Beta
সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

অধ্যাপক আমিনুলের পদত্যাগের নেপথ্যে কী

অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম সোমবার শিক্ষা উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর পদ থেকে ইস্তফা দেন।
অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম সোমবার শিক্ষা উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর পদ থেকে ইস্তফা দেন।
[publishpress_authors_box]

প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম। ঠিক চার মাস আগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাকে। শিক্ষা উপদেষ্টা পরিবর্তনের পর বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব ছাড়লেন তিনি।

সোমবার অধ্যাপক আমিনুলের পদত্যাগের খবর প্রকাশের পর অনেকে কৌতূহলী হয়েছেন, কেন তার এই পদত্যাগ?

আমিনুলের দায়িত্ব ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগের দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের কারণ ঘটা করেই বলা হয়েছিল। অভ্যুত্থানের এই ছাত্রনেতা নবগঠিত রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নিয়েছেন।

আমিনুলের পদত্যাগের বিষয়ে সরকারের পক্ষে কোনও বক্তব্য আসেনি; আমিনুল নিজেও কিছু খোলাসা করতে চাননি। তবে তিনি যে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন, তেমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আমিনুল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তার আগে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েরও উপাচার্য ছিলেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার হাতেই রেখেছিলেন।

এক সপ্তাহ পর নতুন তিনজন উপদেষ্টা শপথ নিলে শিক্ষার দায়িত্ব পড়ে প্রবীণ অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ওপর। তিনি একই সঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও সামলাচ্ছিলেন।

তিন মাস পর গত বছরের ১০ নভেম্বর অধ্যাপক আমিনুলসহ তিনজনকে বিশেষ সহকারী নিয়োগ দেন ড. ইউনূস। তখন শিক্ষায় ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে সহায়তার দায়িত্বটি পান অধ্যাপক আমিনুল।

পাঁচ দিন আগে অধ্যাপক সি আর আবরারকে উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দিয়ে তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন ড. ইউনূস। ওয়াহিদউদ্দিনকে শুধু পরিকল্পনার দায়িত্বে রাখা হয়।

শিক্ষার নতুন উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবরার তার সহকারী হিসাবে থাকা অধ্যাপক আমিনুলের চেয়ে বয়স ও পেশাগত জীবনে কনিষ্ঠ।

পাশাপাশি সি আর আবরারকে শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয় সামলাতে হচ্ছে বলে সেখানে একজন বিশেষ সহকারীরও প্রয়োজন দেখছিল না সরকার।

এই অবস্থায় অধ্যাপক আমিনুলকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল বলে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।

এবিষয়টি স্পষ্ট হতে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে। তিনি বলেন, “তিনি (আমিনুল) পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, এটা জানি। কিন্তু কী করণে পদত্যাগ করছেন, সেটা জানা নেই।”

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে, সরকারই চাইছিল অধ্যাপক আমিনুল আর ওই দায়িত্বে না থাকুন।

অধ্যাপক আমিনুল তার পদত্যাগপত্র দেওয়ার খবর নিজেই জানান। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অবস্থানের সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পদত্যাগপত্র তিনি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

 স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, নাকি পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্ন এড়িয়ে তিনি বলেন, “আমি এসব বিষয়ে কিছুই বলতে চাই না।”

অন্য কোনও দায়িত্ব নিচ্ছেন কি না- সেই প্রশ্নেও একই জবাব আসে তার কাছ থেকে।

“আমি পদত্যাগ করলেও কোনো না কোনোভাবে শিক্ষার সঙ্গে থাকব,” বলেন পদার্থবিদ্যার প্রবীণ এই শিক্ষক।

অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর কানাডার ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। ১৯৯৫ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন।

তিনি ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। তিনি জানুয়ারি ২০১৮ থেকে আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশ মেডিকেল ফিজিক্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক আমিনুল পদত্যাগ করায় এখন অন্তর্বর্তী সরকারে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় বিশেষ সহকারী থাকছেন চারজন।

তারা হলেন- খোদা বকশ চৌধুরী (স্বরাষ্ট্র), অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান (স্বাস্থ্য), শেখ মইনউদ্দিন (সড়ক পরিবহন ও সেতু), ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি)।

এদে মধ্যে খোদা বখশ ও সায়েদুর গত নভেম্বরে আমিনুলের সঙ্গেই নিয়োগ পেয়েছিলেন। মইনউদ্দিন ও ফয়েজ নিয়োগ পান পাঁচ দিন আগে গত ৫ আগস্ট।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত