Beta
সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫

দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টও অভিশংসনের মুখে

দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু।
দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু।
[publishpress_authors_box]

প্রেসিডেন্টের পর এবার দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টও অভিশংসন মুখে পড়েছেন। শুক্রবার দেশটির পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে আনা বিরোধী দলের অভিসংশন প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হচ্ছে।

একই দিনে প্রেসিডেন্ট উন সুক ইয়েলের সামরিক আইন জারির বিষয়েও সাংবিধানিক আদালতে প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি দেশটির রাজনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করছে।

প্রেসিডেন্ট ইয়েল গত ১৪ ডিসেম্বর অভিশংসিত হওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া ২০২২ সালের মে মাস থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

তাকে অভিশংসনের উদ্যোগ দক্ষিণ কোরিয়ার গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যা দেশটির মিত্রদের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

বিরোধী দলের নেতা লি জে-মিয়ং জানিয়েছেন, সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা তার ডেমোক্রেটিক পার্টি ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। তিনি হান ডাক-সুকে ‘বিদ্রোহে সমর্থনকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন।

এক উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতায় লি বলেন, “দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার একমাত্র পথ হলো বিদ্রোহী শক্তিগুলোকে দ্রুত নির্মূল করা।” তিনি আরও জানান, তাদের দল জনগণের নির্দেশ অনুযায়ী দেশকে বিপদে ফেলা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে।

মতামত জরিপে দেখা গেছে, সামরিক আইন প্রয়োগের চেষ্টা করার পর থেকে উন সুক ইয়েলকে অপসারণের পক্ষে জনগণের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে।

ডেমোক্রেটিক পার্টি বৃহস্পতিবার হানের অভিশংসনের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। কারণ, হান সাংবিধানিক আদালতের শূন্য তিনটি পদে নতুন বিচারপতি নিয়োগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, এই নিয়োগ তার ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বের সীমা অতিক্রম করবে।

হানকে অভিশংসনের জন্য কতগুলো ভোট প্রয়োজন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রধানমন্ত্রীকে অভিশংসনের জন্য সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট প্রয়োজন হয়। হান এবং শাসক দল এই সিদ্ধান্ত মানবেন কি না, তা-ও নিশ্চিত নয়।

যদি হান সাময়িকভাবে বরখাস্ত হন, তাহলে আইন অনুযায়ী অর্থমন্ত্রী চোই সাং-মক ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন।

তবে অর্থমন্ত্রী হানকে অপসারণের বিরোধিতা করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের অভিশংসন দেশের অর্থনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।

চোই আরও বলেন, “জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে অর্থনীতি ও জনগণের জীবিকা খুবই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আরেকজন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেওয়ার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না।”

প্রেসিডেন্ট উন সুক ইয়েল।

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গভীর রাজনৈতিক সংকট

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট গত ৩ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই সামরিক আইন জারি করলে দেশটি ১৯৮৭ সালের পর সবচেয়ে গুরুতর রাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের এমন ঘোষণা দেশটির সবাইকে হতবাক করে দেয়। কারণ, দেশটি গত চার দশক ধরে নিজেকে একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র হিসাবে গড়ে তুলেছে। সেখানে নিয়মিত প্রতিবাদ এবং সুরক্ষিত স্বাধীনতা বিদ্যমান, যা রক্তাক্ত স্বৈরাচারী শাসনের দীর্ঘ ইতিহাস অতিক্রম করে অর্জিত হয়েছে।

ফরে তার ঘোষণার দুই ঘণ্টার মধ্যেই সংসদ সদস্যরা জাতীয় পরিষদে একত্রিত হয়ে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য ভোট দেন।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ১৯০ জন সংসদ সদস্য সামরিক বাহিনী ও পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ইয়েলের আদেশের বিরুদ্ধে ভোট দেন। ঘোষণার ছয় ঘণ্টার মধ্যেই ইয়েল তার সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।

এরপর, প্রেসিডেন্টকে অপসারণে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হয়।

নানা নাটকীয় ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর পার্লামেন্ট ইয়েলকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়।

৩০০ জন আইনপ্রণেতার মধ্যে ২০৪ জন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করার পক্ষে ভোট দেন। অভিশংসন প্রস্তাব পাস হতে ২০০ ভোট প্রয়োজন হয়। প্রস্তাবটি পাস করাতে ইয়েলের নেতৃত্বাধীন পিপল পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) আটজন পার্লামেন্ট সদস্যকে পক্ষ পরিবর্তনের জন্য রাজি করায় বিরোধীরা।

তবে অভিশংসন বাস্তবায়নের জন্য সাংবিধানিক আদালতের রায় প্রয়োজন হয়। এই বিষয়েও শুক্রবার সাংবিধানিক আদালতে প্রথম শুনানি হবে।

অভিশংসন প্রস্তাব পাস হওয়ায় ইয়েল এখন সাময়িকভাবে বরখাস্ত অবস্থায় আছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত পার্লামেন্টের ভোটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। ইয়েলের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য আদালতের হাতে ১৮০ দিন সময় আছে।

ইয়েল এবং তার প্রশাসনের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহের অভিযোগে ফৌজদারি তদন্ত চলছে।

দক্ষিণ কোরিয়া গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন শুরু হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে তৎকালীন সামরিক শাসক দল একটি সাংবিধানিক সংশোধনী গ্রহণে বাধ্য হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে সরাসরি জনগণের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরু হয়েছিল।

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসনের ঘটনা নতুন নয়। নিজেকে একটি আধুনিক ও সফল গণতন্ত্র হিসেবে দেখা দেশটি এর আগেও একাধিকবার এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। দেশটির এর আগের ৭ জন প্রেসিডেন্টের মধ্যে ৪ জনই দুর্নীতির অভিযোগে অভিশংসিত বা কারাবন্দি হয়েছেন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত