কিছুদিন আগে শহীদ আফ্রিদির ব্লগে তামিম ইকবাল বলেছিলেন, “আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আমার শেষ।” সেই কথা আর বদলাননি। অবসরের সিদ্ধান্তেই অনড় থাকলেন এই বাঁহাতি ব্যটার।
শুক্রবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে জানিয়ে দিলেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে তিনি ফিরছেন না। লম্বা আবেগঘন সেই পোস্টে না ফেরার স্পষ্ট কোনও কারণ উল্লেখ করেননি তামিম। তবে অবসরের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানিয়েছেন, “আমি মনের কথা শুনেছি।”
তামিমেরও ইচ্ছে ছিল বড় একটা টুর্নামেন্ট খেলে বিদায় নেওয়ার। কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও বাস্তবতা সামনে আসায় আর জাতীয় দলে ফেরার পথে পা বাড়াননি। এই ওপেনার হয়তো ভেবেছেন লম্বা বিরতির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উত্তপ্ত উপত্যকা তার বিচরণের জন্য সহজ হবে না।
সেই সঙ্গে হয়তো দেশের রাজনৈতিক চিত্র বদলের পর নিজের দলে ফেরাকেও সঠিক সিদ্ধান্ত মনে হয়নি এই ব্যাটারের। তাই নির্বাচকদের ডাকে সাড়া না দিয়ে লাল-সবুজ জার্সিটা তুলেই রাখলেন। বিদায় নিলেন তিনি ফেসবুক ঘোষণা দিয়ে।
তামিমের এই ঘোষণায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা ব্যাটারের ক্যারিয়ারে যতি পড়ল। আগেই টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেওয়া তামিমকে আর টেস্ট বা ওয়ানডেতে আর দেখা যাবে না।
ক্যারিয়ারে ৭০টি টেস্ট খেলা তামিমের রান ৫ হাজার ১৩৪। ২৪৩ ওয়ানডেতে করেছেন ৮ হাজার ৩৫৭ আর ৭৮ টি-টোয়েন্টিতে ১ হাজার ৭৫৮। তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি করা একমাত্র বাংলাদেশির কৃতিত্ব এখনও তার। এছাড়া সর্বোচ্চ রান ও আরও নানা ব্যাটিং রেকর্ড তামিমের ক্যারিয়ারকে করেছে উজ্জ্বল।
বিপিএল চলাকালে গত বৃহস্পতিবার সিলেটে নির্বাচকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তামিম। ছোট সভায় বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও উপস্থিত ছিলেন। শান্ত খুব জোর দিয়েই তামিমকে দলে ফেরার অনুরোধ করেন। তামিম সে কথা স্বীকার করেছেন নিজের পোস্টে।
শুধু শান্তকেই নয়, নির্বাচক কমিটিকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রামের এই ব্যাটার। এখনও জাতীয় দলের জন্য তাকে উপযুক্ত মনে করায় তার কৃতজ্ঞতা। তবে তিনি শুনেছেন নিজের মনের কথা।
নিজের পোস্টে দেশের অগণিত ভক্তদের স্মরণ করেছেন তামিম ইকবাল। এখনও তাকে দেশের জার্সিতে ভক্তদের দেখতে চাওয়ার ব্যাপার তার কাছে অন্যরকম ভালো লাগা। পাশাপাশি তামিমের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বের ছিল তার ছেলের ইচ্ছা।
ছেলে আরহাম ইকবাল খান চায়, বাবা দেশের জার্সিতে আবারও খেলুক। কিন্তু ছেলের ইচ্ছা পূরণ করা হলো না। বাস্তবতা হলো তামিমের ফিটনেস। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের আগে সবশেষ খেলার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর ফেরা হয়নি।
এখন নিজের ফিটনেস, ফর্ম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত হতো না। তাই হয়তো নিজের সঙ্গে আর লড়াই করেননি এই বাঁহাতি। ১২ তারিখ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল ঘোষণার শেষদিন। এর আগে তামিম নির্বাচকদের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। দুইদিনের মাথায় জানিয়ে দিলেন তার সিদ্ধান্ত।
দুই বছর আগে জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ চলাকালীন আচমকা অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম। এরপর মাশরাফি বিন মোর্তুজার হস্তক্ষেপে অবসর ভেঙে ফেরেন। পরে শুধু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই খেলেছিলেন।
২০২৩ বিশ্বকাপে জায়গা হয়নি তামিমের। বলা যায় নির্বাচকদের সঙ্গে আলোচনা করেই নিজেকে সরিয়ে রাখেন। পরে তার সঙ্গে অনেকবার আলোচনা করলেও তামিমের ফেরার সময়টা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি বিসিবি।
জানা যায় তামিম সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অধীনে আর খেলতে চাননি। তাই এবার ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে হাথুরুহীন বাংলাদেশ দলে তার ফেরার সুযোগ তৈরি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলে অবসর নিতে পারতেন। কিন্তু পরিস্থিতি ও নিজের অবস্থান বিবেচনায় তামিম আর আন্তর্জাতি অঙ্গনে ফেরার চিন্তা করেননি।