অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ডিমের মূল্য বৃদ্ধির মূল কারণ বলে মনে করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় বিশ্ব ডিম দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করে তিনি বলেন, অভিযান চলছে। দ্রুতই ডিমের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে আসবে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির ‘যৌক্তিক মূল্য’ নির্ধারণ করে দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম রাখা হবে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। তাতে এক ডজন ডিমের দাম পড়বে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।
তবে এখনও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ডিম। এ মাসের প্রথম দিকে এ ধরনের ডিমের ডজন ১৮০-১৯০ টাকায় কিনতে হয়েছে কোথাও কোথাও।
সম্প্রতি সরকার সাড়ে ৪ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়ার খবরে এ সপ্তাহে বাজারে ডিমের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফার্মের মুরগির হালকা বাদামি রংয়ের ডিমের ডজন কিছুটা কমে ১৬৫-১৭০ টাকায় নেমে এসেছে।
ফার্মগেইটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডিমকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ঘোষণার আহ্বান জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
তিনি বলেন, ডিম সহজলভ্যতার দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডিম প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে কোনও বৈষম্য থাকবে না। শ্রেণি-বর্ণ নির্বিশেষে, যাদের ডিম বেশি দরকার তাদের জন্য তা সরবরাহ করতে হবে।
ডিমের উৎপাদন বাড়াতে গ্রামীণ নারীদের হাঁস-মুরগি পালনে উৎসাহিত করার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা ফরিদা বলেন, আগে গ্রামীণ নারীরা হাঁস-মুরগি পালন করতেন। নিজেরা গ্রামেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করতেন। এতে তারা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারতেন। সেই অবস্থা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, বছরের আশ্বিন-কার্তিক মাসে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় ডিমের চাহিদা বাড়ে। ডিম সাধারণ খামারি থেকে কয়েক দফা হাত বদল হয়ে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছায়। এ কারণেই ডিমের দাম বেড়ে যায়। এজন্য উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সরাসরি কীভাবে ডিম পৌঁছানো যায় সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা চলছে।
রমজানে ডিমের ব্যবহার কমে যায় উল্লেখ করে মৎস্য ও কৃষি উপদেষ্টা বলেন, “তাই মজুদ নয়, চাহিদার আলোকে আমাদের কোল্ড স্টোরেজ করার চিন্তা করতে হবে। বন্যার কারণে দেশের অনেক খামার নষ্ট হয়েছে। এসব খামার উৎপাদনে যেতে কিছুটা সময় লাগছে। সব মিলিয়ে সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে।”
অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে ডিমের মূল্য বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এসব বিষয় মাথায় নিয়েই কাজ করছে সরকার। বাজারে নিয়মিত অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে পাইকারিতে কিছুটা দাম কমছে। দ্রুতই দাম নাগালে আসবে।”
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ড্রাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল এবং ওয়াপসা-বিবি এর যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠান হয়।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর ও ওয়াপসার সভাপতি মসিউর রহমান।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী।