Beta
সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে : ড. ইউনূস

ঢাকায় স্কাই নিউজের সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ঢাকায় স্কাই নিউজের সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
[publishpress_authors_box]

শেখ হাসিনা দেশে ফিরুক বা না ফিরুক, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তার বিচার হবেই, একথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তিনি। বুধবার এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়।

জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনার বিচারের আগে কোনও নির্বাচনের আলাপ হবে না, অভ্যুত্থানের নেতা সারজিস আলম একথা বলার পরদিনই ড. ইউনূসের এই বক্তব্য প্রকাশ পেল।

তবে স্কাই নিউজের এই সাক্ষাৎকারটি তার আগেই নেওয়া হয় বলে ধারণা করা যায়। কারণ বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনকালে গুম-হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্কাই নিউজের আরেকটি প্রতিবেদন কয়েকদিন আগেই প্রকাশিত হয়। স্কাই নিউজের সাংবাদিক কর্ডেলিয়া লিঞ্চ ঢাকায় এসে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করেন, ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকারও তিনিই নেন।

সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “(শেখ হাসিনার) বিচার হবে। শুধু তার নয়, তার সহযোগী যারা ছিল, তার পরিবারের সদস্যরা, তার ঘনিষ্ঠরা সবারই বিচার হবে।”

গত দেড় দশক শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় গুম-হত্যাকাণ্ডের বহু অভিযোগ ওঠে। জুলাই আন্দোলনের সময় তার দমন নীতিতে নিহত হয় কয়েকশ মানুষ।

এই সব হত্যাকাণ্ডের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ট্রাইব্যুনাল থেকে শেখ হাসিনার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে।

অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এখনও সেখানে রয়েছেন তিনি। তাকে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকার দিল্লিতে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিলেও এখনও কোনও সাড়া পায়নি।    

সেই বিষয়টি উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাওয়া যাক বা না যাক, তার বিচার হবেই।

শেখ হাসিনার শাসনকালে বিভিন্ন বাহিনীর দপ্তরে তৈরি করা গোপন নির্যাতন কেন্দ্রগুলো (যা আয়না ঘর নামে পরিচিতি পেয়েছে) সম্প্রতি দেখতে গিয়েছিলেন ড. ইউনূস।

সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এটা কতটা কুৎসিত, তা আপনি দেখলে বুঝবেন।”

এই নির্যাতনে শেখ হাসিনার গোটা প্রশাসনই জড়িত ছিল বলে দাবি করেন ড. ইউনূস।

“প্রত্যেকে জড়িত ছিল, তার পুরো সরকার জড়িত ছিল। তাই কার দায় কতটা, তা আপনি আলাদা করতে পারবেন না।”

তাদের কেউ কেউ ধরা পড়েছে, কারও কারও অবস্থান এখনও শনাক্ত করা যায়নি বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

শেখ হাসিনা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার মামলায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের মন্ত্রীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং তার দলের শীর্ষনেতাদের আসামি করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, “২০২৫ সাল হবে আওয়ামী লীগ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বছর। বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে সংগঠিত গুম, খুন এবং জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার এই বছরেই সম্পন্ন হবে।”

শেখ হাসিনা দাবি করে আসছেন, তার বিরুদ্ধে এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এদিকে অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা থেকে এখন নতুন দল গঠন করে তার মুখ্য সংগঠকের দায়িত্ব নেওয়া সারজিস মঙ্গলবার বলেছিলেন, “ক্ষমতায় টিকে থাকতে হাসিনা আমাদের অনেক ভাইকে খুন করতে দ্বিধা করেনি। অনেক লাশ সে কোথায় রেখেছে, এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সন্তানের লাশ পাওয়ার জন্য একটি মা আহাজারি করছে সন্তানকে শেষবার দেখার জন্য।

“এই খুনির নির্দেশে আমার ভাই প্রাণ হারালো, তার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কীভাবে আমরা অন্যকিছু চিন্তা করি?”

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকালে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ না হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টা দায়ী থাকবেন বলেও হুঁশিয়ার করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই সমন্বয়ক, যে প্ল্যাটফর্মের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।

শেখ হাসিনার ভাগ্নি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়েও সাক্ষাৎকারে কথা বলেন ড. ইউনূস। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সম্প্রতি তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেন।

টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশেও দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত চালাচ্ছে।

ড. ইউনূস বলেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ গুরুতর। তার অনেক সম্পদ রয়েছে এই দেশে, তা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।

টিউলিপ অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত