শিশু-কিশোরদের জন্য ফেইসবুকে সময় কাটানোর মুহূর্ত নিরাপদ রাখতে বিশেষ নজর রাখে মার্ক জাকারবার্গের মেটা।
অভিভাবকরা যেন কোমলমতি সন্তানের মনে ভালোমন্দ যাচাই করার চর্চা গড়ে দিতে পারেন, সেই সুযোগ বিশেষ প্রযুক্তি দিয়েই করে দিচ্ছে ফেইসবুক।
এতে করে সন্তান ফেইসবুকে কী ধরনের পোস্ট শেয়ার করছে তা জানতে পারবেন অভিভাবকরাও। কোনো অপরিচিতের সঙ্গে ফেইসবুকে সন্তানের যোগাযোগেও খেয়াল রাখার সুযোগ রয়েছে।
কোনো পোস্ট পাবলিক ক্যাটাগরিতে শেয়ার করার অর্থ কী তা নিয়ে ফেইসবুক আগে কম বয়সীদের সচেতন করতে চায়। অপ্রাপ্তবয়স্কদের যোগাযোগ তথ্য, স্কুল, জন্মদিন – এসব তথ্য যে সার্চ রেজাল্টে যেন না মেলে সেই গোপনীয়তাও বজায় রাখে ফেইসবুক।
যেসব অভিভাবক বুঝে উঠতে পারেন না, সন্তানকে কীভাবে ফেইসবুকে নিরাপদ রাখবেন তাদের জন্য মেটা বিশেষ পরামর্শ ও ফিচার এনেছে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
শিশু-কিশোর সন্তানের ফেইসবুক সেটিংস
সন্তানের বয়স অনুসারে তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট সেটিংস ঠিক করা সম্ভব বলে ফেইসবুকের হেল্প বিভাগ জানাচ্ছে।
তবে সবার আগে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ব্যবহারে বয়স অনুপাতে সন্তানের কাছে নিজের প্রত্যাশা নিয়ে আলাপ করতে হবে অভিভাবককে।
‘নিরাপদ ইন্টারনেট’ বিষয়ে সন্তানকে অবগত করা জরুরি। পাসওয়ার্ড গোপন রাখা, কোনো পোস্ট প্রকাশের আগে ভেবে দেখা, শুধু পরিচিত কারও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট নেওয়ার চর্চা গড়ে দিতে হবে সন্তানের মধ্যে।
শিশু-কিশোরের লোকেশন শেয়ারিং জরুরি নয়
অপ্রাপ্তবয়স্কদের বেলায় ফোনের লোকেশন শেয়ারিং বন্ধ রাখার পরামর্শ দিচ্ছে ফেইসবুক। সাধারণত মেটা এই ফিচারটি ডিফল্ট সেটিংসে বন্ধই রাখে। এরপরও যদি তাদের ডিভাইস থেকে লোকেশন শেয়ারিং চালু দেখা যায়, তাহলে ফেইসবুক থেকে বারবার নোটিফিকেশন দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় যেন তারা এ বিষয়ে আরেকবার ভেবে নেয়।
ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য নিয়ে সতর্কতা
সন্তানকে কেউ ফেইসবুকে কেউ ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে হুমকি দিতে পারে, অর্থ চাইতে পারে। এমন ক্ষেত্রে অবশ্যই আইনি সহায়তা নিতে হবে।
এছাড়া হুমকিদাতার আইডি সম্পর্কে ফেইসবুকের কাছেও রিপোর্ট করার সুযোগ রয়েছে। ওই আইডি ব্লক করারও সুযোগ রয়েছে।
তাই সন্তানকে অপ্রীতিকর কোনো ফেইসবুক পেইজ, গ্রুপ এবং আইডি ব্লক করে দেওয়ার নিয়ম শিখিয়ে রাখতে হবে অভিভাবকদের।
অনেক ক্ষেত্রেই হুমকি পেয়ে সন্তানরা পরিবারের বড়দের থেকে ঘটনা গোপন রাখে। সন্তানের মনে অস্বস্তি থাকে, বাবা-মা অথবা বড়রা হয়তো তাকে উল্টো বকা দেবেন।
সন্তানের মন থেকে এই ভয় কাটাতে হবে অভিভাবকের। তাকে আগে থেকেই ভরসা দিয়ে গড়ে তুলতে হবে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে বাবা-মা তার কথা শুনবে; তাকে সুরক্ষা দেবে।
ফেইসবুকে সুপারভিশন ফিচার
শিশুর বয়স ১৩ বছরের নিচে হলে ওই অ্যাকাউন্ট মুছে দেওয়ার নীতি রয়েছে ফেইসবুকে।
অভিভাবকের জন্য কোমলমতি সন্তানের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট সুরক্ষায় সুপারভিশন সুবিধা রেখেছে ফেইসবুক।
স্পেন ও সাউথ কোরিয়ার ১৩ থেকে ১৭ অথবা ১৪-১৭ বছর বয়সী টিনএজ সন্তানের বেলায় অভিভাবকরা এমন সুবিধা পেতে পারেন।
ফেইসবুক জানাচ্ছে, এক্ষেত্রে সন্তান ও বাবা-মায়ের এক সঙ্গে আলাপ করে সম্মত হতে হবে। সুপারভিশন যে কোনো সময় সন্তান বা অভিভাবক তুলে নিতে পারে; এসময় অপরপক্ষ ফেইসবুক নোটিফিকেশন থেকে তা জানতে পারবে।
সুপারভিশন চালু করা হলে অভিভাবক জানতে পারবেন, সন্তান প্রতিদিন কতক্ষণ কাটাচ্ছে ফেইসবুকে। সন্তানের ফেইসবুক ফ্রেন্ড তালিকা এবং ব্লক তালিকা দেখতে পারবেন অভিভাবক। কিছু প্রাইভেসি সেটিংসও দেখা যাবে।
ফেইসবুকের ‘ফ্যামিলি সেন্টার’ ড্যাশবোর্ডে অভিভাবকরা সন্তানের অ্যাকাউন্ট ও মেসেন্জারের সুপারভিশন সেটিংস দেখতে পারবেন।
এই ফ্যামিলি সেন্টার থেকে অনলাইনে নিরাপদ থাকার উপায় জানা যাবেও। অভিভাবকরা নিজে এসব নিয়ে জানতে পারেন এবং সন্তানকেও বুঝিয়ে বলে ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
সন্তান কতক্ষণ ফেইসবুকে কাটাবে?
সুপারভিশন সুবিধা দিয়ে সন্তানের ফেইসবুকে থাকার সময় নিয়ে ধারণা পেয়ে অভিভাবকরা চাইলে ‘শিডিউল ব্রেকস’ নামে ফিচারটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে সন্তানের ফেইসবুকে থাকার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া যাবে।