সিলেটে এবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৮৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মামলায় গত ৪ আগস্ট সিলেট মহানগরের বন্দরবাজার এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি ও হামলা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
বুধবার দুপুরে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম ও দ্রুত বিচারিক আদালতে মামলাটি করেন জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো.জুবের আহমদ।
তিনি মহানগরের আম্বরখানা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই এলাকার প্রয়াত সিরাজুল ইসলামের ছেলে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০-৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই থেকে পথে নামে শিক্ষার্থীরা। সে মাসের মাঝামাঝিতে গিয়ে আন্দোলন নতুন গতি পায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষের খবর আসতে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মোতায়েন করতে হয় তৎকালীন সরকারকে। জারি করা হয় কারফিউ, বন্ধ রাখা হয় ইন্টারনেট।
তীব্র এই আন্দোলনের ফলে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বুধবারের মামলায় আসামিদের মধ্যে আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানন্ত্রীর শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক এমপি কামরুল ইসলাম, সাবেক এমপি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
আরও আছেন সাবেক এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মাহনগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন-অর-রশিদ, সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সিলেট নগরের সোবাহানীঘাটে বিএনপির মিছিলে হামলা ও গুলি চালানোর অভিযোগে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ ৫৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
সিলেটের অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেনের আদালতে মামলাটি করেন সাজন আহমদ সাজু নামের দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী।
এজাহারে বলা হয়, ৪ আগস্ট দুপুরে সোবহানীঘাট এলাকায় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে অন্য আসামিরা গুলি বর্ষণ ও হাতবোমা নিক্ষেপ করে। এতে ছাত্রজনতা ও পথচারী মারাত্মভাবে আহত হয়। বাদী নিজেও মুখে ও চোখে গুলিবিদ্ধ হন এবং এখনও তার শরীরে স্প্লিন্টারের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।
এর আগে সোমবার একই আদালতে সিলেটে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সাংবাদিক এটিএম তুরাব ও শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী রুদ্র সেন নিহতের ঘটনায় দুটি মামলা হয়।
এসব মামলায়ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক তিন সংসদ সদস্য, মেয়র, মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের আসামি করা হয়।
এছাড়া রুদ্র সেন হত্যা মামলায় শাবিপ্রবির সদ্য পদত্যাগী উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনসহ প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা একাধিক শিক্ষককেও আসামি করা হয়।