Beta
শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

সুধা সদনসহ যত বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর

বুলডোজার মিছিলের কর্মসূচি দিয়ে বুধবার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধুর বাড়ি।
বুলডোজার মিছিলের কর্মসূচি দিয়ে বুধবার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধুর বাড়ি।
[publishpress_authors_box]

বুলডোজারে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বুধবার রাতে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ধানমন্ডি ৫ নম্বরে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদন। একই রাতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ সরকার আমলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও নেতাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে।

এই ঘটনা নিয়ে সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। গত ছয় মাসে ৩২ নম্বর বাড়িটিতে কোনো ধরনের আক্রমণ, ধংসযজ্ঞ হয়নি। 

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন দেওয়া হয়েছিল ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর ভবনে; তারপর ধ্বংসের চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল কালের সাক্ষী বাড়িটি। ঠিক ছয় মাস পর ঘোষণা দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো সেই বাড়ি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনা বুধবার ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন বলে আওয়ামী লীগ জানানোর পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এই ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করে।

রাত ৯টায় যখন শেখ হাসিনা ভাষণ শুরু করেন, তার আগে থেকেই সেখানে জড়ো হয়েছিল অভ্যুত্থানের সমর্থকরা। ৮টার দিকে শুরু হয় বাড়িটি ভাঙা; কয়েক ঘণ্টা পর সেখানে আনা হয় এক্সক্যাভেটর, ক্রেইন; রাতভর চলে ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ।

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ‘বুলডোজার মিছিল’ নামে ভাঙচুররের যে কর্মসূচি দেওয়া হয়, তা ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ভাঙচুর চলার মধ্যেই আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডি ৫ নম্বর সড়কে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে, যে আগুন বৃহস্পতিবার দুপুরেও জ্বলছিল।

বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার বাইরে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, সিলেট, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় শেখ হাসিনার আত্মীয় এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি এবং বিভিন্ন ভাস্কর্য ভাঙচুর করার খবর পাওয়া গেছে।

সুধা সদনে আগুন

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দিন সুধা সদনে এক দফা হামলা হয়। তারপর সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তালা মেরে যায়। বুধবার রাতে সেই তালা ভেঙে আগুন লাগানো হয়।

বিডিনিউজ জানিয়েছে, আগুন লাগানোর পর এর পাশের বাড়িটি থেকে আতঙ্কিত বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আসেন। কয়েক ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বললেও নেভাতে আসেনি ফায়ার সার্ভিস।

ধানমন্ডি সোসাইটির একজন নিরাপত্তা কর্মী বলেন, রাত সাড়ে ১০টা কি পৌনে ১১টার দিকে কয়েকজন তরুণ এসে তালাবন্ধ সুধা সদনে আগুন লাগিয়ে দেয়।

পটপট শব্দে বাড়ির দরজা জানালা আসবাব পুড়ছিল। ঝনঝন শব্দে ভেঙে পড়ছিল জানালার কাচ। একপর্যায়ে উপর থেকে আগুনসমেত জানালা ভেঙে নিচে পড়ে। সেখানে আগে থেকেই রাখা আসবাবপত্রে আগুন লেগে গেলে তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় আশপাশের বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীরা এসে পানির পাইপ দিয়ে নিচতলার আগুন নেভায়।

শেখ হাসিনার স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ডাক নাম ছিল সুধা মিয়া। তার নামেই এ বাড়ির নামকরণ।

সুধা সদনের সামনের ভবনের একটি অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা জানান, গত তত্ত্বাবধায়ক আমলে শেখ হাসিনা এই বাড়িতে কিছুদিন ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন এখান থেকেই করেন তিনি। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রীয় বাসভবনে থেকেছেন।

এই বাড়িতে কিছুদিন আওয়ামী লীগের কিছু অফিস ছিল। পরে সেটি তালা মারাই থাকত। বিভিন্ন দিবসে এই বাড়িতে মাঝেমধ্যে এসেছেন শেখ হাসিনা। তার পুরো আমলজুড়ে এ বাড়ির নিরাপত্তায় নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক সদস্য মোতায়েন থাকতেন।

সমকাল জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ৩টার দিকেও সুধা সদনের দুইতলার একটি কক্ষে এবং নিচতলার লনে আগুন জ্বলছিল। সুধা সদনের সামনে ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। সেখানে ছিল কিছু ছিন্নমূল মানুষ, যারা বাড়িটির পুড়ে যাওয়া আসবাবপত্র ও জিনিসপত্র সংগ্রহ করছিলেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে এক মধ্যবয়সী নারী সুধা সদনের সামনে গিয়ে বাড়িটি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ জানান। নিজের নাম বকুল ও বাসা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বলে জানান তিনি।

তবে তার প্রতিবাদের সময় আশপাশের কয়েকজন মানুষ তার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ওই নারী এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

খুলনায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো ‘শেখ বাড়ি’র একাংশ

প্রথম আলো জানিয়েছে, খুলনায় বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ‘শেখ বাড়ি’র একটি অংশ। বুধবার রাত ৯টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ঘোষণা দিয়ে ওই ভাঙচুর শুরু করেন। রাতভর দুটি বুলডোজার চালিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক, দেয়ালসহ বেশির ভাগ অংশ ভেঙে ফেলা হয়।

খুলনা নগরের ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত ‘শেখ বাড়ি’ নামে পরিচিত বাড়িটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ আবু নাসেরের।

বাড়িতে শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, বিসিবির সাবেক পরিচালক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শেখ সোহেল উদ্দিনসহ তার পরিবারের সদস্যরা বসবাস করতেন। মূলত ওই বাড়ি থেকেই পদ্মার এপারের আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো।

গত বছরের ৪ আগস্ট প্রথম দফায় বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল ছাত্র-জনতা। সেদিন বাড়িতে কেউ ছিলেন না। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর আবারও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। দরজা, জানালা থেকে শুরু করে কোনও কিছুই ছিল না।  

ভাঙচুর ও লুটপাটের পর বাড়িটিতে শুধু ইটপাথরের কাঠামোই অবশিষ্ট ছিল। কেউ যেন ভেতরে প্রবেশ করতে না পারেন, সে জন্য প্রধান ফটকটি টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল। প্রধান ফটকসহ সবকিছুই বুধবার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে শেখ বাড়ির সামনের রাস্তায় উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা যায়। এ সময় অনেকে ভাঙা বাড়ির রড খুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বাড়ির অবশিষ্ট অংশটুকু কেন ভেঙে ফেলা হলো না, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক।

বুধবার রাতেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটিও বুলডোজার দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে।

নোয়াখালীতে ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন

আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার গ্রামের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

বৃহস্পতিবার দুপর ১টার দিকে এ ঘটনার সময় ওবায়দুল কাদের বা তার ভাইদের পরিবারের কেউ বাড়ি ছিল না।

এর আগে গত ৫ আগস্ট একই বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ওই ঘটনার পর কিছুদিন আগে আবদুল কাদের মির্জা স্বজনদের মাধ্যমে বাড়ির সংস্কার কাজ করিয়েছিলেন। সংস্কার কাজের পর বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় ভাঙচুর চালানো হলো। হামলা ও ভাঙচুরের সময় আবদুল কাদের মির্জা কিংবা তার পরিবারের কোনও সদস্য বাড়িতে ছিলেন না।

বরিশালে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো হাসানাত আব্দুল্লাহর বাড়ি

বুধবার রাতে বরিশালে শেখ হাসিনার আত্মীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বাসভবনও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা বুলডোজার নিয়ে নগরীর বগুড়া রোডে আমির হোসেন আমুর বাড়ির দিকে রওনা দেয়। সেখানেও বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন দেওয়া হয়।

কুষ্টিয়ায় ভাঙা হলো হানিফের বাড়ির একাংশ

প্রথম আলো জানিয়েছে, কুষ্টিয়ায় এক্সক্যাভেটর দিয়ে ভাঙা হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ির একটি অংশ।

রাত ১০টার দিকে শহরের পিটিআই সড়কে তিনতলা বাড়িটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে ভাঙা শুরু হয়। এর আগে গত ৪ আগস্ট ও ৫ আগস্ট এই বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

বুধবার রাতে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল থেকে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম মুছে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এর আগে ক্যাম্পাসে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙা ম্যুরালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পোস্টার ঝুলিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে জুতা নিক্ষেপ করা হয়।

কুমিল্লায় বাহারের বাড়ি ভাঙচুর

ডেইলি স্টার জানিয়েছে, কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আ ক এম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে কুমিল্লার এই আওয়ামী লীগ নেতার বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

এর আগে কান্দিরপাড়ের রামঘাটলা এলাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করতে ভিড় করে কিছু ছাত্র-জনতা। পরে তারা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সংসদ সদস্যের বাড়িতে হামলা চালায়।

পাবনা কিশোরগঞ্জ চুয়াডাঙ্গায় ভাঙচুর-আগুন

ডেইলি স্টার জানিয়েছে,পাবনার বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম মুছে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার রাতে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বঙ্গবন্ধু ছাত্রাবাস ও শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাসের নামফলক মুছে দিয়েছে। এছাড়া পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শেখ রাসেল আবাসিক হলের নামফলকও মুছে ফেলা হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলার আলহাজ্ব মোড়ে স্মৃতিস্তম্ভের পাশে নির্মিত ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ গুঁড়িয়ে ফেলেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।

কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়কে পাবলিক টয়লেট ঘোষণা করে সেখানে ভাঙা দেওয়ালে ‘পাবলিক টয়লেট’ লিখে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

চুয়াডাঙ্গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ম্যুরাল ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

রাজশাহীতে শাহরিয়ার আলমের বাড়িতে আগুন

টিবিএস জানিয়েছে, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের গ্রামের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বাঘা উপজেলার আড়ানির বাড়িতে এ আগুন দেয় তারা।

স্থানীয় অনেকে জানিয়েছে, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে এসে শাহরিয়ার আলমের বাড়িতে প্রথমে ভাঙচুর চালায়, পরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

সিলেটে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা

সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

বুধবার রাত ১০টার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের একটি হুইল এক্সক্যাভেটর নিয়ে মিছিল করে এসে প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে ম্যুরালটি গুঁড়িয়ে দেয় তারা। রাত ১২টার দিকে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলচত্বরের পাশে অবস্থিত এ প্রতিকৃতিও এক্সক্যাভেটর দিয়ে ভাঙা হয়। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙার পর মেয়েদের আবাসিক হল শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের নামফলকও উপড়ে ফেলে একদল শিক্ষার্থী।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের প্রথম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। তারপর জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। গত ৯ জানুয়ারি ‘তৌহিদী জনতার’ ব্যানারে সমাবেশ থেকে তিন দিনের মধ্যে এই ম্যুরাল সরানোর দাবি জানানো হয়। গত ৩০ জানুয়ারি রাতে ম্যুরালটি ভেঙে দেওয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলার আহ্বায়ক শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ আল গালিব সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনা ছাত্র-জনতার ধাওয়া খেয়ে পিছনের দরজা দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে। সেই হাসিনার ছাত্রদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।

“দেশের কোনও স্থানে ফ্যাসিস্টদের কোনও চিহ্ন থাকবে না। এ জন্য আমরা সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে ও শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসের ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দিয়েছি। ফ্যাসিস্টদের চিহ্ন যেখানে থাকবে সেটাই আমরা গুঁড়িয়ে দেব। এটা আমাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি।”

সাভার

ডেইলি স্টার জানিয়েছে, ঢাকার সাভারের এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার রাত ১টার দিকে সাভার পৌরসভার মুক্তিরমোড় এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় ম্যুরালের তিন পাশে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির কিছু অংশ হাতুড়ি ও ধাতব বস্তু ব্যবহার করে বিকৃত করে দেয় তারা। তবে ম্যুরালের মূল অবকাঠামো প্রায় অপরিবর্তিত থেকে যায়।

গত ৫ শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এই ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছিল। সেসময় ম্যুরাল ভাঙচুরের পর অভ্যুত্থানে নিহত সাভারের বাসিন্দা তিন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে মুক্তির মোড়ের নাম বদলে ‘তিন শহীদ চত্বর’ নাম সম্বলিত ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়।

একই রাতে আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ী এলাকায় আশুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন মাদবরের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

যশোর

একদল যুবক বুধবার রাতে প্রথমে শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করে। এরপর তারা জেলা পরিষদ চত্বরে ম্যুরাল ও পুরাতন কসবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদ্বোধক হিসেবে থাকা শেখ হাসিনার নামফলক ভাঙচুর করে।

পিরোজপুর

পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়াল এবং তার ভাই পিরোজপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান মালেকের বাড়িতে বুধবার রাত ১২টার দিকে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়।

রাজশাহী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হল ও কামারুজ্জামান হলের নামফলক ভেঙে নতুন নাম দেওয়া হয়েছে।

নাটোর

নাটোরে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাড়িতে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত