সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকার উৎখাত করা বিদ্রোহী জোটের নেতা আহমেদ আল-শারা বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত তার দেশ এবং এ অবস্থায় সিরিয়া তার প্রতিবেশী বা পশ্চিমা দেশ তথা গোটা বিশ্বের জন্য কোনোভাবেই হুমকি নয়।
দামেস্কে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন সিরিয়ার কার্যত এই শাসক, যিনি ছদ্মনাম আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি নামেই অধিক পরিচিত।
সিরিয়াজুড়ে অভিযান চালিয়ে মাত্র ১২ দিনের মাথায় দুই যুগের কর্তৃত্ববাদী শাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে বিদ্রোহীদের জোট। এই জোটের নেতৃত্বে ছিলেন আহমেদ আল-শারা। জঙ্গি সংগঠন হিসেবে পরিচিত আল-কায়েদা থেকে বের হয়ে ২০১৬ সালে তিনি গড়ে তুলেছিলেন নিজের সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)।
গত ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহীদের হাতে দামেস্ক পতনের পর বুধবার বিবিসির মুখোমুখি হন আহমেদ আল-শারা।
সিরিয়ার ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এসব নিষেধাজ্ঞা আগের শাসনামলে দেওয়া হয়েছিল। এখন এগুলো বলবৎ রাখার প্রয়োজন নেই। অত্যাচারিত আর অত্যাচারীকে এক কাতারে ফেলা উচিত নয়।”
এইচটিএস সন্ত্রাসী সংগঠন নয় দাবি করে তিনি বলেন, “জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক দেশের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় এইচটিএসের নাম আছে। এই তালিকা থেকে আমার সংগঠনের নাম বাদ দেওয়া দরকার। ২০১৬ সালে আল-কায়েদা থেকে বেরিয়ে এসেছিল এইচটিএস।
“তাছাড়া বেসামরিক ব্যক্তি বা বেসামরিক অঞ্চল কখনও এইচটিএসের লক্ষ্য ছিল না। বরং আসাদ শাসনামলে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, এই সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের তার ভুক্তভোগী হিসেবে দেখে।”
এইচটিএসের এই নেতা সিরিয়াকে আফগানিস্তানে পরিণত করতে চান- এমন দাবি পশ্চিমারা করে থাকেন, যা সাক্ষাৎকারে নাকচ করেন তিনি।
শারা বলেন, “সিরিয়া আর আফগানিস্তান রাষ্ট্র দুটি একেবারেই আলাদা। তাদের ঐতিহ্যে মিল নেই। আফগানিস্তানের সমাজ গোষ্ঠীবদ্ধ। অন্যদিকে সিরিয়া তা নয়; এখানকার সমাজকাঠামো ভিন্ন।”
নারীশিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন শারা। ২০১১ সালে বিদ্রোহীরা সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইদলিবের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সেখানে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “আট বছরের বেশি সময় ধরে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীরা পড়াশোনা করছেন, যাদের হার ৬০ শতাংশের বেশি।”
সিরিয়ায় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে মদ্যপানের অনুমতি দেওয়া হবে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে এইচটিএস নেতা বলেন, “এমন অনেক বিষয় আছে, যা নিয়ে মন্তব্য করার অধিকার আমার নেই। কারণ এগুলো আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচিত বিষয়।
“আইন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করে সিরিয়ার সংবিধান রচনা করা হবে। এই কমিটি যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। যে শাসক বা প্রেসিডেন্টই ক্ষমতায় বসুক না কেন, তাকে আইন মেনে চলতে হবে।”