকে প্রথম টিভি স্ক্রিনে দেখেছিল ১৮ বছর আগে। সাকিবের ক্যারিয়ারের সঙ্গে তাদেরও বেড়েছে বয়স। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিবের উত্থানে, তাদের অনেকেই সাকিবের পার ভক্তে পরিণত হয়েছে।
তার প্রতিটি সেঞ্চুরি এই ভক্তরা উদযাপন করেছে নিজের সাফল্য হিসেবে। তার সাফল্যে এই ভক্তরা হয়েছে সুখী, ব্যর্থতায় হয়েছে দুঃখী। তাই, সাকিব আল হাসান তার শেষ টেস্টটি দেশে খেলতে না পারায় ভক্তদের ঘিরে ধরেছে শোকের ছায়া। শোককে শক্তিতে পরিণত করতেই কিনা সাকিবিয়ানরা নেমে যান রাস্তায়। তাদের দাবী, সাকিবকে মিরপুরের মাটিতে খেলতে দিতেই হবে।
কিন্তু সময় ‘সত্যের মতো বদমাশ’। এমনই বদমাশ যে স্পোর্টসম্যান সাকিবের এমপি পরিচয়কেই সে সত্য করে তুলেছে!
ফলে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ হিসেবে ধরে নিয়ে সাকিবিয়ানদের ওপর হামলা চালায় অভ্যুত্থান পক্ষের জনতা।
উচুঁ গাছে বাতাস বেশি লাগে : বললেন সাকিব
শেষমেশ সাকিব খেলতে পারেননি। তবে সাকিবিয়ান বা সাকিব ভক্তদের এহেন কাণ্ড নতুন করে সামনে এনেছে কদাচিৎ আলোচিত একটি বিষয়। আর সেটি হলো প্রিয় তারকাকে হারানোর শোকে ভক্তদের এমন প্রতিক্রিয়া। মনোবিজ্ঞান এর নাম দিয়েছে “প্যারাসোশ্যাল লুজ”।
ব্যক্তিগত যোগাযোগ কিংবা আত্মীয়তা, কোনটিই না থাকা ব্যক্তিকে হারানোর বেদনায় যখন কেউ শোকগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে ‘প্যারাসোশ্যাল লুজ’ বলে।
হতেই পারে সাকিব পরলোকগত হননি। কিন্তু স্পোর্টসম্যান সাকিব যে ‘বিদায়’ নিয়েছেন দেশের বহু মানুষের হৃদয় থেকে। তবে দুঃখ পাচ্ছেন কেবল সাকিবিয়ানরাই।
কীভাবে এমন শোক কাটিয়ে উঠবেন এই সাকিবিয়ানরা?
কেউ যখন শোক সাগরে ভেসে যায়; তার দরকার হয় স্বীকৃতি। এইজন্যই কিনা কোনও ওয়াজের ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল, কান্নায় ভাসতে থাকা তরুণদের হুজুর বলছিলেন “তোরা সব জড়ায়া ধইরা কান।”
কারণ একই শোকে আক্রান্ত যারা তারাইতো বোঝে সেই শোকের ভার কতটা। বোঝে বেদনার গভীরতা। গাঢ় নীল রঙ।
আবার এমন ‘প্যারাসোশ্যাল লুজ’ নিয়ে সমাজে কিছু স্টিগমা বা ভুল ধারণাও আছে। তাই সাকিবিয়ানরা তাদের শোক ভাগ করে নিতে পারে আরেক সাকিবিয়ানের সঙ্গে। জড়িয়ে ধরতে পারে একে অপরকে। এতে বেদনা হালকা হবে।
শোক মোকাবেলা করতে গিয়ে মানুষ নানান আনুষ্ঠানিকতার আশ্রয় নেয়। যেগুলোকে বলা যায় রিচুয়ালস। প্রতিটি ধর্মেই আলাদা আলাদা কিছু রিচুয়ালস আছে। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষেও আছে কিছু সেক্যুলার রিচুয়ালস।
সাকিবিয়ানরাও কিছু সেক্যুলার রিচুয়ালসের আশ্রয় নিতেই পারে। এইসব আনুষ্ঠানিকতা তাদের শোকের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহায়তা করতে পারে। এটা হতে পারে সাকিবের বড় বাঁধানো ছবির সামনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, হতে পারে ফেইসবুকে তাকে নিয়ে দুটো ভালো ভালো কথা লিখে।
তবে ফেইসবুকে তাকে নিয়ে ভালো ভালো কথা পোস্ট করলে আছে বিপদ। তখন আবার অভ্যুত্থানপক্ষের জনতা হামলে পড়তে পারে কমেন্ট থ্রেডে। তাই ব্যক্তিগত পরিসরেই এইসব আনুষ্ঠানিকতা সীমাবদ্ধ রাখা নিরাপদ। এইসব আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সাকিবিয়ানরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে।
মানুষ তার শোককে অর্থপূর্ণ করতে চায়। ‘প্যারাসোশাল লুজ’ এর ব্যতিক্রম নয়। এমন সময়ে নস্টালজিয়ার মধ্যে নিজেকে নিমজ্জিত করাই হতে পারে উত্তম দাওয়াই। নস্টালজিয়া মানুষের ভেতর আশাবাদ এবং ইতিবাচক আবেগের অনুভূতি সৃষ্টি করে। সাকিবের মাঠের পারফরম্যান্সের পুরোনো ভিডিও দেখে দেখে তাই এমন শোকবহ সময় কাটান যেতে পারে। এতে করে সাকিবিয়ানরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে এবং জীবনের অর্থও খুঁজে পাবে।
আবার নিজ নিজ পরিসরে, গল্প আড্ডায় সাকিবকে করা যেতে পারে স্মরণ। স্মরণ শোকে নিমজ্জিত মানুষের চাপ কমায়, তাকে ভালো অনুভূতি দেয়। তবে এ জন্য ফেইসবুকে কোনও ইভেন্ট না খোলাই শ্রেয়। এতে শোক আবার বাড়তে পারে।