সুইজারল্যান্ড আপাতত বাংলাদেশকে আর উন্নয়ন সহায়তা দেবে না। শুধু বাংলাদেশই নয়, আরও দুটি দেশে অনুদান দেওয়া বন্ধ করছে ইউরোপের ধনী দেশটি। একটি হলো ইউরোপের দেশ আলবেনিয়া, অন্যটি আফ্রিকার দেশ জাম্বিয়া।
সুইজারল্যান্ডের সংবাদপত্র সুইসইনফো এই খবর দেওয়ার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তা এসেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তা বন্ধ করার পর সুইজারল্যান্ডের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য ধাক্কা হয়েই আসার কথা।
যদিও একক দেশ হিসাবে সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ নগণ্য মাত্রায় অর্থই পেয়ে থাকে, তবুও তাদের সিদ্ধান্তের প্রভাব অন্য দেশের ওপর পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
বাংলাদেশসহ তিনটি দেশে উন্নয়ন সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার কারণ হিসাবে সুইজারল্যান্ডের পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তকে কারণ হিসাবে দেখিয়েছে সুইসইনফো।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ড সরকার তাদের ২০২৫ সালের বাজেটে বিদেশে বিদেশে উন্নয়ন সহায়তার জন্য যে অর্থ বরাদ্দ চেয়েছিল, তার চেয়ে ১২ কোটি ১০ লাখ ডলার কম অনুমোদন করেছে দেশটির পার্লামেন্ট।
পাশাপাশি বিদেশি উন্নয়ন সহযোগিতা খাতে আগামী তিন বছরে যে পরিমাণ অর্থ সরকার ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছিল, সেখান থেকেও সাড়ে ৩ কোটি ডলার ছেঁটে দিয়েছে পার্লামেন্ট।
তহবিল কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ, আলবেনিয়া এবং জাম্বিয়ায় সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে তা জানিয়ে দিয়েছে সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল কাউন্সিল।
ফলে সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি) দ্বিপক্ষীয়ভাবে যে উন্নয়ন সহায়তা কার্যক্রম চালাত এই তিনটি দেশে, তা ২০২৮ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তবে মানবিক কার্যক্রম ও শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ইউক্রেনের জন্য সহযোগিতা বন্ধ করেনি সুইজারল্যান্ড সরকার।
ডানপন্থিদের কারণেই কি
সুইজারল্যান্ডের বিদেশি উন্নয়ন সহায়তায় এই কাটছাঁট যে তাদের দেশের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলবে, তা সুইসইনফোর প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে বাজেটের ওপর আলোচনার সময়ই তহহিল কমানোর ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল।
২০২৩ সালে ডানপন্থিরা সুইজারল্যান্ডের পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে দেশটির নীতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
সুইসইনফোর আরেক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বামপন্থি দলগুলো বিদেশি উন্নয়ন সহায়তা কমানোর প্রক্রিয়া ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারেনি।
গত ডিসেম্বরে যখন বাজেটের ওপর পার্লামেন্টে আলোচনা চলছিল, তখন ডানপন্থি সেন্টার পার্টি ও সুইস পিপলস পার্টি বিদেশে উন্নয়ন সহায়তা কমাতে চাপ দিচ্ছিল।
সেন্টার পার্টির নেতা পায়াস কাউফমান বলেছিলেন, বিশ্বের ভূ রাজনীতির গতিচিত্র বদলে গেছে, ফলে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
সুইস পিপলস পার্টির নেতা অ্যান্ড্রেয়াস গাফনার বলেছিলেন, সুইজারল্যান্ডের নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা আগে ভাবতে হবে।
ডানঘেঁষা র্যাডিকাল-লিবারেল পার্টির নেতা অ্যালেক্স ফারিনেলিও বিদেশে উন্নয়ন সহায়তা কমানোর পক্ষে ওকালতি করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, বিদেশে উন্নয়ন সহায়তা সরকারি অন্য সব ব্যয়ের চেয়ে বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা বাজেট কমে যাচ্ছে।
তখন সোশাল ডেমোক্রেট, গ্রিন, লিবারেল গ্রিন ও প্রটেস্টেন্ট পার্টির নেতারা পার্লামেন্টে আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ বহির্বিশ্বে সুইজারল্যান্ডের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করবে। তবে এই দলগুলোর নেতারা তাদের পক্ষে পার্লামেন্টের অনুমোদন আনতে পারেননি।
নতুন বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ সরকার যে প্রস্তাব করেছিল, তার চেয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে পার্লামেন্ট।
সেই ব্যয় বাড়লেও সার্বিকভাবে নিরাপত্তার যে নীতি সুইজারল্যান্ড সরকার নিয়েছে, তা বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেন সোশাল ডেমোক্রেট নেতা সেড্রিক ভারমুথ। তিনি বলেন, উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ বিশ্ববাসীকে ভুল বার্তা দেবে। এতে বরং এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকায় বেইজিং ও মস্কোর প্রভাব বাড়াতে সহায়তা করবে।
প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়িয়ে বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার কমানোর বিরোধিতা করে প্রটেস্টেন্ট পার্টির নেতা মার্ক জোস্ট বলেন, উন্নয়ন নীতি আর নিরাপত্তা নীতিকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর ঠিক হবে না।
গ্রিন পার্টির গেরহার্ড আন্ড্রেই বলেন, নিরপেক্ষ দেশ হিসাবে সুইজারল্যান্ডের বর্হিবিশ্বে যে ভাবমূর্তি রয়েছে, তা সমুন্নত রাখতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কগুলো বজায় রাখতে উন্নয়ন সহায়তা অব্যাহত রাখা দরকার।
তবে সুইজারল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী কারিন কেলার-সাটার পার্লামেন্টে বিরোধীদের সব আপত্তিই নাকচ করে দেন।