মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সরকার আট নিত্যপণ্যের ওপর থেকে যে শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর ছাড় দিয়েছে, তা পুষিয়ে নিতেই যৌক্তিকভাবে বিভিন্ন পণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর বসাচ্ছে—এমনই জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
চার মাস আগে আট পণ্যের কর অব্যাহতি দেওয়ায় রাজস্ব আদায় কমায় বড় অঙ্কের বাজেট ঘাটতিতে পড়ার শঙ্কা দেখছে সরকার; তাই নতুন এই সিদ্ধান্ত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত চার মাসে বাজারে নিত্যপণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চাল, আলু, পেয়াজ, চিনি, ডিম, খেজুর, ভোজ্যতেল, ও কীটনাশকসহ আটটি পণ্যে আমদানি, স্থানীয় ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে জনস্বার্থে শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর ছাড় দেওয়া হয় বিধায় রাজস্ব আদায় ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী ব্যতিত অন্যান্য খাত থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি করা না গেলে বিপুল পরিমাণ বাজেট ঘাটতি দেখা দেবে।
জনস্বার্থে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির শুল্ক করহারে ব্যাপক ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং জাতি হিসেবে স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি ও হার যৌক্তিকীকরণের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এনবিআর জানিয়েছে, ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক এবং আবগারি শুল্কের হার ও পরিমাণ যৌক্তিকীকরণের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যবর্তী সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।
ভ্যাটের পাশাপাশি আয়কর খাতেও করের আওতা বৃদ্ধির নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে আয়কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসার ধারাবাহিকতায় আয়কর অব্যাহতির বিধান বাতিল ও সংশোধনের কার্যক্রম ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এর আগে গত বুধবার ওষুধ, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, জুস, ফলমূল, সাবান, মিষ্টিসহ ৬৫ পণ্যে নতুন ভ্যাট আরোপের বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সরকারকে দেওয়া ঋণের শর্ত হিসেবে রাজস্ব আদায় যৌক্তি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার শর্ত রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজস্ব আদায় কর- জিডিপির ৮ শতাংশেরও কম।
করছাড় কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর অংশ হিসেবে ভ্যাটহার যৌক্তিক করার পরামর্শ দিয়ে চলতি অর্থবছরের জন্য অন্তত জিডিপি শূন্য দশমিক ২ শতাংশ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের শর্ত রয়েছে আইএমএফের। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানান এনবিআরের এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, কর-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বাড়াতে পারলে অতিরিক্ত ১২ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হবে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেটে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।