সারাজীবন বিনোদন জগত থেকে নাম যশ কামিয়ে শেষমেশ ধর্মে-কর্মে থিতু হয়েছেন এমন তারকার গল্প আমরা মাঝে মাঝেই শুনি। বাংলাদেশ, ভারত কিংবা পাকিস্তানের বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে এ আর নতুন কী।
এই দেশগুলোর সাধারণ মানুষ ধর্মপ্রাণ। ধর্মের প্রতি একটি সাধারণ দুর্বলতা সবসময়ই দেখা যায় এইসব দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাঝে।
তাই জীবনের কোন এক পর্যায়ে বিনোদন তারকাদের ধর্মে-কর্মে মনোযোগী হয়ে পড়া এই দেশগুলোর বিনোদন জগতের মোটামুটি স্বাভাবিক ঘটনা।
তাই বলে যে দেশের জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশই ধর্মহীন তেমন কোন দেশে এই ঘটনা ঘটে গেলে তাতে আশ্চর্য হবার কিছু আছে বৈকি।
দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক কে-পপ তারকা জে-কিমের ব্যাপারটি অনেকটা তেমনই।
জানা যায়, ২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলার পর ‘জে কিম’ ইসলাম শব্দটির সঙ্গে পরিচিত হতে থাকেন। একসময় তার মনে হতো ইসলাম মানেই জঙ্গিবাদ। কিন্তু পরে তার ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা নানান প্রান্তের মুসলমানদের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটতে থাকে। যাদের তার অমায়িক আর ভালোমানুষ বলেই মনে হতো।
ফলে ধীরে ধীরে ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করেন কিম এবং ইন্দোনেশিয়াতে এক কনসার্ট শেষ করে ইসলাম গ্রহণ করবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
সম্প্রতি এই তারকা মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার এই ইউটিউবার এবং সাবেক কে-পপ তারকা একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নিলে স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে তা ভেস্তে যায়। ২০২০ সালে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হবার পর জে-কিমের এটি মসজিদ নির্মাণের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা।
কোরিয়া হেরাল্ড জানাচ্ছে, এই মসজিদ বানাতে তিনি তার ভক্তদের প্রতি সাহায্যের আবেদন করেছিলেন।
ধর্মান্তরিত হয়ে নিজের নাম পালটে ফেলেন জে-কিম। তার বর্তমান নাম দাউদ কিম।
ইনচিওনে দাউদ ওরফে জে-কিমের মসজিদ বানানোর পরিকল্পনাটি এখন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে নানা কারণে।
দাউদ মসজিদ নির্মাণ করতে যে জমিটি বেছে নিয়েছিলেন সেটি সিওলের ক্যাপিটাল এরিয়ার মধ্যে পড়েছে।
২০১৫ সালের কোরিয়ার আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, কোরিয়ার ৫ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৫৬ শতাংশ ধর্মহীন, ১৯ শতাংশ প্রোটেস্ট্যান্ট, ১৫.৫ শতাংশ বৌদ্ধ এবং ৮ শতাংশ ক্যাথলিক।
এই যদি হয় সেখানকার চিত্র তাহলে মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি কেন এলো- স্বাভাবিকভাবেই এ প্রশ্ন এসে যায়।
জানা যায়, দেশটিতে বসবাসরত মুসলমান জনগোষ্ঠীর পুরোটাই প্রবাসী। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার জন শ্রমিক। যারা উজবেকিস্তান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়ার অধিবাসী। আর ৩০ হাজার হলো শিক্ষার্থী এবং ব্যবসায়ী।
তাহলে বাধাটা কোথায়?
দাউদ কিম ইনচিওনে জমি কেনার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেও, জমির মালিক চুক্তি বাতিলের জন্য তাকে অনুরোধ করেছিলেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দারাও এই জমিতে মসজিদ নির্মাণের বিরোধিতা করতে থাকে।
তাদের দাবি, এখানে মসজিদ নির্মিত হলে এলাকার জমির দাম নাকি কমে যাবে।
মালিকপক্ষের দাবি, তারা নাকি রিয়াল এস্টেট এজেন্টকেও বিক্রির চুক্তি ইতিমধ্যে বাতিল করতে বলেছেন।
দ্য কোরিয়া হেরাল্ড বলছে, কিমের প্রস্তাবিত মসজিদের জমির কাছাকাছি অমুসলিম কোরিয়ান বাসিন্দারা এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্থানীয় বাধার পাশাপাশি প্রশাসনিক বাধার মুখেও পড়েছেন দাউদ কিম। ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণের জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে ছাড়পত্র না পাওয়ার তথ্যই দিচ্ছে পত্রিকাটি।
এরই মধ্যে আবার দাউদ কিমের নামে আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগও উঠেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার টিভি চ্যানেল জেটিবিসি সহ বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম কিমের নামে এই অভিযোগ তুলেছে।
জানা যায়, মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ এটাই কিমের প্রথম নয়। এর আগে তিনি দায়েগুতে মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। কিন্তু সেটিও স্থানীয়দের প্রতিরোধে ভেস্তে যায়।
দায়েগুর মসজিদ প্রকল্পের তহবিলেই কিম নাকি কারচুপি করেছেন।
দাউদ কিমের স্ত্রী মিয়া ২০২০ সালে তার সাথেই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন।
সাবেক এই কে-পপ তারকার ব্যক্তিগত জীবন বিতর্কে জর্জরিত।
নারী নির্যাতনের অভিযোগ ঝুলছে দাউদের মাথার উপর । তিনি নাকি তার স্ত্রীকে মারধর করেছেন। স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স এড়াতে বাড়ি থেকে নাকি পালিয়েও বেড়াচ্ছেন ধর্মান্তরিত সাবেক এই কে-পপ স্টার।