Beta
সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫

১১ প্রকল্পে ধীর গতি : বিশ্ব ব্যাংকের ৫০ কোটি ডলার যোগ হতে পারে বাজেট সহায়তায়

SS-world-bank-budget-support-250225
[publishpress_authors_box]

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চলমান ধীর গতির ১১ প্রকল্প থেকে ৭০ কোটি ডলার কাটছাঁট করে ৫০ কোটি ডলার সরকারকে বাজেট সহায়তা হিসেবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তারা আরও জানিয়েছেন, বাকি ২০ কোটি ডলার অন্য প্রকল্পে অর্থায়নের সিদ্ধান্তও আসতে পারে।

বাংলাদেশের জন্য ৬০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা অনুমোদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

বিশ্ব ব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা প্রকল্প সহায়তার পাশাপাশি বাজেট সহায়তাও দিয়ে থাকে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ হিসেবে সহায়তা দেয় তারা। এছাড়া সরকারকে অনেকটা নগদ অর্থ হিসেবে বাজেট সহায়তা দেয়। এই অর্থ সরকার নিজের মতো করে খরচ করতে পারে।

তবে দুই ক্ষেত্রেই নানা ধরনের সংস্কারের শর্তও থাকে। বাজেট সহায়তা ঋণে প্রকল্প ঋণের চেয়ে নমনীয় শর্ত থাকে।

এ বিষয়ে ইআরডির বিশ্ব ব্যাংক অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে সদ্য নিয়োগ পাওয়া ড. এ কে এম শাহাবুদ্দিন বলেন, “ঋণদাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে চুক্তির সময়ে বেশ কিছু শর্ত থাকে। এর মধ্যে একটি শর্ত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প থেকে চুক্তিকৃত অর্থ অন্য কোনও প্রকল্পে ব্যবহার করতে পারবে। তবে সেই ক্ষেত্রে তাদের অনুমোদন নিয়ে করতে হবে।

“সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ধারাবাহিক কয়েকটি বৈঠক করে বাস্তবায়নে ধীর গতির কয়েকটি প্রকল্পের তালিকা বাছাই করা হয়েছে।”

তিনি জানান, মাত্র তিনদিন আগে এই অনুবিভাগে যোগ দেওয়ায় তিনি এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু জানেন না।

গত আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাজেট সহায়তা হিসেবে অতিরিক্ত সহায়তা চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকও প্রতিশ্রতি দেয় বলে জানান ইআরডির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, এরপর অক্টোবর মাসে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল ইআরডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করে ১১টি ধীরগতির প্রকল্প বাচাই করে। এসব প্রকল্প থেকে ৭০ কোটি ১ লাখ ডলার কাটছাঁট করা যায় বলে বৈঠকে উভয় পক্ষ সিদ্ধান্তে আসে।

ইআরডির ওই কর্মকর্তা বলেন, এসব প্রকল্পের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে মোট ৩১৭ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের চুক্তি হয়। গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত এসব প্রকল্পের বিপরীতে ছাড় হয়েছে মাত্র ৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। পড়ে আছে আরও ২৪৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।

এই ১১ প্রকল্পের মধ্যে কিছু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে আবার সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে; আবার কিছু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে থাকলেও বাস্তবায়ন ও অর্থছাড় খুবই নগন্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ইআরডি ও বিশ্ব ব্যাংকের ওই যৌথ সভায় অলিখিত সিদ্ধান্ত হয় যে এই ১১ প্রকল্পে পড়ে থাকা চুক্তিকৃত বৈদেশিক ঋণ থেকে প্রকল্পগুলো চলমান রেখেও অন্তত ৭০ কোটি ১ লাখ ডলার কেটে নেওয়া যায়।

বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে এই তহবিল থেকে ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা হিসেবে এবং বাকি অর্থ অন্য প্রকল্পে (রিপারপাস) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

ওই কর্মকর্তা জানান, এমন প্রেক্ষাপটে দুই পক্ষের যৌথ সভার ওই সিদ্ধান্ত প্রস্তাব আকারে বিশ্ব ব্যাংকের কাছে পাঠিয়েছে ইআরডি।

আগামী মাসে বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজারের বাংলাদেশ সফরকালে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলেও জানান তিনি।

কোন প্রকল্প থেকে কত কাটছাঁট

হায়ার এডুকেশন অ্যাক্রেডিটেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট থেকে কাটা হচ্ছে- ৫ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এই প্রকল্পের জন্য চুক্তি করা হয়েছিল ১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার।

এক্সেলারেটিং অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং স্কিলস ফর ইকোনমিক ট্রান্সফরমেশন। এই প্রকল্পে চুক্তি ছিল ৩০ কোটি ডলারের আর কেটে নেওয়া হবে ১০ কোটি ৩ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ এনভায়রমেন্ট সাসটেইনিবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট—এই প্রকল্প থেকে কাটা হবে সাড়ে ৬ কোটি ডলার। মূল চুক্তিতে দেওয়া কথা ছিল ২৫ কোটি ডলার।

এনহেন্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকনোমি প্রজেক্ট থেকে কাটা হবে ১০ কোটি ডলার। সংশোধিত চুক্তি ছিল ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের।

বাংলাদেশ নিরাপদ সড়ক প্রকল্প থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে সাড়ে ৭ কোটি ডলার। মূল চুক্তিতে ছিল ৩৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের।

প্রাণি সম্পদ ও দুগ্ধজাত উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কেটে নেওয়া হবে ১০ কোটি ডলার। মূল চুক্তিতে ছিল ৫০ কোটি ডলার।

সাসটেইনেবল ফরেস্ট অ্যান্ড লাইভলিহুড প্রজেক্ট থেকে কেটে নেওয়া হবে ১ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। মূল চুক্তি ছিল ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের।

ঢাকার প্রতিবেশী শহরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কেটে নেওয়া হবে ২ কোটি ২০ লাখ ডলার। সংশোধিত চুক্তিতে দেওয়ার কথা ছিল ৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।

বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ এবং ডিজিটাল উদ্যোক্তা বান্ধব প্রকল্প। এই প্রকল্প থেকে ৭ কোটি ডলার কেটে নেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। মূল চুক্তি করা হয়েছিল ৫০ কোটি ডলারের।

জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযোজন ঝুঁকি হ্রাস প্রকল্প থেকে নেওয়া হবে ১০ কোটি ডলার। মূল চুক্তি ছিল ৫০ কোটি ডলারের।

ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট থেকে কাটা হচ্ছে- ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। প্রকল্পটির জন্য সংশোধিত চুক্তি ছিল ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত