তেলেগু সুপারস্টার নায়ক আল্লু আর্জুনকে গ্রেপ্তার করেছে হায়দ্রাবাদ পুলিশ। হায়দ্রাবাদের একটি সিনেমা হলে তার সুপারহিট সিনেমা পুষ্পা টু: দ্য রুল এর প্রিমিয়ার চলাকালীন ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার করা হলো এই জনপ্রিয় নায়ককে।
শুক্রবার সকালে হায়দ্রারাবাদ পুলিশের একটি দল আল্লু আর্জুনের জুবিলি হিলসের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
গত ৪ ডিসেম্বর সিনেমাটির প্রিমিয়ার শোতে সহ-অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানাকে নিয়ে হাজির হন আল্লু আর্জুন। তখনই ভিড়ের চাপে বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি হলে ৩৯ বছর বয়সী এক নারী পদদলিত হয়ে মারা যান। এসময় ওই নারীর ১৩ বছর বয়সী ছেলেও গুরুতর আহত হয়।
পুলিশ গ্রেপ্তারের সময় ফুল নাহি, আগুন হ্যায় ম্যায় (আমি ফুল নই, আমি আগুন) ট্যাগলাইনসহ একটি হুডি পরেছিলেন এই নায়ক। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এটি আল্লু আর্জুনের পুষ্পা সিনেমারই একটি জনপ্রিয় ডায়লগ।
ভারত তো বটেই সারা পৃথিবী জুড়েই লাখ লাখ ভক্ত রয়েছে আল্লু আর্জুনের। পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে চিক্কদপল্লী থানায় নিয়ে যাওয়ার আগে অভিনেতা তার স্ত্রী স্নেহা রেড্ডিকে আলিঙ্গন করেন।
ভাইরাল হওয়া আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ পৌঁছানোর পর তিনি পোশাক পরিবর্তন করতে যখন নিজের বেডরুমে যাচ্ছিলেন, তখন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য সেখানে ঢুকতে চান। তা নিয়ে আর্জুন বেশ আপত্তি করছেন।
পুলিশ বাড়িতে পৌঁছানোর আগে আর্জুন একটি সবুজ টি-শার্ট পরেছিলেন। তুলে নেয়ার আগে পোশাক বদলে তিনি পুষ্পা টু এর ডায়লগ লেখা ওই হুডিটি পরেন।
আল্লু আর্জুন ও তার নিরাপত্তা দলের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা অনুযায়ী ১০৫ (হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশে নয়) এবং ১১৮(১) (আঘাত সৃষ্টির জন্য) অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে এর আগে একই ঘটনায় সিনেমা হলের মালিক ও দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অর্জুন, অভিনীত পুষ্পা টু: দ্য রুল সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী দ্রুততম সময়ে ভারতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে ১ হাজার কোটি রুপির আয়ের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। গ্রেপ্তারের পর নায়ক আর্জুনের বিবৃতি রেকর্ড করার পরে তাকে ওসমানিয়া হাসপাতালে মেডিকেল চেক-আপের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
কী হয়েছিল সেইদিন?
গত ৪ ডিসেম্বর যখন আর্জুন এবং তার পুষ্পা টু সিনেমার সহ-অভিনেত্রী রশ্মিকা মান্দানাকে নিয়ে উপস্থিত হন তখন তাদের এক ঝলক দেখার জন্য সন্ধ্যা থিয়েটারে বিপুল সংখ্যক ভক্ত ভিড় করেন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিনেতার আগমনের বিষয়ে সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ বা নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে আগে থেকে কোনও তথ্য ছিল না।
তাছাড়া দর্শকদের জন্য আলাদা কোনো প্রবেশ বা বের হওয়ার রাস্তাও ছিল না। পুলিশ বলছে, থিয়েটারের গেইটটি বাড়তি ভিড়ের চাপ সহ্য করতে না পেরে ধসে পড়লে পদদলিতের ঘটনাটি ঘটে।
পরে নিহত নারীর স্বামী মাগুদামপল্লী ভাস্করের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিনেতা আল্লু আর্জুনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অভিযোগে মাগুদামপল্লী বলেন, তার স্ত্রী রেবতী শ্বাস নিতে পারছিলেন না এবং নিচে পড়ে যান কারণ আর্জুনের নিরাপত্তা দল নায়কের জন্য ‘নিরাপত্তা বেষ্টনী’ তৈরি করতে ভিড়কে ধাক্কা দিয়েছিল।
অভিযোগপত্র থেকে নিজের নাম প্রত্যাহারের জন্য আল্লু আর্জুন তেলেঙ্গানা হাইকোর্টের আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত শুনানি হয়নি।
আল্লু অর্জুন কী বললেন?
মর্মান্তিক ওই ঘটনার পরদিন তেলেগু সুপারস্টার তার নীরবতা ভেঙ্গে বলেছিলেন যে তিনি সন্ধ্যা থিয়েটারে “মর্মান্তিক ঘটনার দ্বারা গভীরভাবে মর্মাহত”।
তিনি নিহত নারীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সম্ভাব্য সবরকম সহায়তা করার প্রতিশ্রুতিও দেন। এই সময় ওই নারীর আহত কিশোর বয়সী ছেলের চিকিৎসার জন্য তিনি ২৫ লাখ রুপি সহযোগিতার কথাও জানান।
ঘটনার প্রায় ১০ ঘণ্টা পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন অর্জুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার দেরি করে ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশ নিয়েও দারুণ সমালোচনার মুখে পড়েন।
৭ ডিসেম্বরে পুষ্পা টু-এর আরেকটি প্রদর্শনে অর্জুন আবারও দুঃখ প্রকাশ করে নিজের দেরিতে প্রতিক্রিয়া জানানোর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “এটি বুঝতে এবং ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে আমার কয়েক ঘণ্টা সময় লেগেছিল। আমি এটিকে মানসিকভাবে নিতে পারিনি। এতে আমার প্রায় ১০ ঘণ্টা লেগেছিল। খবরটি শুনে আমাদের সবার মাথা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল।”