শ্যাম্পুর ঝাঁঝালো রাসায়নিক থেকে মুক্তি পেতে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘নো পু’ (No Poo) অর্থাৎ ‘নো শ্যাম্পু’ আন্দোলন। এই পদ্ধতিতে শ্যাম্পু ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে চুল পরিষ্কার করার কথা বলা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শ্যাম্পু বর্জন করা কি সত্যিই চুলের জন্য স্বাস্থ্যকর! চুলের সুরক্ষায় শ্যাম্পুর পক্ষের যাবতীয় দাবি তবে কি শুধুই প্রতারণা!
‘কোনোভাবেই প্রতারণা নয়’ বলে দাবি করেছেন যুক্তরাজ্যের ইনস্টিটিউট অব ট্রাইকোলজিস্টস এর প্রধান নিল হার্ভে।
‘নো পু’ আন্দোলনের এই ধারণার প্রতিও তিনি সন্দিহান যে চুল আপনা-আপনি পরিষ্কার হয়ে যায়, এবং পরিষ্কার করার জন্য কোনো পণ্য ব্যবহার করলে তা চুলের স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। বরং তিনি উল্টা কথাই বলছেন।
হার্ভে বলেন, “মাথার ত্বক – তার কয়েক হাজার ফলিকল এবং সেবেসিয়াস গ্রন্থিসহ – শরীরের অন্যান্য অংশের মতোই (যদি বেশি না হয়) মনোযোগের দাবি রাখে।”
“ভাবুন তো, যদি আপনি আপনার বগল ধোওয়া বন্ধ করে দেন তাহলে কী হবে – সম্ভবত ঘাম এবং ময়লার স্তূপ তৈরি হবে, যা থেকে ভয়ানক গন্ধ বের হবে। ব্যাকটেরিয়া এবং ঈস্টের বিস্তার ঘটবে, কারণ তারা তৈলাক্ত পরিবেশে বংশবৃদ্ধি করে।”
কিছু লোক কেন দাবি করেন শ্যাম্পু বন্ধ করার কয়েক সপ্তাহ পরে চুল আরও চকচকে দেখায়?
এ প্রশ্নের জবাবে হার্ভে বলেন, “যদি কেউ বেশি শ্যাম্পু ব্যবহার করেন এবং তারপর তা বন্ধ করে দেন, তাহলে মাথার ত্বকের সেবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে নির্গত প্রাকৃতিক তেল চুলের সঙ্গে বেশি বেশি মিশবে। আমরা এর কিছুটা অবশ্যই চাই – এটি চুলকে রক্ষা করে এবং চকচকে করে – কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি জমা হবে এবং অপ্রীতিকর হয়ে উঠবে।”
কিছু শ্যাম্পুতে বেশি রাসায়নিক উপাদান থাকার কারণে তারা চুলের ক্ষতি করে। এই উপাদানগুলোর মধ্যে সোডিয়াম লরিল সালফেট, সোডিয়াম ক্লোরাইড আর অতিরিক্ত সুগন্ধী উল্লেখযোগ্য।
“এগুলি চুলকে শুষ্ক করতে পারে এবং জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে এসেনশিয়াল অয়েলের মতো প্রাকৃতিক উপাদানের ভরপুর শ্যাম্পুগুলো মৃদু হয়”, বলেন হার্ভে। তার মতে, ‘স্বাস্থ্যকর’ করার পরিবর্তে বিজ্ঞাপনে কিছু শ্যাম্পু চুলের ‘সৌদর্য’ ও ‘অনুভব’ নিয়ে আলাপ করে, সেগুলো বর্জন করা দরকার।
মাথার ত্বকের ধরন, চুলের গঠন এবং ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর নির্ভর করে কত ঘন ঘন একজন ব্যক্তির শ্যাম্পু করা উচিত।
হার্ভে বলেন, “ঘন ঘন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোওয়ার কারণে কিছু মানুষের চুলের ক্ষতি এবং চুলকানি, মাথার ত্বকের শুষ্কতা তৈরি হতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রেই ঘন ঘন শ্যাম্পুতে চুল না ধুলে, সেটিকে তৈলাক্ত এবং প্রাণহীন দেখাতে পারে এবং একটি মাথার ত্বকে অস্বাস্থ্যকর মাইক্রোবায়োম (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস,ছত্রাক ইত্যাদি অনুজীব) তৈরি করতে পারে। এটি মাথার ত্বক ও চুল রক্ষাকারী ইকোসিস্টেমকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
শ্যাম্পুর নিরুৎসাহিত করার ‘নো পু’ আন্দোলনটি নতুন কিছু নয়। গত কয়েক বছরে সোশাল মিডিয়ায় ঘুরে-ফিরেই এই আন্দোলন কিছুদিন পরপর ভাইরাল হচ্ছে। শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে ‘নো পু’ দর্শনধারীরা প্রায়ই তাদের চুল পরিষ্কার করার জন্য পানি, আপেল সিডার ভিনেগার বা ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক উপাদানের মিশ্রণ (যেমন নারকেল তেল) ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন।