Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

সেন্টমার্টিনে নিষেধাজ্ঞার খড়গে দ্বীপবাসী কষ্টে

saint martin
[publishpress_authors_box]

চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই আলোচিত হয়ে ওঠে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে থাকা দ্বীপ সেন্টমার্টিন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছিল যে, সেন্টমার্টিনে যুক্তরাষ্ট্র ঘাঁটি করতে চায়।

যদিও বারবারই এ অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে।

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রকে সেন্টমার্টিন ব্যবহার করতে দিলে ক্ষমতাচ্যুত হতে হতো না; শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমন দাবিও এসেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত মাসে আবারও দৃশ্যপটে আসে সেন্টমার্টিন, যখন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক থেকে ঘোষণা করা হয় কিছু বিধিনিষেধ। বেধে দেওয়া হয় পর্যটক প্রবেশের সীমা, নিষেধাজ্ঞা আসে রাত্রিযাপনে।

পর্যটন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনায় সরব হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তৈরি হয় নানা শঙ্কা, গুঞ্জন; জোরাল হয়ে উঠতে থাকে গুজবও।

তবে নেটিজেনরা যখন পর্যটন নিয়ে চিন্তিত, তখন বিধিনিষেধের খড়গে জর্জরিত সেন্টমার্টিনের সাড়ে ১০ হাজার বাসিন্দা। একে তো পর্যটননির্ভর ব্যবসা বন্ধ, তারওপর নিজের বাসভূমিতে ঢুকতে কিংবা সেখান থেকে জরুরি প্রয়োজনে মূল ভূখণ্ডে যেতেও নিতে হচ্ছে অনুমতি।

বৈবাহিকসূত্রে সেন্টমার্টিনে আত্মীয়তা করেছেন, এমন নারী-পুরুষকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহির মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে দ্বীপে।

বিধিনিষেধের বেড়াজালে প্রবালদ্বীপ

দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন সবসময়ই পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। গত কয়েকবছর ধরেই দ্বীপটিতে বাড়ছে পর্যটক সংখ্যা, তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রিসোর্ট, পর্যটনকেন্দ্র।

শুরু থেকেই দ্বীপের প্রতিবেশ নিয়ে সরব পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। বহু মানুষের উপস্থিতির কারণে জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে বারবারই সরকারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হতো। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আদতে কার্যকর হয়নি।

এমনকি ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করলেও ঠেকানো যায়নি পর্যটকদের। এছাড়া ২০১৯ সালেই সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের রাত্রিযাপন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও নানা কারণে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি তৎকালীন সরকার।

এমন অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেন্টমার্টিনে প্রবেশে নানা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কড়াকড়ি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন দ্বীপের বাসিন্দাদের জরুরি প্রয়োজন মেটানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। চিকিৎসার জন্য যেতে চাইলে কিংবা স্বজনেরা বেড়াতে আসতে চাইলেও বিড়ম্বনার মুখে পড়ছেন।

ফলে সেন্টমার্টিন নিয়ে নতুন করে কড়াকড়ি দেওয়ায়, সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় নানা আলোচনা। এমনকি যারা ওই দ্বীপের বাসিন্দা, তারাও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।

কারণ, বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে থাকা প্রায় ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটির সাড়ে ১০ হাজার মানুষ এই বিধিনিষেধের কারণে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ব্যাহত হচ্ছে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

সাধারণত অক্টোবরের শেষ থেকে দ্বীপটিতে শুরু হয় পর্যটন মৌসুম। কিন্তু এবার নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় এসেও শুরু হয়নি পর্যটকের আনাগোনা। অনিশ্চিয়তার কবলে রয়েছে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। এর মধ্যে দ্বীপে বসবাসকারি মানুষ নিজস্ব প্রয়োজনে কাঠের ট্রলার বা স্পিড বোটে টেকনাফে আসা-যাওয়া করতেও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন। তাদের আসা বা যাওয়া এখন নির্ভর করছে প্রশাসনিক অনুমতির উপর।

এর বাইরে বাংলাদেশের কোনও নাগরিককেও দ্বীপটিতে যেতে হলে লিখিত অনুমতি নিতে হচ্ছে।

বিড়ম্বনায় দ্বীপবাসী

দ্বীপের বাসিন্দারা বলছেন, তাদের নিত্য প্রয়োজনী পণ্যের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল তো বন্ধ, স্পিডবোড চলাচলেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। স্থানীয়রা যাত্রীবাহী কাঠের ট্রলারে যাওয়া আসা করলেও নিতে হচ্ছে প্রশাসনের অনুমতি।

সেন্টমার্টিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোস্টগার্ড এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মৌখিক অনুমতির উপর নির্ভর করছে এসব ট্রলারের আসা যাওয়া। তবে এই অনুমতি কেবল মাত্র দ্বীপের বাসিন্দার জন্য। দ্বীপের বাসিন্দা নন এমন কেউ যেতে চাইলে নিতে হবে লিখিত অনুমতি। এই অনুমতি না মিললে ট্রলারে ওঠারই সুযোগ পাওয়া যাবে না।

দ্বীপের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, দ্বীপের মানুষের জন্য যেখানে অনুমতি প্রয়োজন হচ্ছে সেখানে বাইরের কেউ যাওয়া আরও কঠিন।

“দ্বীপের অসুস্থ মানুষদেরও চিকিৎসার প্রয়োজনেও টেকনাফে যেতে অনুমতি লাগছে। অনেক ক্ষেত্রে অনুমতির পাওয়ায় দেরি হলে রোগীর মৃত্যুও হচ্ছে।”

নিজের মায়ের মৃত্যুর অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে টেকনাফ নিতে স্পিডবোট বা নৌ যান চলাচলের অনুমতি সংগ্রহ করতে গিয়ে বিলম্ব হয়ে যায়। অনুমতি পাওয়ার পর মাকে নিয়ে দ্বীপের জেটি ঘাটে পৌঁছার আগেই মারা যান তিনি।”

চলতি বছর মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরাকান আর্মির সংঘাত শুরু হলে তার রেশ পড়ে এপারেও। গত ১ জুন বিকালে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের যাওয়ার সময় পন্যসহ ১০ যাত্রীর ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এরপর একাধিকবার বাংলাদেশি ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে।

এরপর থেকে যাত্রীবাহী ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় নানা বিধিনিষেধ। ফলে নিজের ইচ্ছায় দ্বীপে প্রবেশ করতে পারছেন না খোদ দ্বীপের মানুষেরাই।
এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। যেখানে বলা হয়, ২২ অক্টোবর থেকে সেন্টমার্টিনে দ্বীপের বাইরে কেউ যেতে হলে অনুমতি লাগবে, জমা দিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি। তা না পেলে কোনও ট্রলারে যাত্রী হয়ে দ্বীপে যাওয়ার সুযোগ নেই।

টেকনাঢ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, “পর্যটক হিসেবে দ্বীপে ভ্রমনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। দ্বীপে কর্মরত এনজিও কর্মী বা গবেষণার কাজে, গণমাধ্যম কর্মীদের জরুরি প্রয়োজনে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আগে এই নিয়ম না থাকলেও এখন তা করতে হচ্ছে।”

সেন্টমার্টিনে কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এস এম রাশাদ হায়দার সাংবাদিকদের জানান, নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ভ্রমণ করতে কেউ যেন সেন্টমার্টিন যেতে না পারে সেজন্য তারা মনিটরিং করছেন। কেউ যদি কোনোভাবে অনুমতি ছাড়া সেন্টমার্টিন চলেও আসে, তবে তাকে ফেরত পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।

জাহাজ চলাচলে অনিশ্চয়তা

প্রতিবছর নভেম্বর প্রথম থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল পুরোদমে শুরু হয়। কিন্তু এ বছর সরকারের নানা উদ্যোগ ও প্রশাসনিক বিধিনিষেধের জটিলতার কবলে তা শুরু করা সম্ভব হয়নি। কবে নাগাদ জাহাজ চলাচল শুরু হতে তাও এ পর্যন্ত নিশ্চিত নয়।

গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রাণলয়ের সভায় সেন্টমার্টিনের বিষয়ে নানা বিধি নিষেধ আরোপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ অক্টোবর একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অসমা শাহীনের সই করা পরিপত্রে বলা হয়, সেন্টমার্টিনে নৌ যান চলাচলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে তারপর অনুমতি দেবে। নভেম্বর মাসে দ্বীপে পর্যটক গেলেও দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে হবে। রাতে থাকা যাবে না।

রাতে থাকতে হলে যেতে হবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে। এখানে শর্ত হলো, প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি মানুষ দ্বীপে যেতে পারবেন না। রাতে জ্বালানো যাবে না আলো, তৈরি করা যাবে না শব্দ দূষণ, করা যাবে না বার্বি-কিউ পার্টি।

সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকেদের সংগঠন সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানিয়েছেন, অন্য বছরের মতো এবারও তিনটি জাহাজ চলাচলের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে কেয়ারী সিনবাদ বহন করতে পারে ৩৫০ যাত্রী, কর্ণফুলী ৭৫০ এবং বারো আউলিয়া বহন করতে পারে ৮৫০ যাত্রী।

তিনি বলেন, “জাহাজ চলাচল শুরু করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজনের কথা বলা হচ্ছে। তা না পেলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ জাহাজ চলাচলের অনুমতি দতে পারছে না। তবে কবে থেকে এই অনুমতি পাওয়া যাবে তাও নিশ্চিত করে কেউ বলছে না।”

একটি জাহাজের মালিকপক্ষের প্রতিনিধি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, মূলত প্রতিদিন গড়ে ২ হাজারের বেশি পর্যটক না যাওয়া এবং নভেম্বরে যাওয়া পর্যটকরা রাত্রি যাপন করতে না পারার বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এ বিষয়ে একটি অ্যাপ আদলে ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। এটি ব্যবহার করে বিষয়টি জাহাজ মালিকদের পক্ষে বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু জাহাজ মালিকরা এই দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছেন না।

হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বললেন, “এটি জাহাজ মালিকরা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। দুই হাজারের বেশি পর্যটক না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি এখনও পর্যটন সংশ্লিষ্ট কেউ গ্রহণ করেনি। এরা ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বীপের মানুষ গণহারে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এটা জাহাজ কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নিলে উল্টো দ্বীপবাসীসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা ক্ষুব্ধ হবেন।”

২ হাজারের বেশি পর্যটন না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি কক্সবাজারের পর্যটনের জন্য ক্ষতিকর দাবি করে এটি বাতিলের দাবিও জানান তিনি।

সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের যাতায়াত সীমিতকরণ ও পর্যটকদের রাতযাপন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সেন্টমার্টিনস দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোট নামের একটি সংগঠন ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।

সেন্টমার্টিন সংশ্লিষ্ট ১৩ সংগঠনের এই জোটে রয়েছে, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার, হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব সেন্টমার্টিন্স, সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, রেস্টুরেন্ট ওনার্স এসোসিয়েশন অব সেন্টমার্টিন্স, বাংলাদেশ স্লিপার এসি বাস মালিক সমিতি, সেন্টমার্টিন বাজার দোকান ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, বোট মালিক সমিতি, স্পিড বোট মালিক সমিতি,  ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সেন্টমার্টিন্স, সেন্টমার্টিন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি, সেন্টমার্টিন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, ঢাকাস্থ বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সেন্টমার্টিনের শিক্ষার্থী এবং সেন্টমার্টিন অটো রিক্সা মিনি টমটম ভ্যান মালিক সমবায় সমিতি।

চিকিৎসক-নার্স ও শিক্ষক সংকট

বেশ কিছুদিন ধরেই দ্বীপের সাড়ে ১০ হাজার মানুষের জন্য নির্মিত সেন্টমার্টিন ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি অনেকটা অচল। সরকারি ২০ শয্যার এই হাসপাতালে সরকারিভাবে এক জন মেডিকেল অফিসার, এক জন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, এক জন মিডওয়াইফ থাকার কথা থাকলেও তা নেই।

বিশ্বব্যাংকের ‘স্বাস্থ্য ও জেন্ডার সাপোর্ট প্রকল্প (এইচজিএফপি), স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সহায়তা প্রকল্প (এইচজিএস) অধীনে রোহিঙ্গা সংকটে স্থানীয়দের জন্য বিশ্বব্যাংকের বরাদ্দ অর্থে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন এনজিও সংস্থা জেলাব্যাপী হাসপাতাল, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জনবল নিয়োগসহ নানা সহায়তা শুরু হয় ২০১৯ সালে।

কক্সবাজার সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ওই প্রকল্পের অধীনে সেন্টমার্টিন হাসপাতালে ১৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ৩০ জুন এই প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ না থাকায় জনবল প্রত্যাহারের চিঠি প্রদান করেছিল সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারি সংস্থা। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সহ সরকারের নানা পর্যায়ে চিঠি দেওয়া হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ১ জুলাই বিশ্বব্যাংকের পক্ষের এক চিঠিতে এসব প্রকল্প ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এর পরের ছয় মাসও প্রকল্প চালু রাখার কথা থাকলেও হঠাৎ করে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ না থাকায় আবারও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ফলে সেন্টমার্টিন হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারিরা চাকরি হারান। এতে দ্বীপের চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যায়।

দ্বীপের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষক সংকট তীব্র বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে দুই জন প্যারা শিক্ষক দিয়ে। মাধ্যমিক স্কুলটিও রয়েছে শিক্ষক সংকট।

এ অবস্থায় যাওয়া আসা নিয়ে নতুন সংকট তৈরি হওয়ায় এবং পর্যটননির্ভর আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন সংকটের মধ্যে পড়েছেন দ্বীপের মানুষ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত