সম্পূর্ণ নতুন এক মিশন চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন মহাকাশ কোম্পানি স্পেসএক্স।
বৃহস্পতিবার স্পেসএক্স পরিচালিত মহাকাশ মিশন ‘পোলারিস ডন’ এমন কিছু করেছে যা আগে কখনও হয়নি। এই প্রথমবারের মতো বেসরকারিভাবে বেসামরিক ব্যক্তিরা তথা অপেশাদার নভোচারীরা ‘স্পেসওয়াক’ করেন বা মহাকাশে হাঁটেন।
মঙ্গলবার সকালে শুরু হয় স্পেসএক্সের এই নতুন রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা। পাঁচ দিনের এই মিশনে আগের যেকোনও মহাকাশযাত্রার তুলনায় পৃথিবী থেকে আরও বেশি (১৪০০ কিলোমিটার) দূরে মানুষ পাঠানো হয়।
মিশন পোলারিস ডনের নেতৃত্বে রয়েছেন ৪১ বছর বয়সী বিলিওনেয়ার উদ্যোক্তা জ্যারেড আইজ্যাকম্যান ও স্পেসএক্সের দুই কর্মচারী এবং একজন সাবেক সামরিক পাইলট।
জ্যারেড আইজ্যাকম্যান ইলেকট্রনিক পেমেন্ট কোম্পানি ‘শিফট ফোরের’ প্রতিষ্ঠাতা। পুরো অভিযাত্রা তার অর্থায়নেই হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে স্পেসএক্সের সঙ্গে যৌথভাবে ‘ইনস্পিরেশন ৪’ মিশনেও অর্থায়ন করেছিলেন তিনি। এর আগেও তার মহাকাশে যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে কখনও মহাকাশে বের হননি।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা ৫২ মিনিটে তাদের স্পেসওয়াক শুরু হয়। উপবৃত্তকার কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণরত একটি ক্যাপসুল থেকে পরপর বেরিয়ে আসেন বিলিয়নেয়ার আইজ্যাকম্যান ও স্পেসএক্স প্রকৌশলী সারাহ গিলিস। অভিযানে অংশ নেওয়া অন্য দুজন ক্যাপসুলের ভেতরেই ছিলেন।
প্রথমে আইজ্যাকম্যান এবং তার ১৫ মিনিট পর গিলিস যখন ক্যাপসুল থেকে মুক্ত আকাশে মাথা বের করেন তখন তারা ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭০০ কিলোমিটার উপরে ছিলেন। আর ক্যাপসুলটি ঘণ্টায় ৩০ হাজার কিলোমিটার বেগে ছুটছিল। ক্যাপসুলের সঙ্গে কোমরে বেল্ট বাঁধা অবস্থায় তারা প্রায় ২০ মিনিট মহাশূন্যে ভাসেন। তবে তারা ক্যাপসুল থেকে পুরোপুরি বের হননি।
মহাকাশে মাথা বের করে আইজ্যাকম্যান বিস্ময়ে বলেছিলেন, “বাড়িতে ফিরে আমাদের সবার অনেক কাজ আছে, কিন্তু এখান থেকে পৃথিবী নিশ্চিতভাবে একটি নিখুঁত বিশ্বের মতো দেখায়।”
এটি বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক স্পেসওয়াক। এর মধ্য দিয়ে উম্মুক্ত মহাকাশে বিচরণের নতুন অধ্যায় লেখা শুরু হয়েছে।
এর আগে শুধুমাত্র সরকারিভাবেই মহাকাশে হাঁটার মিশন পরিচালিত হয়েছে। ইলন মাস্কের স্পেসএক্স এখন একমাত্র প্রাইভেট কোম্পানি যা মানুষকে মহাকাশে বসবাস ও কাজের জন্য নিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসাও এর উপর নির্ভর করে।
পোলারিস ডন নাসার কোনও মিশন নয়। এর উপর যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। সুতরাং যখন এর মহাকাশচারীরা মহাকাশে ‘হাঁটাহাঁটি’ করেছে, তখন এটি ছিল প্রাইভেট ইন্ডাস্ট্রির জন্য সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে তারাও এখন পৃথিবীর বাইরের রাজ্যে আধিপত্য শুরু করল।
তবে এতে একটি প্রশ্ন উঠেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র কি এর মধ্য দিয়ে মহাকাশে কীভাবে কাজ করতে হবে সে সম্পর্কে ৫০ বছর আগে করা নিজের প্রতিশ্রুতিই ভঙ্গ করছে?
স্নায়ু যুদ্ধকালীন মহাকাশ চুক্তি নতুন পরীক্ষার মুখোমুখি
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব স্পেস সেফটির নির্বাহী পরিচালক টোমাসো এসগোব্বা।
তিনি আল জাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “এই মিশন মহাকাশ চুক্তির ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে।”
১৯৬৭ সালে যখন স্নায়ুযুদ্ধ এবং মহাকাশ প্রতিযোগিতা তুঙ্গে ছিল তখন জাতিসংঘ সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বিশ্বশক্তিকে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য টেবিলে নিয়ে আসে। চুক্তিতে চাঁদ এবং অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তুসহ মহাকাশের অন্বেষণ এবং ব্যবহারে কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়। সব রাষ্ট্রকে সেই নীতিমালা মেনেই মহাকাশে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। চুক্তিটি সাধারণভাবে আউটার স্পেস ট্রিটি (ওএসটি) নামে পরিচিত।
ওই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর কাছ থেকে এই প্রতিশ্রুতিও আদায় করা হয় যে, তারা তাদের পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র পৃথিবীতেই রাখবে, মহাকাশে স্থাপন করবে না। এই প্রতিশ্রুতির কারণে চুক্তিটি বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে। কিন্তু ওএসটি-তে আরেকটি প্রতিশ্রুতিও অন্তর্ভুক্ত ছিল— মহাকাশের অন্বেষণ এবং ব্যবহার সমগ্র মানবতার উপকারের জন্য এবং সব জাতির জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মহাকাশ হবে অন্বেষণ এবং শেখার জায়গা, জয় করার নয়।
চুক্তিটিতে মহাকাশে বেসরকারি সংস্থাগুলোর জন্যও একটি নিয়ম নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “চাঁদ এবং অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তুসহ মহাকাশে বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের জন্য চুক্তিতে থাকা যথাযথ রাষ্ট্র পক্ষের অনুমোদন এবং অব্যাহত তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন হবে।”
কার্যত, ওএসটি ঘোষণা করে যে, কোনও কোম্পানি যে দেশের মাটি থেকে মহাকাশে যাত্রা করবে সেই দেশ ওই কোম্পানির কার্যক্রমের জন্য দায়ী থাকবে এবং কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়ও নেবে।
ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব এয়ার অ্যান্ড স্পেস ল-এর সাবেক পরিচালক রাম জাখু বলেন, “চুক্তিটি আজ আরও বেশি প্রাসঙ্গিক এবং আগামী দিনেও থাকবে। যদি ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ গৃহীত না হত, তবে এই চুক্তিটি করা অসম্ভব ছিল।”
কারণ সোভিয়েত ইউনিয়ন চেয়েছিল শুধু কোনও রাষ্ট্রকে মহাকাশে কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ দিতে। কিন্তু আমেরিকানরা ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর জন্যও সেই সুযোগ রাখতে চায়।
জাখু ব্যাখ্যা করেন, “সুতরাং ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর জন্য একটি আপস করা হয়েছিল, তাদের নিজ নিজ রাষ্ট্রের অনুমতি, অনুমোদন, তত্ত্বাবধান ও দায়িত্ব সাপেক্ষে। এটি একটি মৌলিক বিষয়।”
বেসরকারি সংস্থাগুলো এখন আর শুধু জাতীয় মহাকাশ সংস্থাগুলোর যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী নয়, তারা নিজেরাই এখন অনুসন্ধানকারী। ভার্জিন গ্যালাকটিক এবং ব্লু অরিজিন পর্যটকদের জন্য স্পেসফ্লাইট পরিচালনা করে। এক সময়ের ছোট স্টার্টআপ রকেটল্যাব শুক্র গ্রহের মেঘে একটি ব্যক্তিগত বিজ্ঞান মিশন পরিকল্পনা করছে। স্পেসএক্স মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর জন্য চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র কি এখনও তাদের ‘দেখভাল’ করে
ফেডারেল এভিয়েশন এজেন্সি আল জাজিরাকে ইমেইলের মাধ্যমে বলেছে, “না। ফেডারেল আইনের অধীনে এফএএ বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত মাহাকাশ যাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তার জন্য প্রবিধান জারি করতে পারে না।”
এই কাঠখোট্টা উত্তর কোনও দুর্ঘটনা নয়। এটাই যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতি। ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট তার বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রকের তত্ত্বাবধান সীমিত করে এনেছে, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন উদ্যোগের জন্য নিয়ম প্রণয়নের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে। স্থগিতাদেশ একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে এবং চলমান স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালে।
এফএএ শুধুমাত্র রকেট এবং মহাকাশযানকে প্রত্যায়িত করে এবং নিশ্চিত করে, তারা পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য নিরাপদ। সংস্থাটি বলেছে, “পোলারিস ডন মিশনের কার্যক্রমের উপর এফএএ-এর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।”
মহাকাশযাত্রীরা সম্মতি পত্রে স্বাক্ষর করেছে যে, যখন তারা স্পেসওয়াক করবে, শুধুমাত্র স্পেসএক্স তাদের দেখভাল করবে।
আল জাজিরা নাসার সঙ্গেও যোগাযোগ করলে তারা নিশ্চিত করেছে যে, পোলারিস ডন মিশনে সংস্থাটির কোনও সম্পৃক্ততা নেই। (মিশনের ফ্যালকন ৯ রকেটটি কেনেডি স্পেস সেন্টার লঞ্চপ্যাড থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, যা ইলন মাস্ক লিজ নিয়েছেন)। স্পেসএক্স ইমেইলের মাধ্যমে পাঠানো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।
মহাকাশে হাঁটা থেকে অর্জন কী
মহাকাশ ভ্রমণের ইতিহাসজুড়ে মাহাকাশে হাঁটার ঘটনাগুলো মানুষের প্রয়োজনীয়তা এবং মানুষের দুর্বলতার মধ্যে সংকীর্ণ ব্যবধানকে সেতুবন্ধন করেছে।
১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র যখন মহাকাশে ছুটছিল, তখন সেখানে পৌঁছানো যথেষ্ট ছিল না; উভয় দেশই চেয়েছিল তাদের নভোচারীরা তাদের ক্যাপসুল ছেড়ে বাইরে বের হোক।
১৯৬৫ সালে মাত্র কয়েকমাসের মধ্যে উভয় দেশই তা করে। সে বছরের মার্চে সোভিয়েত মহাকাশচারী আলেক্সি লিওনভ এবং জুনে আমেরিকান নভোচারী এড হোয়াইট উভয়ই পৃথিবীর উপরের মহাকাশে ভেসেছিলেন। তবে উভয়ই তাৎক্ষণিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
লিওনভের স্যুটটি এতটাই প্রসারিত হয়েছিল যে তার মহাকাশযানে পুনরায় প্রবেশ করতে সমস্যা হয়েছিল এবং হোয়াইটের দরজাটি প্রায় বন্ধ হয়নি। এক বছর পর আরেকজন আমেরিকান নভোচারী মহাকাশে হাঁটতে গিয়ে অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে পড়েছিলেন।
কক্ষপথে তাপমাত্রা হয় খুব গরম বা খুব ঠান্ডা। ছোট ছোট উল্কাপিণ্ড এবং মহাকাশ আবর্জনা বুলেটের চেয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে আসে। বিকিরণ শরীরে আরও সহজে প্রবেশ করে। মহাকাশের বরফজমানো শীতলতা ঠেকানোর জন্য যে পোশাক পরা হয় তা অনমনীয় এবং ভারী। মহাকাশ-অসুস্থতায় আক্রান্ত মহাকাশচারীর বমি হতে পারে, দৃষ্টি অবরুদ্ধ হতে পারে বা তার শ্বাস আটকে যেতে পারে।
মাত্র এক দশক আগে, একজন ইতালীয় মহাকাশচারীর স্যুট ফুটো হয়ে গিয়েছিল এবং তার হেলমেটে থাকা সামান্য পরিমাণ পানি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নিরাপদে ফিরে আসার আগে তাকে প্রায় ডুবিয়ে মারছিল।
কিন্তু ঝুঁকি সত্ত্বেও মহাকাশে হাঁটা জরুরি। নভোচারীরা মহাকাশে ভেসে ভেসেই চাঁদের কাছে অ্যাপোলো মিশন থেকে ফটো ফিল্ম পুনরুদ্ধার করেছে, স্কাইল্যাব মেরামত করেছে, বহু বিলিয়ন ডলারের হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ঠিক করেছে এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন তৈরি করেছে। মহাকাশযানের বাইরে বের হয়ে মানুষ যা করতে পারে তা রোবট কখনও করতে পারেনি।
কার নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত মিশন
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই মিশনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওএসটি লঙ্ঘনের কোনও ঝুঁকি নেই।
জাখু বলেন, “চুক্তি অনুযায়ী সরকারগুলোর মহাকাশ কার্যক্রমের তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে বাধ্যতামূলক এমন কোনও নিয়ম নেই, যা এই শব্দটিকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করে এবং কার্যকরভাবে এই বাধ্যবাধকতা বাস্তবায়নের জন্য কোনও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিগত মান ও পদ্ধতিও নেই।
“এটি এমন একটি প্রশ্ন যা আগামী বছরগুলোতে আরও মনোযোগের দাবি রাখে।”
সেই অস্পষ্টতা– বা ব্যাখ্যার সুযোগ – চুক্তিটিকে অচল করে দেয় না। বরং, নতুন মহাকাশ প্রতিযোগিতায়, শক্তিশালী এবং উদীয়মান উভয় দেশই মহাকাশে ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন সংস্থাগুলো যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় তা নিশ্চিত করার জন্য’ এর উপর নির্ভর করতে পারে এবং করা উচিৎ।
প্রাইভেট কোম্পানিগুলো অচিরেই খনি বা নির্মাণের জন্য মহাকাশীয় বস্তুর ওপর অধিকার দাবি করার চেষ্টা করতে পারে। চুক্তির অনুচ্ছেদ ১-এর ভাগাভাগি ‘ব্যবহার’ নীতির মধ্যে এর অনুমোদনও দেওয়া যেতে পারে, যা সমুদ্রের নিয়ম বা বিশ্বব্যাপী রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহারের নিয়মের অনুরূপ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এই কার্যক্রমের জন্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে লাইসেন্স নেওয়া আবশ্যক।
জাখু বলেন, “এর অর্থ হল যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অবশ্যই এটা বিবেচনায় রাখতে হবে যে, তাদেরও এমন কোনও কাজ করা উচিৎ নয় যা তারা অন্য দেশগুলো করলে পছন্দ করবে না। এই কারণেই এই চুক্তিটি অটুট থাকবে।
“নতুন মহাকাশ প্রতিযোগিতায় বেসরকারি সংস্থাগুলোর কোনও নির্দিষ্ট দেশের প্রতি আনুগত্য নেই এবং তারা যে কোনও দেশের পতাকায় যেতে পারে।”
লিডেন ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক বায়ু ও মহাকাশ আইনের অধ্যাপক তানজা ম্যাসন-জওয়ান বলেন, “এই চুক্তিগুলো শুধু দেশগুলোর জন্যই উপকারি এমন নয়।
“একটু সামঞ্জস্যতা এই শিল্পের স্বার্থেও দরকার, যাতে তারা একাধিক দেশ থেকে কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তারা যুক্তরাষ্ট্রে বা লুক্সেমবার্গে ভিন্ন নিয়ম প্রয়োগ করতে চায় না।”
তিনি একমত যে, স্পেসএক্স-এর সাহসী মিশন ওএসটির অনুচ্ছেদ-১ এর মধ্যে পড়ে, যা মহাকাশের ‘মুক্ত ব্যবহারের’ অনুমতি দেয়।
নতুন মহাকাশ প্রতিযোগিতায় চুক্তিটি কতদিন টিকে থাকবে জানতে চাইলে তিনি আল জাজিরাকে ইমেইলে লিখেছেন, “চিরকাল!!”
তার মতে, “নতুন কার্যক্রমগুলোকে সমন্বয় করার জন্য এটি যথেষ্ট বিস্তৃত এবং নীতিগুলো মহাকাশের শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহার এবং অন্বেষণ সংরক্ষণের জন্য বজায় রাখা উচিৎ। এমনকি বেসরকারি কর্তারাও সম্মত হন যে, চুক্তিটি অবশ্যই রাখা উচিৎ এবং তারা এটির অধীনে কাজ করতে পারছে।”
কিন্তু ইউরোপে মহাকাশ অভিযান নিয়ন্ত্রণের কয়েক দশকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এসগোব্বা এ বিষয়ে একমত নন।
তিনি বলেন, “স্পেসএক্সের কিছু সেরা সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ রয়েছে এবং তারা নিশ্চিত যে তারা এই মিশনের সমস্ত ঝুঁকি মূল্যায়ন করেছে। তবে স্বাধীন তদারকির অভাবে কোথাও কোনও উন্মুক্ত সমস্যা থেকে যেতে পারে যা হয়তো তাদের চোখে পড়েনি।”
অগ্নিঝুঁকি এবং বায়ুচাপের তারতম্যজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি রয়েছে, ক্ষুদ্র উল্কাপিণ্ড ছাড়াও এসব মাহাকাশচারীদের বিপদে ফেলতে পারে। তার ধারণা, ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি বা নাসা পোলারিস ডনের জন্য ব্যবহৃত স্পেসএক্স ড্রাগন ক্যাপসুলটির সম্পূর্ণ পুনর্নবায়ন ছাড়া এই ধরণের মিশনে হয়তো অনুমোদন দিত না। এটি এর আগে আরও দুবার মহাকাশে গিয়েছে। এই নিয়ে মোট ১১ জনকে মহাকাশে নিয়েছে ক্যাপসুলটি।
এসগোব্বা এমন একটি আন্তর্জাতিক, স্বাধীন মহাকাশ নিরাপত্তা ইনস্টিটিউট দেখতে চায় যা মহাকাশ কোম্পানিগুলোর জন্য তৃতীয় পক্ষ হয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে।
এই অভিযানে ওএসটির কোনও লঙ্ঘন হয়েছে কিনা, ইমেলের মাধ্যমে আবার জিজ্ঞেস করা হলে এসগোব্বা তার প্রাথমিক মূল্যায়নে অনড় থাকেন।
তিনি বলেন, ““আমি বিশ্বাস করি যে, অনুচ্ছেদ-৬ ব্যাখ্যা করার খুব বেশি সুযোগ নেই। পোলারিস ডন মিশনের বড় অংশ যে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সরকারি সংস্থার অনুমোদন এবং অবিচ্ছিন্ন তত্ত্বাবধানের অধীন নয়, তা একটি সমস্যা হিসেবেই রয়ে গেছে।”
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন, স্পেস ডটকম