Beta
মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৫

শীতের রোদহীন দিন মন-মেজাজ ও যৌনতায় কী প্রভাব ফেলে

শীতকালে কেন রোমান্টিক সিনেমা দেখে লোকে
ছবি: ইকমিউনিটি ডটকম
[publishpress_authors_box]

মৌসুম বদলের প্রভাব শুধু প্রকৃতিতেই পড়ে তা নয়, মানুষের আচরণ এবং সিদ্ধান্তও পাল্টে যায়। তাই প্রকৃতির মর্জি বদলের সঙ্গে জীবন যাপনে তাল মেলানোর কৌশল শিখে নিতে পারলে উপকারই হবে।

বাংলাদেশে পৌষ মাসের অর্ধেক পেরিয়েছে। সামনে মাঘ আসছে। অর্থাৎ শীত শেষ হয়নি, বরং শৈত্যপ্রবাহের কারণে আরও জাঁকিয়ে বসবে। মাঝেমধ্যেই সূর্য দেখা না দেয়াতে জানুয়ারি অনেকের জন্য রোদহীন এক মাস হয়ে উঠেছে।

পারস্পেকটিভস অন সাইকোলজিকাল সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, এরকম আবহাওয়া আবেগ এবং মস্তিষ্কে নানা রকম পরিবর্তন আনে। আর তাতে প্রভাবিত হয় মানুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা, বুদ্ধিমত্তা এবং সামাজিক তৎপরতা।

কানাডিয়ান রাজহাঁস অথবা কালো ভালুকের মতো প্রাণীদের ঋতু অনুসারে আচরণ বদলে ফেলার কথা জানা গেছে আগেই। কিন্তু মানব মনস্তত্ত্বের এই সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলো নিয়ে তত গভীর আলোচনা নেই।

গবেষকদের চোখে শীতের তীব্রতা মানুষের যেসব শারীবৃত্তীয় এবং মনস্তাত্ত্বিক আচরণে ছাপ ফেলে তা জানা গেলো বিবিসির প্রতিবেদনে।

মনোজগত

শীতের দিনে মন খানিক বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। একে বলে সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডার, সংক্ষেপে বলা হয় স্যাড। এই সময় টানা মন খারাপ থাকে। আবার অস্থিরতাও দেখা দিতে পারে। অনেকের বেলায় নৈরাশ্য জেঁকে বসে, সবকিছু অর্থহীন মনে হয়, স্পৃহা কমে আসে এবং ঘুম বেড়ে যায়।

এই বিষাদের আরেক নাম হচ্ছে উইন্টার ব্লুস

২০১০ সালের আগে, নিউ ইয়র্কের করনেল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ৮৪ দেশের ৫০ কোটি ৯০ লাখ টুইট নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখেন। দিনের বিভিন্ন সময় অনুসারে পোস্টে আবেগের তারতম্য দেখা যায়। দিন যত ছোট হতে থাকে, সবার পোস্টে ইতিবাচক শব্দের ব্যবহারও কমে আসে।

শীতকালে বিষণ্ন হওয়া এবং দুঃখবোধ করার অনেক রকম ব্যাখ্যা আছে।

কম আলো স্বাস্থ্যের জৈবিক ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদমের ছন্দপতন ঘটায়। ফলে আবেগ সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের স্নায়বিক রাসায়নিকগুলো নিয়ন্ত্রণ হারায়। এই তত্ত্বের উপর ভর করে এসেছে আলোর থেরাপি। এতে ল্যাম্প দিয়ে সূর্যের মতো আলোর পরিবেশ তৈরি করা হয়, তাতে দেহঘড়ির ছন্দ ফিরে আসে। যদিও ২০১৯ সালে প্রকাশিত কোক্রেন সিস্টেমেটিক রিভিউ বলছে, এই থেরাপির কার্যকারিতা আসলে সীমিত।

হেলথ সাইকোলজিস্ট কারি লেইবোউইজের এক গবেষণা বলছে, আমাদের মানসিকতার ধরনও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।

ইউনিভার্সিটি অব ট্রমসোতে জোয়ার ভিট্টেরসো এবং লেইবোউইজ মিলে নরওয়ের বিভিন্ন অঞ্চলের অংশগ্রহণকারীদের কাছে শীত নিয়ে তাদের মনোভাব জানতে চান।

‘শীত হল বছরের বিশেষ সুন্দর এক সময়’, ‘আমি শীতের ওম ভালোবাসি’, ‘শীতের নরম আলো ভালো লাগে’ – এমন বক্তব্যের সঙ্গে অংশগ্রহণকারীরা কী মাত্রায় একমত বা দ্বিমত পোষণ করে তা দেখা হয় এই জরিপে।

দেখা যায়, যারা দৃঢ়ভাবে একমত হয়েছিলেন তারা ঠান্ডা এবং অন্ধকারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন ভালোভাবেই। তাদের বেলায় শীতে সন্তুষ্টির মাত্রা বেশি দেখা গেছে এবং শীতের মধ্যে ইতিবাচক আবেগেও কমতি ছিল না।

লেইবোউইজের পরামর্শ হলো, শীতের ইতিবাচক দিকগুলো বেছে নিয়ে শীতকালীন বিষণ্নতা কাটিয়ে ওঠা যায়; যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শীতের একটি বিশেষ দিক।

যারা অস্থিরতায় ভুগছেন তারা অত্যধিক নেতিবাচক চিন্তা বা ক্যাটাস্ট্রফাইজিং স্তরে মনোযোগী হয়ে পড়েন। কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি এসব ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে ওঠে।

স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ

নেদারল্যান্ডসের রটারডাম শহরের এরাসমাস ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারে দুজন গবেষক ৪৫ বছর ও তার বেশি বয়সী ১০ হাজার অংশগ্রহণকারীদের উপর জরিপ করেন। দেখা যায়, শীতে যাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল তাদের শেখার আগ্রহ, স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ কম ছিল গ্রীষ্মের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের চেয়ে।

তবে মৌসুমের সঙ্গে এমন পরিবর্তনের পেছনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয় গবেষকদের কাছে।

তবে বিষণ্ন বোধ হলে কগনিটিভ আচরণে স্বতস্ফূর্ততা কমে আসে। শীতকালে ভিটামিন ডি কম পাওয়ার কারণেও স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সূর্যর আলোর সংস্পর্শে এলে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। খাদ্যাভ্যাস থেকে অনেক পুষ্টি পাওয়া গেলেও সূর্যর আলো হলো এই ভিটামিনের মূল উৎস। এখানে ঘাটতি হলে ডিমেনশিয়া বা কগনিটিভ স্তরে অবনতি হতে পারে।

সামাজিকতা এবং যৌনাকাঙক্ষা

পেঙ্গুইন এবং অন্য অনেক প্রাণির মতো মানুষ শরীরের তাপ ভাগ করে নিতে চায়। সোশাল থার্মোরেগুলেশন তত্ত্ব তাই বলে।

ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি গ্রেনোব্ল আলপসের একটি দল জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ঠান্ডা বা গরম পানীয় ধরে রেখে বিভিন্ন প্রশ্নের বিপরীতে তাদের চিন্তাভাবনা জানাতে বলেছিল।

দেখা যায়, যারা ঠান্ডা পানীয় ধরেছিলেন তারা গরম পানীয় ধরাদের তুলনায় কাছের প্রিয়জনদের কথা চিন্তা করছিলেন বেশি।

সিনেমা দেখার অভ্যাসেও শীতের প্রভাব আছে। শীতের সময় তাপমাত্রা কমলে মানুষের মধ্যে রোমান্টিক সিনেমা বেছে নেয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এমন সিনেমা শীত অনুভূতির মাঝে আমাদের উষ্ণতা ও স্নেহের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে।

পেনসিলভানিয়ার ভিলানোভা ইউনিভার্সিটি এবং নিউ জার্সির রাটগার্স ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে, গুগল ব্যবহারকারীরা শীতের মাঝামাঝি এবং গ্রীষ্মের শুরুতে পর্নোগ্রাফি খুঁজতে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে। এসময় ডেটিং ওয়েবসাইট খোঁজার হার বেড়ে যায়।

এসব নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে, তাহলে মানুষের মধ্যে জটিল আচরণের যৌক্তিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যাবে।

[বিবিসি এর প্রতিবেদন অবলম্বনে]

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত