Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

একা যারা কেমন তারা

singlehood-060524
[publishpress_authors_box]

যারা একা বা সিঙ্গেল, তারা কি নিজেকে নিয়ে কম আত্মবিশ্বাসী হন? বাকিদের চোখে একাকী মানুষকে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলে – চাপা স্বভাবের কারণেই বোধহয় একা থাকারা জীবনে একজন সঙ্গী বেছে নিতে পারেনি; ওরা মনে হয় সম্পর্ক ঠিক রাখতে পারে না কখনও।

নির্ঝঞ্ঝাট একাকী মানুষদের নিয়ে এসব হিসাব কতটুকু ঠিক?

আবার যারা দীর্ঘদিন একাকিত্ব আলিঙ্গন করে আছে তারা কি কখনও নিজেকে মেলে ধরতে পারবে?

গবেষণা বলছে, এমন হওয়া খুবই সম্ভব।

তবে হয়তো সবার পক্ষে নিজের একাকিত্বের খোলস থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নাও হতে পারে। একেক জনের মেলামেশার ধরন একেক রকম বলেই এমন হয়, জানাচ্ছে নতুন গবেষণা; যা প্রকাশ করেছে জার্নাল অব পারসোনালিটি।      

মানুষ কেন একা থাকা বেছে নেয়?

কেউ কেউ কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াই একা থাকতে পছন্দ করেন। আবার কেউ নিজের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন পূরণে একা থাকা শ্রেয় মনে করেন।

এসবের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, সঙ্গী খোঁজা আজকাল কঠিন হয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পরই নিজেদের একা করে ফেলেছে অনেকে।

অ্যাটাচমেন্ট থিওরিকে বাংলায় সংযুক্তি তত্ত্ব বলে; এর সহজ অর্থ কারও মেলামেশা বা সম্পর্ক গড়ে তোলার ধরন।

আমাজন ওয়েবসাইটে ইংরেজি শিরোনামে এই তত্ত্ব নিয়ে খুঁজলে হাজারো গবেষণা মিলবে। টিকটকে হ্যাশট্যাগ অ্যাটাচমেন্ট থিওরি তালিকা দেখেছে ১৪ কোটি ব্যবহারকারী।   

কী বলছে অ্যাটাচমেন্ট থিওরি?

আমাদের উদ্বেগ আর বাছবিচার করে চলার উপর ভর করেই আমাদের সম্পর্কের ধরন গড়ে ওঠে। উদ্বেগ বা অ্যানজাইটিতে থাকা মানুষ সম্পর্ক নিয়ে অস্থিরতায় ভোগেন। সঙ্গী তাকে ফেলে চলে যাবে এমন শংকাও কাজ করে এদের মনে।  

আবার যাদের মধ্যে এড়িয়ে চলা বা অ্যাভয়েডেন্সের স্বভাব রয়েছে তারা কারও ঘনিষ্ঠ হতে, কাছাকাছি যেতে আড়ষ্ট বোধ করেন।  

যাদের মধ্যে উদ্বেগ  ও এড়িয়ে চলার প্রবণতা কম তারা নিরাপদ সংযুক্তিতে থাকে। এই ধরনের মানুষ সহজে অন্যের উপর নির্ভর করতে পারে, অন্যের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে পারে।

অনেকের বদ্ধমূল ধারণা, একা থাকা ব্যক্তিরা খুব চাপা এবং সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে না। এসব একাকী ব্যক্তিদের কারও সঙ্গে সম্পর্ক এবং নিজের আনন্দ ও ভালো ক্ষণ উপভোগের ধরন নিয়েই ‘জার্নাল অব পারসোনালিটি’তে গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ হয়েছে। ওই গবেষণায় কাজ করেছেন একদল সামাজিক ও ক্লিনিকাল মনোবিদ।

দুই ধরনের জরিপ করে দেখা হয় এই গবেষণায়। ৪৮২ জন অবিবাহিত তরুণ নিয়ে একটি দল করা হয়। আবার দীর্ঘদিন ধরেই একা রয়েছেন এমন ৪০০ জন বয়স্ক নিয়ে আরেকটি দল করা হয়।

উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ফলাফলে পাওয়া গেল, একা থাকাদের ৭৮ শতাংশ অনিরাপদ বোধ করে মেলামেশায়। এর অর্থ মোটে ২২ শতাংশের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে ভীতি কাজ করে না।         

  • সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ এড়িয়ে থাকতে পারা লোকেরা ঘনিষ্ঠ হতে পারে সাবলীলভাবেই; জরিপে ২২ শতাংশকে এই দলে ফেলা গেছে।
  • ৩৭ শতাংশের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ কাজ করে। এই দলের মানুষ নিজেকে একটা প্রশ্নের মুখে ফেলে বারবার – তাদের কি কেউ ভালোবাসে? প্রত্যাখ্যান হওয়ার ভয় তাড়া করে এদের ভীষণভাবে।  
  • সম্পর্ক এড়িয়ে চলেন যারা তারা কোনোভাবেই অন্তরঙ্গ হতে পারেন না। এরা বরং নিজের স্বাধীন থাকাকেই প্রাধান্য দেয়। একা থাকা তরুণদের ২৩ শতাংশ এবং বয়স্কদের মধ্যে ১১ শতাংশের ধরন এমনই।
  • তরুণদের মধ্যে ১৬ শতাংশের মনে সঙ্গীর ছেড়ে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা কাজ করে সব সময়। আবার এরা সঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতেও সাবলীল নন। দীর্ঘদিন একা থাকা বয়স্কদের মধ্যে এই শঙ্কা আরও বেশি; ২৮ শতাংশ বয়স্কদের মধ্যে এই মনোভাব দেখা গেছে।  

নানা উদ্বেগে একাকিত্ব বেছে নেওয়াদের কাছে একা থাকাও এক ধরনের যুদ্ধ। তবে আত্মবিশ্বাসী একাকী লোকেরা জীবনে এগিয়ে যায় সহজেই।

আত্মবিশ্বাসী একা থাকা মানুষেরা নিজেকে নিয়ে সুখী হন। এরা অনেক মানুষের সঙ্গে জুড়ে থাকতে পারেন; পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে চমৎকারভাবে সম্পর্ক ধরে রাখতে পারেন। নিজেকে নিয়ে সুখী থাকা এই দলের লোকেরা কারোও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলেও মন দেয়া-নেয়া করেন না। হয়তো ভবিষ্যতে কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালেও জড়াতে পারেন, এমন ভাবনাও কাজ করে এদের মধ্যে।   

বিপরীতে, উদ্বেগ নিয়ে একা থাকা মানুষেরা সবচেয়ে অদ্ভুত হযন। কেউ তাদের পাশে নেই – এমন উপলব্ধিও কাজ করে এদের মনে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের যত দলে ভাগ করা হয়েছে, তার মধ্যে এই ধরনের মানুষেরাই জীবন নিয়ে সবচেয়ে কম সন্তুষ্ট।  

এড়িয়ে চলার প্রবণতা নিয়ে যারা একা থাকেন, তাদের প্রেম নিয়ে সবচেয়ে কম আগ্রহী দেখা গেছে। এরা নিজেদের একা থাকা ঘিরেই যথেষ্ঠ সুখী থাকেন। তারা বন্ধুত্ব ও গভীর সম্পর্ক যে একেবারেই এড়িয়ে চলেন তাও নয়; কিন্তু এসব নিয়ে তারা নিরাপদবোধ করা সিঙ্গেলদের চেয়ে কম খুশি থাকেন।

ভীতু দলের একা ব্যক্তিরা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হিমশিম খেয়ে যায় সাধারণত। এরা আবেগ সংবরণ করতে পারে না। অন্য যে কোনো দলের একা ব্যক্তিদের চেয়ে ভীতু দলের একা ব্যক্তিদের জীবন নিয়ে সন্তুষ্টি সবচেয়ে কম দেখা গেছে গবেষণায়।     

গবেষণার এসব ফলাফল অবশ্য আরও অনেক ধরনের প্রাসঙ্গিকতার সাপেক্ষে উঠে এসেছে। তবে প্রেমের সম্পর্কে থাকাটাই সমাধান নয়। একটা অসুখী সম্পর্কের মধ্যে জীবন কাটানো একা থাকার চেয়েও হতাশাজনক পরিস্থিতির কথা বলে।

কারও  সম্পর্ক গড়া  ও ধরে রাখার ধরনও সব সময় এক রকম থাকে না; জীবনের বাঁক বদলের সঙ্গে এই ধরনও পাল্টে যায়।

যদি কাছের মানুষদের থেকে যত্ন ও ভালোবাসা মেলে তাহলে অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একা থাকা ব্যক্তিদের ভাবনাতেও পরিবর্তন আসতে পারে।

গবেষক দলে কাজ করেছেন গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি ইন অস্ট্রেলিয়ার ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ক্রিস্টোফার পেপিং, ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর অধ্যাপক জিওফ ম্যাকডোনাল্ড,  লা ট্রোব ইউনিভার্সিটি ইন অস্ট্রেলিয়ার ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিভাগের লেকচারার টিম ক্রোনিন, কানাডার সাইমন ফ্রেসার ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক য়্যুথিকা গ্রিম।    

এই গবেষকরা দাবি করেছেন, একাকী জীবন বেছে নেওয়া অসংখ্য মানুষ নিজেকে নিয়ে সুখী এবং তারা সুন্দরভাবে জীবন যাপন করছে।

সম্পর্কে জড়ানো নিয়ে উদ্বিগ্ন একাকিদের নিয়ে অনেক কিছু করার আছে, যেন জীবন নিয়ে খুশি থাকে তারা; এমন পরামর্শও রেখেছে এই গবেষণা।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত