দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট উন সুক-ইয়েলের মার্শাল ল’ বা সামরিক আইন জারির ব্যর্থ প্রচেষ্টা ঘিরে দেশটির রাজনীতিতে বিদ্যমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার প্রেসিডেন্ট দপ্তরে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
একইদিন জানা গেছে, সামরিক আইন জারির ব্যর্থ প্রচেষ্টার দায় মাথা পেতে নেওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট উন সুক ইয়েল গত ৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে হঠাৎ করেই টেলিভিশনে এক বিশেষ ভাষণে দেশে মার্শাল ল’ জারির ঘোষণা দেন। তবে পার্লামেন্ট সদস্যদের বিরোধিতার মুখে কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি তা প্রত্যাহারে বাধ্য হন। এরপর থেকে এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার এক প্রতিবেদনে আল জাজিরা জানায়, গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্টের মার্শাল ল’ জারির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ওই ঘটনা তদন্তের অংশ হিসেবে বুধবার তার দপ্তরে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে অভিযানের সময় প্রেসিডেন্ট তার দপ্তরে ছিলেন না।
বিবিসি বলছে, যে রাতে মার্শাল ল’ জারি করা হয়েছিল, সেই রাতে প্রেসিডেন্টের দপ্তরে হওয়া বিভিন্ন বৈঠক সংক্রান্ত তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করছে তদন্তকারীরা। এর অংশ হিসেবেই বুধবার প্রেসিডেন্ট দপ্তরে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে।
এর পাশাপাশি মার্শাল ল’ জারির চেষ্টা সম্পর্কিত তথ্যের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল পুলিশ এজেন্সি, সিউল মেট্রোপলিটন পুলিশ এজেন্সি ও ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি পুলিশ গার্ডের দপ্তরেও তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে।
এদিকে এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের মার্শাল ল’ জারির ব্যর্থ প্রচেষ্টার দায় নেওয়া দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-হিয়ুন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিচার মন্ত্রণালয়ের সংশোধন সংস্থার প্রধান শিন ইয়ং-হায়ে মঙ্গলবার রাতে দেশটির পার্লামেন্টে জানান, আটক কেন্দ্রে থাকা অবস্থায় সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। তবে তার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল রয়েছে।
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্টের মার্শাল ল’ জারির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরপরই আরও কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সঙ্গে পদত্যাগ করেছিলেন কিম ইয়ং-হিয়ুন। পরে তদন্তের অংশ হিসেবে গত রবিবার তাকে আটক করা হয়।
সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পাশাপাশি অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল পুলিশ এজেন্সি ও সিউল মেট্রোপলিটন পুলিশ এজেন্সির প্রধানদেরও আটক করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনে আবার উদ্যোগ
দেশে মার্শাল ল’ জারির চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট উন সুক-ইয়েলকে অভিশংসনে আবার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির বিরোধীদল ডেমোক্রেটিক পার্টি। প্রথমবার প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের উদ্যোগ ব্যর্থ হলেও এবার এক্ষেত্রে সফল হওয়ার আশা করছে দলটি।
এর আগে ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারির ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর প্রেসিডেন্ট ইয়েল পার্লামেন্টে অভিশংসনের মুখে পড়েছিলেন। তবে প্রেসিডেন্টের দল পিপল পাওয়ার পার্টি সেই প্রস্তাবে সমর্থন না দেওয়ায় প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের অভাবে সে যাত্রায় টিকে যান ইয়েল।
প্রেসিডেন্ট ইয়েলে বিরুদ্ধে বর্তমানে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের তদন্ত চলছে। বিদেশ ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় বিরোধীরা প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনে সফল হলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু সাময়িকভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে পারেন। এরপর দেশটির সাংবিধানিক আদালত ঠিক করবে– উন সুক-ইয়েল প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহাল থাকবেন না কি পদ হারাবেন।
এদিকে তার দল পিপল পাওয়ার পার্টি বলেছে, প্রেসিডেন্ট ইয়েলকে অভিশংসনের দ্বিতীয় উদ্যোগেও তার দল সমর্থন দেবে না, বিনিময়ে প্রেসিডেন্ট ইয়েল রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি থেকে দূরে থাকার এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পদত্যাগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।