Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

ভারতে নির্বাচন : উত্তর প্রদেশেই ক্ষমতার চাবি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যোগী আদিত্যনাথ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যোগী আদিত্যনাথ।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

লোকসভা নির্বাচনের ভোট চলছে ভারতে। কে হতে যাচ্ছেন দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী, এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। তবে এর চেয়েও বেশি আলোচনা চলছে দেশটির রাজ্য উত্তর প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে তা নিয়ে।

ফলে এবারের ভোটে দেশটির সবার নজর উত্তর প্রদেশের (ইউপি) দিকে। রাজ্যটির আয়তন প্রায় ব্রিটেনের সমান। কিন্তু এর জনসংখ্যা ব্রিটেনের চারগুণ। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায়ও ইউপিতে জনসংখ্যা বেশি। এই সংখ্যা প্রায় ২৫ কোটি ৭০ লাখ।

রাজ্যটি স্বাধীন হলে এটি জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ হতে পারত। ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইন্দোনেশিয়ার পরই হতো এর অবস্থান।

ভারতের লোকসভা নির্বাচন হচ্ছে সাত দফায়। আর এই সাত দফাতেই যে তিন রাজ্যে ভোট হয়েছে, তার অন্যতম উত্তর প্রদেশ।

উত্তর প্রদেশ থেকে ৫৪৩ সদস্যের নিম্নকক্ষে (লোকসভা) ৮০ জন সদস্য নির্বাচন করে। আর এই কারণেই বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পুনরায় ক্ষমতায় আরোহনের চাবি রয়েছে উত্তর প্রদেশে। দেশটির রাজনীতিতে একটি কথা বেশ চালু আছে, তা হলো- ইউপি যার ভারত তার।

রাজ্যটির রাজধানী লখনউয়ের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শরৎ প্রধান বলেন, “এটি বলা হয়ে থাকে যে ‘ইউপি হয়ে দিল্লি যেতে হয়’। যে দল এই রাজ্যে ভালো করে, তারাই সাধারণত ভারত শাসন করে।

“ভারতের সাবেক আট প্রধানমন্ত্রী এই রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০১৪ সালে যখন পশ্চিমের রাজ্য গুজরাটের বাসিন্দা মোদী একজন সাংসদ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছিলেন, তখনও তিনি ইউপিকেই বেছে নিয়েছিলেন।”

বারাণসীতে নির্বাচনী প্রচারে নরেন্দ্র মোদী।

২০১৯ সালে বারানসী থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন মোদী। এবারও তিনি ওই আসনটি ধরে রাখতে চাইছেন।

নরেন্দ্র মোদী এখন ভোটারদের তার দলকে ভোট দিতে রাজি করাতে রাজ্যজুড়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি অনেক জনসভা করছেন এবং মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। তার লক্ষ্য হলো- ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য ৩৭০টি আসন নিশ্চিত করা। যদিও এই সংখ্যা জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যার চেয়ে বেশি।

বিজেপি ইউপিতে ২০১৪ সালে ৭১ ও ২০১৯ সালে ৬২টি আসন পায়। তবে রাজ্যটিতে এবার বিজেপির নেতারা ৭০টির বেশি আসন পাওয়ার প্রত্যাশা করছে।

বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা গৌরব কাপুরের মতে, “হিসাবটা সোজা- এখানে ৭০টি আসন জেতা দলের সরকার গঠনে আর লাগে ২০২টি আসন।”

কিছুদিন আগে মোদী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন। তখন তাদের স্বাগত জানাতে হাজার হাজার লোক জড়ো হয়েছিল।

বিজেপির গেরুয়া রং করা ও গাঁদা ফুলে সজ্জিত একটি ট্রাক মোদী ও যোগী আদিত্যনাথকে বহন করছিল। এসময় বিজেপির সমর্থকরা গেরুয়া পোশাক পরে স্লোগান দিচ্ছিল।

ভারতের নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্যের ওপর নজর শুধু বিজেপিরই নেই, কংগ্রেসেরও রয়েছে। প্রায় চার দশক ধরে কংগ্রেস এই রাজ্যে শাসন করেছে। কিন্তু ১৯৯১ সালে স্থানীয় দলগুলোর কাছে হেরে যায়। এবার কংগ্রেস আঞ্চলিক সমাজবাদী পার্টির (এসপি) সঙ্গে জোট বেঁধে এই রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরতে চায়। তারা আশা করছে ৭৯টি আসন জিততে পারবে।

সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের সঙ্গে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।

তবে বিজেপি-কংগ্রেস নিজেদের জেতার ব্যাপারে যে দাবিই করুক না কেন, ৪ জুন ভোটের গণনাই সব বলে দেবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজ্যে গত ১০ বছরে সব নির্বাচনে জিতেছে বিজেপি। মোদীর রোডশোতে যেভাবে মানুষের ঢল দেখা গেছে, তাতে এবারও রাজ্যটিতে বিজেপিই আসতে পারে।

গত দশ বছরে বারাণসী শহরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তন সম্পর্কে কথা বলতে গেলে, শহরের বাসিন্দাদের মুখে ফুটে ওঠে আনন্দের হাসি। নতুন রাস্তাঘাট, কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের প্রসার ও গঙ্গা নদীর তীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি- এই সবকিছুই তাদের গর্বের বিষয়।

এতো উন্নয়ন সত্ত্বেও উত্তর প্রদেশ কিন্তু এখনও ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য। রাজ্যের ২৩ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনও দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে।

নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতায়ও রাজ্যটি এগিয়ে। বছরে নারী নির্যাতনের দশ হাজারের বেশি ঘটনা রেকর্ড করা হয় রাজ্যটিতে। আর এসব সহিংসতার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীরা যুক্ত থাকে।

এসব ইস্যুকে এবারের নির্বাচনে সামনে নিয়ে আসছে বিজেপি বিরোধীরা। মোদীবিরোধী প্রচারে তারা দুর্নীতির পাশাপাশি রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা ও অপরাধের হারকে সামনে এনেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- বিরোধীদের প্রচারেও কিন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নিচ্ছে।

বকেয়া বেতনের দাবিতে ইউপিতে বিক্ষোভরত শিক্ষকদের একাংশ।

বিজেপি বলছে, তারা রাজ্যের উন্নয়নে একাধিক প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু কংগ্রেস নেতা গৌরব কাপুর মনে করেন, উত্তর প্রদেশে নতুন শিল্পক্ষেত্র তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি সরকার। ফলে সেখানে বেকারত্ব কমেনি।

তিনি আরও বলেন, “মোদীর জন্য মন্দির হলো নতুন শিল্পক্ষেত্র। কোভিডের পর রাজ্যে শুধু হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বেড়েছে ধর্মীয় পর্যটনের কারণে। কিন্তু তরুণরা চাকরি চায়।”

অবশ্য বিজেপির নেতা অশ্বিনী শাহী রাজ্যের সব সমস্যার জন্য বিরোধীদের দায়ী করেন। তার মতে, “২০১৭ সালে ইউপিতে বিজেপি জেতার আগে রাজ্যটি ছিল দরিদ্র। শিক্ষার নিম্ন হারের পাশাপাশি ছিল বেকারত্বের উচ্চহার। মানুষের জীবনমান উন্নত করতে সময় লাগে। ২০২০ সালের মধ্যে রাজ্যের ৯০ শতাংশ মানুষকে আমরা দারিদ্রের বাইরে আনতে পারব।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত