বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে ভারত সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তার সেই আহ্বান নিয়ে টিপ্পনি কেটেছেন ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য শশী থারুর। মমতা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীর ভূমিকা বোঝেন কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
মমতার ওই বক্তব্য প্রকাশের পরদিন মঙ্গলবার ভারতের বার্তাসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শশী থারুর এই প্রশ্ন তোলেন।
কংগ্রেস নেতা এবং সাবেক কূটনীতিক শশী থারুর বলেন, “মমতা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা বোঝেন কিনা, সেটাই আমি নিশ্চিত নই।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে আসছিল ভারত সরকার।
তারই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে এক ভাষণে মমতা বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য সরকারকে জাতিসংঘের সঙ্গে কথা বলার আহ্বান জানান।
মমতা বলেন, “ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের (জাতিসংঘ) সঙ্গে কথা বলুক, যাতে সেখানে তারা শান্তি সেনা পাঠাতে পারে। আমাদের এই বিষয়ে অনুরোধ রইল।”
পরদিন ভারতের পার্লামেন্টে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ সংসদ সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও সুদীপ যখন একথা বলছিলেন, তখন স্পিকার পরবর্তী বক্তার নাম ঘোষণা করে দেন।
তৃণমূলের এই দাবি নিয়ে কেন্দ্রে তাদের জোট শরিক কংগ্রেসের মধ্যেই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। সেই অস্বস্তিরই প্রকাশ ঘটল কংগ্রেস এমপি শশী থারুরের কথায়।
মঙ্গলবার লোকসভা চত্বরে পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে থারুর বলেন, “মমতা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ভূমিকা পুরোপুরি বোঝেন কি না, আমি তা নিশ্চিত নই। আমি বহুদিন সেখানে কাজ করেছি। কোনও দেশ নিজে থেকে না চাইলে সেখানে শান্তিবাহিনী পাঠানো যায় না।”
এরপর শশী থারুর কটাক্ষের সুরে আরও বলেন, “তৃণমূলনেত্রী ‘স্ট্রিট পলিটিক্সে’র মানুষ, সে জন্যই হয়তো তিনি জাতিসংঘের বিষয়ে খুব বেশি জানেন না।”
শশী থারুর আরও বলেন, “যখন একটি দেশ সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে, তখনই শান্তিরক্ষী পাঠানো হয়। এর জন্য সেই দেশের সরকারকেও জাতিসংঘকে অনুরোধ জানাতে হয়। তবে আমি পুরোপুরি একমত যে সেখানে (বাংলাদেশে) কী ঘটছে, তার ওপর আমাদের নজর রাখতে হবে।”
শশী থারুরের এই মন্তব্যে তাকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন তৃণমূল সংসদ সদস্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। থারুরকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “তিনি তো বিরাট পণ্ডিত, তাহলে শান্তি ফেরানো নিয়ে কোনও কথা বলছেন না কেন?”
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও মমতার এই আহ্বানের সমালোচনা করেছে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, “কূটনৈতিকভাবে মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য শোভনীয় নয়। এভাবে এক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এভাবে জাতিসংঘ শান্তিবাহিনীর বিষয়ে দাবি জানানো যায় না।”
এর আগে বাংলাদেশে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের ঘটনায় গত শুক্রবার শশী থারুর বলেন, “এ বিষয়ে ভারতের বেশি কথা বলা ঠিক হবে না, কারণ বিষয়টি ভারতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।”
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আগামী ১১ ডিসেম্বর ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটি একটি বৈঠক ডেকেছে। সেই কমিটির বর্তমান প্রধান শশী থারুর।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবারই রংপুরে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, “এখানে (বাংলাদেশে) কোনও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। পাশ্বর্বর্তী দেশের মিডিয়া আমাদের সম্পর্কে অনেক মিথ্যা প্রচার করে।”