Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫

পরিবর্তনটা কী হলো, প্রশ্ন সোহেল তাজের

জেল হত্যা দিবস জাতীয়ভাবে পালনের দাবি জানিয়ে রবিবার প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিতে যান তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ।
জেল হত্যা দিবস জাতীয়ভাবে পালনের দাবি জানিয়ে রবিবার প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিতে যান তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ।
[publishpress_authors_box]

জেল হত্যা দিবসে জাতীয় চার নেতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বাধা পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ।

দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদপুত্র বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছিল, দেশে এখনও তার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছেন না তিনি।

জেল হত্যা দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনসহ তিন দাবিতে রবিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্মারকলিপি দিতে পদযাত্রা শুরুর আগে সাংবাদিকদের একথা বলেন সোহেল তাজ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বন্দি করা হয়েছিল তার ঘনিষ্ঠ সহচর চার আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে। পরে ৩ নভেম্বর কারাগারে তাদের হত্যা করা হয়।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালেও জেল হত্যা দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেছিলেন সোহেল তাজ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও একই দাবিতে স্মারকলিপি দিলেন তিনি।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সকালে বনানী কবরস্থানে সৈয়দ নজরুল, তাজউদ্দীন ও মনসুর আলীর কবরে ফুল দিতে গিয়ে বাধা মুখে পড়তে হয়েছিল অনেককে।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালর সামনে বিকালের কর্মসূচিতে এসে সোহেল তাজ সকালের প্রসঙ্গ ধরে বলেন, “একজনের মৃত্যুবার্ষিকী, এটা সবার অধিকার আছে পালন করার। সবার অধিকার আছে নাগরিক হিসাবে। আমরা যদি একই স্বৈরাচারী কায়দায় কাজ করি, তাহলে পরিবর্তনটা কী হলো?”

সোহেল তাজ এক সময় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থাকলেও এক দশক ধরেই দলটি থেকে বিচ্ছিন্ন তিনি। রবিবারের কর্মসূচি পালনের সময় তার সঙ্গে ছিলেন বড় বোন শারমিন আহমেদ ও বোনের ছেলে।

তাদের কর্মসূচি ছিল পদযাত্রা করে যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া। তবে কর্মসূচি শুরুর আগেই প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের প্রতিনিধি এসে স্মারকলিপি নিয়ে যাওয়ায় পদযাত্রা করতে হয়নি তাদের।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে প্রতিনিধি এসে সোহেল তাজের স্মারকলিপি নিয়ে যায়।

নিজের কর্মসূচির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষার যোগসূত্র তুলে ধরে সোহেল তাজ বলেন, “সুন্দর, আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০২৪ সালে যে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, যে আশা-আকাঙ্ক্ষা, সেটি এবং আমার যে তিন দাবি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ একই সূত্রে গাথা।”

মুক্তিযুদ্ধে যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, তার সঙ্গেও এবারের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার মিল পাওয়ার কথা বলেন তিনি।

সোহেল তাজ বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ করতে হবে, ২০২৪ এ যারা আত্মাহুতি দিয়েছে, যারা আধুনিক বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদেরকেও স্মরণ করতে হবে।”

আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিল যেই দল, সেই দল সরকারে থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আমরা আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। কোনও না কোনও স্বার্থের কারণে তা তুলে ধরা হয়নি।

“এটা চিন্তা করলে আমি বিস্মিত হই, অবাক হই, আশ্চর্য হই, কেন এটা করা হলো না? কেন নতুন প্রজন্মের কাছে সম্পুর্ণ ইতিহাসটা খোলাসাভাবে তুলে ধরলাম না? কেন নতুন প্রজন্মকে যাচাই করার সুযোগ দিলাম না কার কী অবদান ছিল? মনে রাখতে হবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। সকলকে তার প্রাপ্য দিতে হবে।”

কর্মসূচিতে সোহেল তাজের সঙ্গে ছিলেন তার বড় বোন শারমিন আহমেদ।

সোহেল তাজের তিন দাবির মধ্যে বাকি দুটি হচ্ছে- ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার গঠনের দিন ১০ এপ্রিল ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসাবে পালন এবং জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ও জীবনী, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যথাযথভাবে তুলে ধরা।

এই তিন দফা বাস্তবায়নে লড়ে যাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি নিজে একটু লজ্জিত। হয়ত আপনাদের কাছে মনে হবে যে আমি সন্তান হয়ে বাবার অবদানের দাবি নিয়ে এসেছি। আমি সেজন্য আসিনি। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমার বাবা-মার আত্মা শান্তি পাবে যদি এই বাংলাদেশ সুন্দর বাংলাদেশ হয়। সেই তাড়না থেকে এই পদযাত্রা।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি ‘সুবর্ণ সুযোগ’ পেয়েছেন বলে মনে করেন সোহেল তাজ।

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, সংস্কারের মূল লক্ষ্য ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান আর মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা। অতি সত্বর দাবিগুলো বাস্তবায়ন হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত