গত কয়েক বছর যাবৎ আমরা দেখতে পাই যে অনেক শিক্ষকই আদতে শিক্ষার্থীবান্ধব ছিলেন না। নানা আন্দোলনের সময় তাদের যে ভূমিকা, কিংবা দৈনন্দিন কাজকর্মও অনেকেই এমনভাবে পরিচালনা করতেন যাতে ‘দল’ খুশি হয়, যেহেতু বিপুল শিক্ষাঙ্গনই আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে চলত। এই সকল কিছুর ফলাফল হিসেবে শিক্ষক আর শিক্ষার্থীর যে সম্পর্কটা কাম্য, সেরকমভাবে তা তৈরি হয় নাই। টানাপোড়ন তো চলছে অবশ্যই। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, যে সকল শিক্ষকের কাছে পাঠদানের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল উপরমহলকে খুশি রাখা, তারা শিক্ষকতা চালিয়ে গেলে ক্ষতিই বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, কোনওভাবেই যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের অপসারণ করা হচ্ছে তা আমি সমর্থন করিনা। এর জন্য নিরপেক্ষ তদন্তের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দরকার। আর এই ‘ট্রেন্ডে’ যে সকল সাধারণ শিক্ষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণের জন্যও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
আজকের বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আমি একজন শিক্ষক ও তার শিক্ষার্থীর মাঝে পারস্পরিক সম্মানের একটা সম্পর্ক দেখতে চাই। শিক্ষকদের দায়িত্ব অনেক সময় পরিবারের দায়িত্ব থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, ফলে তারা যদি তা সঠিকভাবে পালন করেন, অন্তত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্মান তারা পাবেনই। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও নমনীয়তা, পরমতসহিষ্ণুতার মতো ব্যাপারগুলোর চর্চা এখন অত্যন্ত জরুরি।
বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমার প্রত্যাশা অনেক। এর মধ্যে অন্যতম হলো, এই যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে যে চরম বৈষম্য, সুযোগের অভাব দেখা যায় সেসবের বিলুপ্তি। এছাড়াও, মিডডে মিলের মতো প্রকল্পগুলো ফেরত আনা দরকার যাতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বা নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণ করার প্রক্রিয়াটা আরও সহজ হয়ে উঠে।
গণ-অভ্যুত্থানের পরপরই সারাদেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে যেসকল কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকদেরকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, কোনও কোনও জায়গায় জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে; কিছু শিক্ষার্থীরাই এটা করছে, এসকল ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অত্যন্ত দুঃখজনক। স্বৈরাচারী সরকারের সাথে যেসকল শিক্ষকদের আঁতাত ছিল, দুর্নীতি-দখলদারিত্ব, দমন-পীড়নের সাথে যারা জড়িত ছিলেন; বর্তমান প্রশাসন অবশ্যই তাদেরকে বিচারের আওতায় আনবে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের হাতে এই বিচারকে ছেড়ে দেওয়া হলো ‘মব জাস্টিস’-এর ভয়ঙ্কর মহড়া তৈরি করা। তাই প্রশাসনের মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আমাদের কাজ করতে হবে, নিজেই বিচারক হওয়া যাবে না।
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে জনসাধারণের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক প্রবৃত্তি তৈরি হওয়া। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের উচিৎ হবে, শিক্ষার্থীদেরকে তাদের নৈতিক দিকগুলোকে শেখানো; দল-মত-জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর মনের মধ্যে প্রবেশ করা, তাদেরকে উত্তম আদর্শ শিক্ষা দেওয়া। শিক্ষার্থীদের উচিৎ সকল শিক্ষককে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া, তাদের চিন্তা-ভাবনাকে অধ্যয়ন করা, নতুন নতুন বিষয়কে তাদের মাধ্যমে জানা-বোঝা।
একজন শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষকদের নিকট আমার বহু আশা-প্রত্যাশা রয়েছে। আমি চাই আমার শিক্ষক আমার পথপ্রদর্শক হোক, আমার মনকে কৌতুহলী করে তুলুক, আমার মেধাকে উদ্ভাবনী শক্তি হিসেবে কাজে লাগাক। বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব বিনির্মাণে শিক্ষকগণ আমাদেরকে গাইড করুক, অসাম্প্রদায়িক মনোভাব তৈরি করতে সাহায্য করুক। পৃথিবীর সকল শিক্ষকদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা বৃদ্ধি হোক।
শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা দুঃখজনক। এমন ঘটনা কখনও কাম্য না। তবে ঘটনার পিছনের ঘটনা হলো, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার তার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য যেভাবে সবকিছুতে দলীয়করণ করেছিল,ওই দলীয়করণের মধ্যে কিছু শিক্ষকও পড়ে যায়। আমি মনে করি, কিছু জায়গায় এমন ঘটনার কারণ ওই দলীয় রাজনীতিতে শিক্ষকদের জড়িয়ে পড়া। তবে এর বিপরীত ঘটনাও আছে। কিছু কিছু জায়গায় শিক্ষকের পদত্যাগ ঠেকাতে ছাত্ররা বিক্ষোভ করার ঘটনাও ঘটেছে। সুতরাং ব্যাপকভাবে শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে এমনটি মনে করি না।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার দুঃখজনক বাস্তবতার কারণ মনে করি, শিক্ষক হিসেবে নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করা। শিক্ষকগণ আমাদের অভিভাবক। অভিভাবকত্বের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করলে এই দুঃখজনক বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হতো না বলেই মনে করি। বরং তারা সম্মানের আসনে আসীন হতেন। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল বর্তমান ভিসি সবচেয়ে বড় উদাহরণ আমাদের সামনে।
শিক্ষকগণের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীলতার আর আমাদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাশীলতার সম্পর্ক প্রত্যাশা করি। উভয়টাই উভয়ের জন্য পরিপূরক। এর জন্য শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা জরুরি মনে করি। এবং একজন শিক্ষক যিনি আমাদের পিতা/মাতার সমতুল্য, শিক্ষক হিসেবে তাঁর যে দায়িত্ব রয়েছে সেগুলোর যথাযথভাবে প্রতিপালন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, শিক্ষকদের জীবনমানকে উন্নত করা। আমি মনে করি, শিক্ষকদের বেতন কম থাকার কারণে তাঁরা এমন অনেক কাজ করে বসেন যা শিক্ষকতার সাথে যায় না।
শিক্ষকদের জীবনমান উন্নত করে শিক্ষকতার পেশাকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে আসতে হবে। বিশেষত আমাদের মাদরাসার শিক্ষকরা যে মানবেতর জীবন-যাপন করেন, এটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমার কামনা এটাই থাকবে, শিক্ষকরা যাতে কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে স্বাধীনভাবে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করে যেতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হবে এবং শিক্ষকরা যেন কোনও দলীয় রাজনীতিতে না জড়ান সেদিকে জোর তাগিদ দিতে হবে।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি লক্ষ্য করেছি। আমার প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের প্রকাশ দেখেছি। কারণ যে সময় শিক্ষার্থীদের বুক ঝাঁঝরা করা হচ্ছিল, তখনও তাদের শিক্ষকরা চুপ ছিলেন। উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য হলো প্রশ্ন করা, কোনও বিষয়কে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে প্রশ্ন করার মাধ্যমে জ্ঞানোৎপাদন করা, ভালো-খারাপের মধ্যকার পার্থক্য নির্ণয় করা। সেই জায়গায় যে শিক্ষকরা চুপ থেকে বা মৌন সম্মতি দিয়ে এই ফ্যাসিবাদকে প্রলম্বিত করেছে শিক্ষার্থীরা তাদরে কোনওভাবেই মানতে পারছে না।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক হবে বন্ধুসুলভ, শিক্ষার্থীরা তাদের যেকোনও ধরনের সমস্যা বা সম্ভাবনার কথা শিক্ষকদের সাথে শেয়ার করতে পারবে নির্দ্বিধায়। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন আচরণ প্রত্যাশা করে যেখানে তাঁর ক্লাস লেকচার আর কর্মের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। শিক্ষক হবেন সমাজের সবচেয়ে সংবেদনশীল মানুষদের মধ্যে একজন। যেকোনও ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা এবং তৎক্ষনাৎ মানুষকে সংগঠিত করার কাজটাও শিক্ষকরাই করবেন, যেহেতু তিনি জ্ঞানের আলো বিতরণের মতো মহান দায়িত্বে নিয়োজিত।
শিক্ষক দিবসে আমি এমন শিক্ষকদের চাই, যিনি আমাদের ক্লাসের পাঠ থেকে রাতে আমি কোথায় ঘুমাচ্ছি, আমার মাথা গুঁজবার ঠাঁই আদৌ আছে কিনা, আমি ঘুমানোর আগে খাবারটা খেতে পারছি কিনা বা ক্লাসে বসে আমাকে দুপুরে খাবারের কথা চিন্তা করতে হচ্ছে কিনা, তার সবটুকুই তার ভাবনার বিষয় থাকবে। শিক্ষকদের প্রধান কর্তব্য হবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘প্রশ্ন’ করার প্রবণতাকে উৎসাহ দেওয়া, শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনাগুলোকে আরও বাড়িয়ে দিতে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা।
একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, শিক্ষক নিপীড়নের ঘটনা এবং শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করার ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয়। এইসব ঘটনার মূল কারণ আবার বিশ্বাসের ঘাটতি। গত ১০-১৫ বছরে নানান সময় দেখা গেছে শিক্ষকরা সরাসরি শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের অন্তরায় ছিলেন। উল্টো ঘটনাও ঘটেছে। তবে আমার মনে হয় পূর্বে যা হয়েছে তা ভুলে এই বিশ্বাসের ঘাটতি পূরণ করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং প্রশাসনিকভাবে উদ্দ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বলপ্রয়োগপূর্বক শিক্ষকদের পদত্যাগ ও হেনস্তা কোনও সমাধান নয়। বরং শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে একের পর এক মতবিনিময় সভা আয়োজন করা গেলে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উভয়কেই রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে নিরপেক্ষ একটা শিক্ষাঙ্গন তৈরি হয়।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে আমরা যেই স্বপ্ন দেখেছিলাম তার মধ্যে একটি হলো এমন একটি শিক্ষাঙ্গন যেখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সহানুভূতির জায়গা থাকবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে। আমার মনে হয় এই পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েরই দায়িত্ব রয়েছে।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। শিক্ষকরা জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণ করেন তাই শিক্ষাঙ্গন এবং এর বাইরেও সামাজিকভাবে শিক্ষকদের সম্মান বৃদ্ধি করার জন্য কাজ করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে উভয়েরই মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকরা একাডেমিকস-এর পাশাপাশি যাতে শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধিতে কাজ করেন এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে।
আমরা নিপীড়নের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করেছি। শিক্ষক হোক বা শ্রমিক কোনও নিপীড়নকেই মুখ বুজে সহ্য করার মানে হয় না। একজন ছাত্র হিসেবে শিক্ষক নিপীড়ন কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তবে যদি কোনও শিক্ষককে তাঁর অন্যায়ের প্রতিবাদ স্বরূপ পদত্যাগ করানো হয় সেটা আমি সমর্থন করি। কারণ, শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই ফ্যাসিস্ট সরকারের অংশ হিসেবে কাজ করেছেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের টানাপোড়েন আমি বহুদিন থেকেই দেখছি। দেখুন, আমাদের একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান আছে। সেটি হলো আমাদের রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের নাগরিকের সম্পর্ক যেখানে সুসংহত নয় সেখানে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক যথেষ্ট সুদৃঢ় থাকবে এটা আশা করা যায় না। বিগত বছরগুলোতে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের চিন্তার পরিসরকে সংকুচিত করা হয়েছে অন্যদিকে শিক্ষকের মত প্রকাশেও বাধা দেওয়া হয়েছে। বেকারত্ব ও চরম মূল্যস্ফীতির ফলে প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। ফলে তাকে লেজুড়বৃত্তিক নীতি গ্রহণ করতে হয়েছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কে টানাপোড়নে আমি শঙ্কিত। তবে অভ্যুত্থানে যেহেতু শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ই অংশগ্রহণ করে একটা ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করতে পেরেছে, সেহেতু উভয়ে মিলে একটা ফ্যাসিবাদী কাঠামো অবশ্যই দূর করতে পারবে। আর এই কাঠামো দূর হলে উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্কও গড়ে উঠবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের দলীয় বা লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
মা-বাবার পরই যেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক সবচেয়ে নিবিড়, ঘনিষ্ঠ হয়। এটাই আমার প্রত্যাশা। অবশ্যই এজন্য শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে যার ন্যূনতম এক বছরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অথবা নিয়োগ দেওয়ার আগে অবশ্যই তাকে এক বছরের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে হবে। আমি আশা করি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন শিক্ষক থাকবে যাকে দেখে খোদ ইউরোপ থেকে যেন ছাত্ররা এসে ভর্তি হয়। শিক্ষকের নিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই তার যোগ্যতা বিচার করতে হবে। কোনওভাবেই যেন দলীয় রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা প্রতিষ্ঠা করতে চায় এমন শিক্ষক নিয়োগ না পায়। বিগত দিনে আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, ‘‘যুবলীগের পদ পেলে ভিসি পদ ছেড়ে দেব’’— এমন শিক্ষক কোনওভাবেই যেন নিয়োগ না পায়। এমন শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থীদের কী করে ভালো সম্পর্ক থাকবে!
বিশ্ববিদ্যালয়সহ কলেজ, স্কুলগুলোতে সরকারের ক্ষমতা হ্রাস করতে হবে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি করার জন্য। আর অবশ্যই শ্রেণিকক্ষের আকার ছোট করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:২০ এর মধ্যে রাখতে হবে। তাহলে তাদের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক তৈরি হবে।
রাষ্ট্রে শিক্ষকদের বেতনই সর্বোচ্চ হবে এটাই আমার প্রত্যাশা। একজন শিক্ষকের বেতন কোনওক্রমেই যেন একজন সচিবের থেকে কম না হয়। শিক্ষকদের পূর্ণ আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও গবেষণার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। কর্মক্ষেত্রে শিক্ষকরা যেন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি, শিক্ষকের মর্যাদা যেন সর্বোচ্চ হয় সেজন্য যা কিছু করা লাগে তাই করতে হবে।
আসলে দীর্ঘ ১৬ বছরে, ফ্যাসিস্টের তৈরি শিক্ষাব্যবস্থা, ফ্যাসিস্টের মদদপুষ্ট শিক্ষকদের আনাগোনার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ বিষয় উঠে আসে। এছাড়া ২০২৪-এর গণ আন্দলোনের মতো একটা প্লার্টফমে এসে যেখানে দেশের সিংহভাগ শিক্ষার্থী ফ্যাসিস্টের তৈরি ব্যাবস্থায় ক্ষিপ্ত ছিল, সেখানে অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দেখা গেছে প্রকাশ্যে ছাত্রদের বিরোধিতা করছে। আন্দোলনের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করার মতো ঘটনাও দেখা গিয়েছে। এই মেরুদণ্ডহীন শিক্ষকদের অবশ্যই প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করানো লাগবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যে মব জাস্টিসের মাধ্যমে এর সমাধান করার চেষ্টা করেছে তা অবশ্যই কষ্টদায়ক ঘটনা। শিক্ষার্থীদের কাজকে আমি এখানে সমর্থন জানাই তবে এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করিনা। আবার, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নির্দোষ শিক্ষকদের সাথেও এগুলো ঘটেছে। প্রকাশ্যে এই ঘটনার বিরোধিতা করি আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এখানে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌথ চেষ্টায় এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করি।
আজকের এই বর্তামান বাংলাদেশে, ফ্যাসিস্ট পালালেও আসলে ওই ফ্যাসিজমটা পালায়নি, বরং তা ভিন্ন রূপে ফিরে এসেছে। তবুও এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়কেই যথেষ্ট সচেতন করতে হবে। ভালো শিক্ষক ছাড়া আসলে জাতির মেরুদণ্ড অর্থহীন। এক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যৌথ প্রচেষ্টায় এই ঝামেলার সমাধান সম্ভব। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা আর কোনও মেরুদণ্ডহীন শিক্ষক দেখতে চায় না, কারণ শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয়, সেখানে শিক্ষক মেরুদণ্ডহীন হলে, জাতির উন্নয়ন মুশকিল।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে একটা প্রত্যাশা করতে চাই, শিক্ষার সকল প্রকার বাণিজ্যকীকরণ রুখে দিতে হবে। শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্যকীকরণের সাথে জড়িত নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে রুখে দিতে হবে। এই সম্পর্কে সরকারের মনোযোগী হওয়া উচিৎ। এই বিষয়ে সরকারের একটা বড় গ্যাপ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে মফস্বল শহরের স্কুল-কলেজে প্রয়োজনীয় উপকরণসহ সবার জন্য অভিন্ন মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিপীড়নের ঘটনা ঘটেনি। অভ্যুত্থানকালে এক শিক্ষক আন্দোলনবিরোধী অবস্থান গ্রহণের কারণে বিরূপ হয়েছিলাম অবশ্য আমরা। বাকি শিক্ষাঙ্গনগুলোয় টানাপোড়েন চলছে কি না, তা ঠিক বলতে পারব না। তবে যে শিক্ষকেরা অপমানের শিকার হয়েছেন, তাদেরকে ফিরিয়ে আনলেও তাঁরা পড়ানোর মানসিকতায় থাকবেন কি না, চাপা বেদনা থেকে যাবে কি না, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এ বাস্তবতা থেকে উত্তরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনতুষ্টিবাদী বা লোকরঞ্জনবাদী (পপুলিস্ট) সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে সরে আসতে হবে। আমাদের শিক্ষক সামিনা লুৎফা যাপনিক সংখ্যালঘুদের পক্ষে কথা বলায় সরকার যে সিদ্ধান্ত নিল, সেটা অবস্থাটা আরও ঘোলাটেই করল।
দুটি ঘটনা বলি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সামিনা লুৎফার ভূমিকা নিয়ে ফেইসবুকে লেখায় আমার পরিচিত এক মাদরাসার শিক্ষকের আশপাশের লোকজন বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন তাঁর প্রতি। দ্বিতীয় ঘটনাটি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের। পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. তীব্র আলী তাঁর অফিসকক্ষে যাপনিক সংখ্যালঘুসহ সকলের অবাধ গতায়াত নিশ্চিতকল্পে একটা কথা আর একটা পতাকা জুড়েছিলেন দরজায়। তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় শিক্ষার্থীদের একটা অংশ। কেবল তা-ই নয়, ঘটনাটি সুযোগসন্ধানী দুই অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার তক পৌঁছায়, তাঁদের অনুসারীরা লেগে পড়ে তীব্র আলী ও তাঁর সাথে সংহতি জানানো শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।
আমরা জানি, আওয়ামী শাসনামলে অসংখ্য শিক্ষক নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। নতুন বাংলাদেশে আমরা আশা করব, শিক্ষক যেমন একদিকে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবেন, শিক্ষার্থীরাও তেমনটা করতে পারবে। সেই পরিবেশটা যাতে থাকে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজমের এক গবেষণাকর্মে আনিসুজ্জামানের দ্বিধা থাকা সত্ত্বেও একজন প্রকৃত বিদ্যায়তনিকের মতন তিনি স্বাধীন গবেষণায় বাধা দেননি।
আমি প্রকৌশল শিক্ষার্থী। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে আশা থাকবে, প্রকৌশলের শিক্ষকরা যেন আরো বেশি রাজনীতি-সচেতন হন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমাদের বাড্ডা-রামপুরার বিদ্রোহে আমার বিভাগের একুনে একজন শিক্ষককে সক্রিয় দেখেছি। স্পষ্ট করি, রাজনীতি করতে বলছি না; রাজনীতিসচেতন হওয়ার কথা বলছি। তাঁরা প্রভাব রাখতে পারেন ছাত্রদের ওপর, অনুপ্রাণিত করতে পারেন। মনে আছে, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ে আমাদের কিছু কলেজ শিক্ষকের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কথায় বেশ উজ্জীবিত হয়েছিলাম।
আশা থাকবে, শিক্ষকরা যাতে দেশেই গবেষণার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও অর্থ-পৃষ্ঠপোষকতা পান। অভ্যুত্থানকালে রিভার্স ব্রেইন ড্রেইন বা প্রতি-মেধাপাচার নামে এক ঢেউ উঠেছিল। আদর্শিক ফ্যাসিবাদ-ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ মোকাবিলা করে আমরা যেন সে ঢেউকে গড়িয়ে যেতে দিই, বাস্তবায়ন করি। শিক্ষকরা যেন মর্যাদা সহ বাঁচতে পারেন, দ্বিমত করতে পারেন রাষ্ট্রের সাথে, সংখ্যাগরিষ্ঠের সাথে।
ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একরকম মব জাস্টিসের কালচার আমরা দেখতে পেয়েছি। আমি মনে করি না কোনও মব জাস্টিস আসলে বিচার নিশ্চিত করতে পারে। এটা মানতে হবে গত ১৫ বছরে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নষ্ট করা হয়েছে। যোগ্য নয়, শুধু দলীয় বা টাকার কারণে শিক্ষক হয়েছেন এরকম অসংখ্য শিক্ষক আছে। এমন শিক্ষকও আছেন যাদের বাসায় টিউশনি না পড়লে আপনাকে নাম্বার দিবে না। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই অভিযোগ জানাবে সেরকম কোনও জায়গা তো ছিল না। ফলে, ৫ই আগস্টের পর থেকে এসব ঘটনা ঘটতে থাকে। এর জন্য কিন্তু দায়ী শিক্ষকদের সাথে সাথে অনেক সাধারণ শিক্ষকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে শিক্ষকদের মনের ভিতরেও কষ্ট থেকে যাবে। এর থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৈরি করতে হবে। যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে তাদের আলোচনা করতে পারবে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক হবে আমি আশা করি। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জ্ঞানচর্চার জায়গা হয়ে দাঁড়াবে এই আশাবাদ আমার। শিক্ষার্থীদের যেমন শিক্ষকদের সম্মান করতে হবে একই সাথে শিক্ষকদেরও শিক্ষার্থীদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। এরজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একটি গণতান্ত্রিক মত প্রকাশের জায়গায় রূপান্তর করতে হবে। এটি একমাত্র সম্ভব হবে যদি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে হতে পারে।
শিক্ষা ব্যবস্থার সংকট কাটিয়ে তুলতে শিক্ষকদের ভূমিকা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের থেকে বেশি। আমি আমার বয়সের কারণে ভুল করতে পারি, অনেক কিছু না বুঝতে পারি। কিন্তু শিক্ষকরা যদি আমাদের সাথে বন্ধুত্বমূলক একটা সম্পর্ক গড়ে তোলেন তাহলে কিন্তু আমি আমরা ভুল থেকেও শিখতে পারব। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের এগিয়ে আসা দরকার। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার প্রত্যাশা আমাদের শিক্ষকরা আমাদের আলাদা কেউ না ভেবে বন্ধু হিসেবে আমাদের পাশে থাকবেন।
এক কথায় বলতে গেলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। তবে শুধু এই একটা কথা দিয়ে সমগ্র চিত্র তুলে ধরা সম্ভব নয়। কারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী টানাপোড়েনের সূচনা যে এই জুলাই গণঅভুত্থান এর মাধ্যমে ঘটেছে তেমনটা নয়। এই টানাপোড়েন অনেক দিনের। এর পেছনে দায়ী ফ্যাক্টরও অনেক। আমরা প্রায়ই এরকম একটা কথা শুনে থাকি যে, এখনকার জেনারেশন তাদের শিক্ষকদের সম্মান করে না। যেটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। সত্যি বলতে গেলে বর্তমানে খুব কম শিক্ষকেই প্রকৃত অর্থে শিক্ষক হতে পেরেছেন। একজন শিক্ষার্থী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেই দেখে শিক্ষকরা শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করছে, মানসম্মত ক্লাস নিচ্ছে না, দুর্নীতি করছে, রাজনীতি করে লবিং করে নিয়োগ পাচ্ছে তাহলে এমনিতেই শিক্ষকদের উপর তার সম্মান কমে যাবে। তবে ব্যতিক্রম শিক্ষকও আছেন যাদেরকে শিক্ষার্থীরা সম্মান করেন, পছন্দ করেন, কিন্তু তার সংখ্যা খুবই নগণ্য। আবার একজন স্কুলের বাচ্চাও ছোট থেকে যদি দেখে আসে যে তার শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে তিনি পরীক্ষায় ভালো নাম্বার দেন না, কিংবা প্রাইভেটে যেভাবে পড়ান ক্লাসে একই ভাবে পড়ান না, তাহলে সে শিক্ষক শব্দের প্রকৃত দিকের সাথে কখনও পরিচিত হতে পারবে না। আবার আমাদের দেশের শিক্ষকদের নিয়োগ পদ্ধতিতেও গলদ আছে। শুধু ভালো ছাত্র হলেই যে সে ভালো শিক্ষক হবে সেরকমটা নয়, আরও অনেক গুণাবলি প্রয়োজন। যেগুলোর মূল্যায়ন করে নিয়োগ হয় না। এছাড়াও শিক্ষা খাতে কম বাজেট, শিক্ষকদের বেতন কম এই সকল সমস্যাও সমানভাবে দায়ী।
শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য যেসকল চেষ্টা বা পদক্ষেপ প্রয়োজন সেগুলো তো নেই। তাই এই অবনতি মাত্র গত কয়েক মাসের না। বরং বহু বছরের। যেহেতু শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে ভরসা ও বিশ্বাসের জায়গাটা অনেক আগে থেকেই ফাঁকা হয়ে আছে তাই জুলাই পরবর্তী নতুন বাস্তবতায় সেটা প্রকট আকারে সামনে এসেছে। ফলশ্রুতিতে অনেক নিরপরাধ শিক্ষকও প্রশ্নের মুখে পড়ছেন, পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। যদি একজন শিক্ষকের সাথে তার ছাত্রছাত্রীদের ভরসাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি থাকত তাহলে অন্য যেকোনও উস্কানি বা প্রভাবকে তারা সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দাঁড়াত না।
আমার মনে হয় শিক্ষার্থীদের আরও ধৈর্যশীল হওয়া উচিত। আর শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের সাথে দূরত্ব কমানো। অনেক শিক্ষকই ছিলেন যারা আন্দোলনের সময়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিয়েছেন কথা বলেছেন। আবার অনেক শিক্ষকও ছিলেন যারা বিপক্ষে কথা বলেছেন, হুমকি ধমকি দিয়েছেন। এই সমস্যাগুলো কিন্তু কথা বলে ঠিক করা যায়। মোট কথা শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কমিউনিকেশন গ্যাপ কমাতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির সংস্কৃতি তৈরি করা দরকার।
বিশ্ব শিক্ষক দিবসে প্রত্যাশা থাকবে, পৃথিবীর সকল শিক্ষক ভালো থাকুক। আর শিক্ষক নামের কলঙ্ক মুছে যাক। এবং পেশাগতভাবে শিক্ষক না হয়েও যারা আমাদের জীবনে নানান সময়ে নানাভাবে শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।