চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত চার মাসে রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এ সময়ে রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল আদায় হয়েছে তার প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা বা ২৩ শতাংশ কম।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে যে রাজস্ব আহরণ হয়েছে তা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এক হাজার ৫৫ কোটি টাকা বা ১ শতাংশ কম।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশ রাজনৈতিক অস্থিরতার কবলে পড়ার কারণে রাজস্ব আদায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি আমদানি পণ্যে কর অব্যাহতির কারণে রাজস্ব আহরণ আরও নেতিবাচক হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে আসলে রাজস্ব আহরণ ইতিবাচক ধারায় চলে আসবে বলে আশা করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
এনবিআর এর প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এক লাখ এক হাজার ২৮১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল এক লাখ দুই হাজার ৩৩৬ কোটি।
অক্টোবর মাস পর্যন্ত এক লাখ ৩২ হাজার ১১৪ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ এক হাজার ২৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার মাসের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পিছিয়ে পড়েছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর পর্যন্ত কাস্টমস বা আমদানি খাত থেকে আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা। এই খাত থেকে আহরণের লক্ষ্য ছিল ৩৯ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই খাত থেকে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।
মূল্য সংযোজন কর (মুসক) বা ভ্যাট খাত থেকে চার মাসে আদায় হয়েছে ৩৬ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। এই খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে।
আয়কর খাত থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৩১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এই খাতেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৩ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনবিআরে এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আমদানি বাণিজ্যের পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবসায়। আবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমদানি পণ্যের ওপর দেওয়া হয়েছে বড় ধরনের করছাড়। এই দুই কারণেই মূলত রাজস্ব আদায় কমেছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা বেশি।
এর মধ্যে এনবিআর সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ৬১ হাজার কোটি টাকা।