Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

ফিফা নিষেধাজ্ঞা-জরিমানা নিয়ে টু শব্দটি হয়নি এজিএমে !

বাফুফের এজিএমে ফিফার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কেউ কোনও কথা বলেনি।
বাফুফের এজিএমে ফিফার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কেউ কোনও কথা বলেনি।
Picture of ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ভাল ফুটবল খেলে না। সেটা অনেকেই খেলে না। কিন্তু কখনও আর্থিক জালিয়াতির সিলমোহর ছিল না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের গায়ে। এটাও এক রকম স্বস্তির ছিল।

কিন্তু ২০২৩ সাল থেকে ফিফা সেই কলঙ্কের দাগও লাগিয়ে দিয়েছে। মাঠের ব্যর্থতার সঙ্গে চুরি-জালিয়াতি যোগ হয়ে বাফুফের মান-সম্মান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। অথচ এ নিয়ে বাফুফের সাধারণ সভায় টু শব্দটি উচ্চারিত হয়নি! কোনও আলোচনাই হয়নি এই বিষয়ে !   

আর্থিক জালিয়াতির কারণে বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে ২ বছর নিষিদ্ধ করে ফিফা। আরেকটি আর্থিক জালিয়াতিতে ফিফা কিছু দিন আগে তাকে আবারও শাস্তি দেয়। সব মিলিয়ে সোহাগকে দেওয়া হয় ৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা।

শুধু সম্পাদক নয়, বাফুফের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদীর ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ (প্রায় ১৩ লাখ টাকা) জরিমানা করে ফিফা। এছাড়া ফিফা নিষেধাজ্ঞা দেয় বাফুফের সাবেক চিফ ফাইন্যান্স অফিসার ও সাবেক অপারেশনস ম্যানেজার মিজানুর রহমানকে।

জালিয়াতি ও তহবিল অপব্যবহারের দায়ে ফিফা নিষিদ্ধ করেছে বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে।কিন্তু এ নিয়ে কোনও কথা হয়নি এজিএমে। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য এ এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হলেও বাফুফের বার্ষিক সাধারণ সভার প্রতিবেদনে এসব কিছুরই উল্লেখ নেই। এমনকি সভার আলোচ্য সূচিতেও রাখা হয়নি ফিফার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি।

বাফুফের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার ১১ পাতার যে প্রতিবেদন দেন সেখানে গত দেড় বছরে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন, ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের ফিরিস্তিসহ জাতীয় দিবসের নানা কর্মসূচি বিশেষভাবে উল্লেখ আছে। অথচ ফুটবল ফেডারেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আবু নাইম সোহাগকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা ও তদন্ত বিষয়ে একটি কথাও লেখা নেই।

নীলফামারী জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিত্ব করা কাউন্সিলর আরিফ হোসেন মুন বলেন, “আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে এসব কিছুই রাখেনি তারা। আলোচ্য বিষয় যেগুলো ছিল সেগুলোর মধ্যেই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে বলেছেন উনারা। কেউ যখন কথা বলার চেষ্টা করেছে তাদের থামিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

সাধারণত বার্ষিক সাধারণ সভায় ফুটবল সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া ও কাউন্সিলরদের পূর্ববর্তী ও ভবিষ্যতের কার্যক্রম সম্পর্কিত মতামত চাওয়ার বিষয়টা গুরুত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু এবারের এজিএমে এসবের কোনও বালাই ছিল না বলে জানান মুন, “আমরাও বিভিন্ন সংগঠন চালাই। সেখানে এজিএমে যে বিষয়টা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে সেটার ওপর আগে আলোচনা করি। সেটা পক্ষে বা বিপক্ষে হতে পারে। এরপর সেটার ব্যপারে সিদ্ধান্ত হবে। এখানে যেটা দেখলাম, আমাদের আলোচনার কোনও সুযোগ দেয়নি। সিদ্ধান্ত আপনি মানেন কি মানেন না সেটা হ্যাঁ অথবা না ভোটে ঠিক করেছে। এখানে সবাই যদি না-ও বলতো তাও সেটা পাস হয়ে যেত।”

বাফুফের এজিএমে কোনও কথা হয়নি ফিফার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে।

সাধারণ সভা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল মহিলা লিগের শীর্ষ ৪ ক্লাবকে কাউন্সিরশিপ দেওয়া। এর ভাল মন্দ দিক নিয়ে কোনও আলোচনাই হতে দেয়নি মঞ্চে বসা বাফুফের বড় কর্তারা।

সাধারণ সভা পরিচালনা করেছেন সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার। নতুন কাউন্সিলর করা ইস্যুতে কোনও কথাই বলতে দেননি তিনি। কন্ঠরোধের অভিযোগ তুলে নারী ফুটবল লিগের ক্লাব এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাউন্সিলর শাহাদাৎ হোসেন যুবায়ের বলেন, “আমাদের কথা বলার মতো সুযোগই দেয়নি। কাউন্সিলর বাড়ানোর সময় কয়েকজন পাস পাস করে চিৎকার করে উঠেছে। তারা উনাদের পছন্দের লোক। বেশিরভাগ জেলার কমিটি বাফুফের নিয়ন্ত্রণে হয়। তারা বাফুফের গুণগান ছাড়া তো কোনও কথা বলবে না। আমি অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেও মাইক পাইনি। আমাকে বলতে দেওয়া হয়নি।”

ফিফার শাস্তি পাওয়া সালাম মুর্শেদী এজিএমে দুঃখপ্রকাশও করেননি বলে খুব হতাশ মোস্তাক পাশা মিলন। মহাখালী একাদশের এই প্রতিনিধি বলেন, “বাফুফে যে এত দুর্নীতি করেছে সেটা নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হওয়া উচিত ছিল। সাধারণ সম্পাদকসহ বাফুফের কয়েকজনকে নিষিদ্ধ করেছে, সালাম মুর্শেদীকে জরিমানা করেছে, এসব নিয়ে কথা বলারই সুযোগ দিল না আমদের। সালাম মুর্শেদী অন্তত একবার দুঃখ প্রকাশ করতে পারতো।”

আরিফ হোসেন মুনের অভিযোগ, “আলোচ্য সূচিতে খসড়া বাজেটের আর্থিক প্রতিবেদনের অনুমোদন রাখা হয়। সেটা নিয়েও কথা বলতে সুযোগ দেয়নি। বাজেটের কথা বলতে গেলেই তো বাফুফের দুর্নীতি ও নিষেধাজ্ঞার বিষয়গুলো উঠে আসতো। ফিফা যে আপনাদের শাস্তি দিল এই কথাগুলো তো বলতে পারতাম। আসলে ওই ভয়েই কথা বলার কোনও সুযোগ দেয়নি আমাদের।”এরপর তিনি যোগ করেন “আমার ক্ষমতা আছে। তাই আমি যা ইচ্ছা তাই করবো, এই করেই ফুটবল ডুবছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত