শবনম ফেরদৌসীর রচনা ও পরিচালনায় এবং সামিয়া জামানের প্রযোজনায় শিগগিরই বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে সিনেমা ‘আজব কারখানা’। যেখানে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।
আগামী ১২ জুলাই মুক্তি পাবে ছবিটি। সে উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা ক্লাবে আয়োজন করা হয়েছিল সাংবাদিক সমাবেশের। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা-অভিনেত্রী-পরিচালকসহ সিনেমা সংশ্লিষ্টরা।
আয়োজনে উঠে এল সিনেমার গল্প, অভিনেতাদের ভাবনা, জানা গেল পরিচালকের কথাও।
এতদিন ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেছে শবনম ফেরদৌসী। সে হিসেবে ‘আজব কারখানা’ তার জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র, বললেন তিনি। যার জন্য ২০১৬-১৭ সালে সরকারের অনুদান পেয়েছিলেন। পরিচালনার পাশাপাশি ছবির সংলাপও লিখেছেন তিনি।
চলচ্চিত্রের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে একজন রকস্টারের জীবন ঘিরে। শহুরে জীবনে অভ্যস্ত এই শিল্পী গ্রাম-বাংলার বাউল শিল্পীদের সংস্পর্শে এসে নিজের জীবনের নতুন অর্থ খুঁজতে শুরু করেন। চলচ্চিত্রটিতে আবহমান বাংলার বিভিন্ন গানের ধারা, ঘরানা ও মর্মবাণী তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে আছে রক ও ফিউশনও।
মূল ভূমিকায় অভিনয় করা পরমব্রত জানালেন, নিজে একটি ব্যান্ড দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাংলার লোকসঙ্গীত নিয়েও তার আগ্রহ রয়েছে। তাই এই সিনেমায় কাজ করা তার জন্য সহজ হয়েছে।
তিনি বলেন, “২০১৯-২০২০ সাল মিলিয়ে কাজটি করেছিলাম। করতে গিয়ে দেখেছি, বাংলাদেশের লোকায়ত গান-বাজনার সম্ভার। তার সঙ্গে সম্যক পরিচয় আমার হয়েছে। এই ছবিতে আমার সহশিল্পীদের বেশিরভাগই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত নয়, তারা সঙ্গীত শিল্পী। তাই তাদের কাছ থেকেও আমি বাংলা লোকগানের অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। এটা আমার জন্য বাড়তি পাওনা।”
বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের এই নির্ধারিত দিনটিতেই পড়েছে পরমব্রতর জন্মদিন। তাই আয়োজনে তাকে শুভেচ্ছাও জানানো হলো।
বিশেষ দিনে ঢাকায় থাকতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত পরমব্রত। তিনি বলেন, “জন্মদিনে যদি কলকাতায় থাকতে না পারি, সেক্ষেত্রে আমার দ্বিতীয় পছন্দ অবশ্যই ঢাকা। কারণ এই শহরের সঙ্গে আমার জীবনের অনেকাংশ জড়ানো।”
সিনেমায় প্রথমবারের মতো অভিনয় করেছেন বাংলাদেশি মডেল শাবনাজ সাদিয়া ইমি। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করছেন দিলরুবা দোয়েল, খালিদ হাসান, সেলিম বয়াতি, দিলু বয়াতি, কিতাব আলী, ক্রিস্টিয়ানো তন্ময়, মুনতাকা অর্পণ, মাইমুনা মমো ও মাহরিন মান্য।
প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে ইমি বলেন, “এই কাজের প্রস্তাব যখন পাই তখন খুবই খুশি হয়েছিলাম। একই সঙ্গে ভয়ও পেয়েছিলাম। কারণ পরমব্রতের মতো একজন জনপ্রিয় অভিনেতার সঙ্গে কাজ করতে হবে আমাকে। কিন্তু কাজ শুরুর পর তিনি আমাকে যেভাবে সহায়তা করেছেন তাতে নিমেষেই সেই ভয় কেটে গেছে।”
অনুষ্ঠানে পরমব্রতের কাছে প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশি চলচ্চিত্র দেখা হয় কিনা।
তিনি জানালেন, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, অপূর্ব ও নিশোর কাজ খুব ভালো লাগে তার। এছাড়াও তাসনিয়া ফারিনের অভিনয়ও ভালো লাগে।
পরমব্রত বলেন, “ফারিন অল্প বয়সেই অনেক শক্তিশালী অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পরীমনিকে আমার কাছে পাওয়ার হাউজের মতো মনে হয়। আমার মনে হয় বাংলা চলচ্চিত্রে তাকে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করলে অসাধারণ কিছু পাওয়া সম্ভব।”
সন্ধ্যায় সিনেমার দুটি পোস্টার ও ট্রেইলার প্রকাশ করা হয়। ছবির তিনটি গান গেয়ে শোনান শিল্পীরা।
এরই মধ্যে বিশ্বের ১৫টি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছে ‘আজব কারখানা’, জিতেছে দুটি পুরস্কারও।
২০২২ সালে ২৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছিল ‘আজব কারখানা’। উৎসবের ‘এশিয়ান সিলেক্ট: নেটপ্যাক অ্যাওয়ার্ড’ বিভাগে প্রদর্শনের জন্য মনোনীত হয় চলচ্চিত্রটি। একই বছরের ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ২০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বাংলাদেশ প্যানোরমা বিভাগে প্রদর্শিত হয় সিনেমাটি। এছাড়াও ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত ‘গঙ্গা থেকে সিন’ চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত হয়েছে ‘আজব কারখানা’।
সিনেমায় মৌলিক গান রয়েছে পাঁচটি। কবি হেলাল হাফিজের চারটি কবিতাকে গান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এই ছবিতে। এগুলোর মধ্যে তিনটি গানের সংগীতায়োজন করেছে ভাইকিংস, আরেকটি লাবিক কামাল গৌরব। অন্য গানটি করেছে ব্যান্ড সেভেন মিনিটস। ছবির আবহ সংগীতও পরিচালনা করেছেন লাবিক কামাল গৌরব।